বিচারপতির বিচার : শীর্ষ এজলাস থেকে কাঠগড়ায়
সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার
একজন প্রধান বিচারপতি শুধু একটি আদালতের নন, তিনি একটি রাষ্ট্রের ন্যায়ের প্রতীক। কিন্তু সেই বিচারপতির রায়ই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যদি তার সিদ্ধান্তই বিভাজন তৈরি করে রাষ্ট্রের ভেতরে, যদি তিনি নিজেই হয়ে ওঠেন রাজনৈতিক নাটকের চরিত্র—তাহলে বিচারালয়ের মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? এ প্রশ্ন আজ ঘুরেফিরে আসছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের গ্রেফতারের পরে। এক সময় যিনি বসতেন সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ এজলাসে, আজ তিনি আলোচনা, সমালোচনা, এমনকি নিন্দার কেন্দ্রবিন্দুতে। গ্রেফতারবরণ করে তাকে দাঁড়াতে হয়েছে কাঠগড়ায়। এটা এক বিরল ঘটনা। বাংলাদেশে আগে কখনো কোনো প্রধান বিচারপতি গ্রেফতার হননি। প্রশ্ন উঠছে, খায়রুল হকের আগে-পরে কোনো প্রধান বিচারপতি কি কোনো বিতর্কিত রায় দেননি?
বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ একাধিক রাজনৈতিক শক্তি খায়রুল হকের গ্রেফতারকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এটিকে দেরিতে হলেও বিচারিক প্রক্রিয়ার বিজয় হিসেবে দেখছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছেন,’ আর জামায়াত আমির শফিকুর রহমান লিখেছেন—‘তিনি গুম-খুন-লুণ্ঠনের লাইসেন্স দিয়েছেন।’ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ‘তার কারণে হাজারো মায়ের কোল খালি হয়েছে।’
অন্যদিকে, নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন—খায়রুল হকের গ্রেফতার প্রক্রিয়া কতটা ন্যায়সংগত, আর কতটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ? তাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো কি ঠিক কাজ হয়েছে? ৮০ বছর বয়সী একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি কাউকে হত্যার সঙ্গে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে জড়িত থাকা কি বিশ্বাসযোগ্য? তার রায় যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তাহলে তার গ্রেফতার প্রক্রিয়াও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের বাইরে নয়।
তিনি অপরাধী কি না—সেটা আদালত ঠিক করুক। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিচারপতি হওয়ার মর্যাদা যেমন অতি উচ্চস্থানে, তার দায়ও তেমনই সাংঘাতিক। কোনো বিচারপতি যদি ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হন, তাহলে তা রাষ্ট্র ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আর সেই ক্ষতি থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতের খায়রুল হকেরা কেবল ক্ষমতার ক্রীড়ানক হয়ে থাকবেন—ন্যায়বিচারের প্রতীক নয়।
খায়রুল হকের রায়, ভূমিকা ও পরিণতি প্রশ্ন তুলেছে—বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচারপতিদের দায়বদ্ধতা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রভাব নিয়ে। একজন প্রধান বিচারপতি যদি ষড়যন্ত্রে জড়িত হন, তবে সে দেশের বিচারব্যবস্থা কতটা বিশ্বাসযোগ্য থাকে? আবার, যদি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে আদালত ব্যবহৃত হয়, তবে গণতন্ত্র কতটা সুরক্ষিত থাকে?
এই দুই প্রশ্নের উত্তরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ন্যায়বিচার ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অনেক রায় রয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রবাহের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়, যা এসেছিল প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ থেকে—তা ছিল এক যুগান্তকারী এবং একই সঙ্গে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। ২০১০ সালের ১০ মে, ১৩তম সংশোধনী বাতিলের রায় প্রদান করে আদালত জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এটি ভবিষ্যতে আর কার্যকর হবে না। এই রায়ের পরপরই রাজনীতির মাঠে শুরু হয় উত্তেজনা, দ্বিধা এবং সন্দেহ। উচ্চ আদালত এমন রায় না দিলে শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা হয়তো সহজ হতো না।
একটি সরকার ব্যবস্থার বিপরীতে রায় দেওয়া আদালতের এখতিয়ার, এ বিষয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু রায় প্রদানের পদ্ধতি, সময়চয়ন এবং ভাষা—এসবই হয়ে উঠেছিল প্রশ্নবিদ্ধ। খায়রুল হক নিজেই রায় লেখেন অবসরের পর, যেটি আইনি রীতি ও নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিপজ্জনক এক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তিনি মাত্র নয় মাস ছিলেন প্রধান বিচারপতি। অবসরের পরে সম্পূর্ণ রায় লিখে তা প্রকাশ করেন। এই রায়ের একটি অংশে বলা হয়, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে এবং এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিকৃতি।’ এই বক্তব্য শুধু একটি আইনগত ব্যাখ্যা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনও বটে।
এখানেই শুরু হয় বিতর্ক। সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পরবর্তী দুটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি—সব দলের পক্ষেই এটি একসময় ছিল গ্রহণযোগ্য। এমনকি ২০০৭ সালের ১/১১-এর পটপরিবর্তনের পরেও যখন একটি অনির্বাচিত সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো আবারও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়– এটা তখনই মেনে নেওয়া সম্ভব, যখন রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত ও অবিতর্কিত রাখা যায় না। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত হয়নি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল আন্দোলনের মুখেই। এতে আওয়ামী লীগেরই বড় ভূমিকা ছিল। আবার আদালতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলও করা হয় আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় থাকতেই। ২০১০ সালের বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে বিজয় নিশ্চিত করার পরিকল্পনা আঁটতে শুরু করে বলে ধারণা করা হয়। ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়। এই পরিবর্তন একপক্ষের জন্য ছিল সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করলেও অপরপক্ষের জন্য নিঃসন্দেহে প্রতিকূলতা তৈরি করেছিল। রাজনীতিতে হয়েছিল অবিশ্বাসের গোড়াপত্তন।
সমস্যা শুধু রাজনৈতিক প্রভাবেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রশ্ন ওঠে আদালতের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়েও। অনেকেই অভিযোগ করেন, খায়রুল হকের রায় মূলত রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তির বিনিময়ে দেওয়া হয়। অবসরের পরে তিনি ‘বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান’ পদে আসীন হন, যেটি সরকারের অধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। প্রশ্ন ওঠে—এটি কি একটি পুরস্কার ছিল?
বিচারপতির অবসর-পরবর্তী নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সাধারণ নীতি রয়েছে—তিনি যেন এমন কোনো সরকারি পদে না আসীন হন, যাতে তার পূর্ববর্তী রায়ের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এই নীতির লঙ্ঘন হলে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে এই নীতির চরম লঙ্ঘন ঘটেছে খায়রুল হকের ক্ষেত্রে।
খায়রুল হক শুধু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেননি; তিনি একটি বৈধ রাজনৈতিক ঐকমত্যকেও অস্বীকার করার ধারা করেছেন। সংবিধান থেকে এ ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার ফলে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা হয়ে পড়ে কার্যত দলীয় সরকারের অধীন। নির্বাচন কমিশন যতই স্বাধীন হোক, যতই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ গড়ার আশ্বাস দেওয়া হোক—দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা আজও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। কোনো দলীয় সরকারই সেটা করতে পারেনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবসান মানে শুধু একটি সাংবিধানিক ধারার পরিসমাপ্তি নয়; এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শুরু হয় অনাস্থা, সংঘাত এবং অস্থিরতার এক নতুন যুগ। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে উঠেছে ব্যাপক প্রশ্ন। ২০২৪ সালের নির্বাচন কার্যত একপক্ষীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যেটি গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উল্লেখ করেছে।
এসব ঘটনায় প্রেক্ষাপট হিসেবে বারবার উঠে আসে ২০১০ সালের রায়। খায়রুল হক সেই রায়ের মাধ্যমে ইতিহাসে নিজের নাম চিহ্নিত করেছেন—কিন্তু গৌরবের কারণে নয়, বরং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। এখন প্রশ্ন উঠছে—তার সিদ্ধান্ত কি আইনগত ছিল, নাকি রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হয়েছিল?
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগও উঠেছে। গণমাধ্যমে এসেছে, তার স্ত্রী এবং সন্তানের নামে অর্জিত সম্পদের উৎস যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিষয় স্পষ্ট: তিনি এখন আর বিচারপতির আসনে নেই, বরং নাগরিক সমাজের আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন।
বিচারব্যবস্থা জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। যদি সেই বিচারব্যবস্থার শীর্ষ ব্যক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হন, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এ প্রশ্ন শুধু খায়রুল হকের জন্য নয়, পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য এক কঠিন আত্মজিজ্ঞাসা। বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবহার নতুন কিছু নয়। ১৯৭৫-পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত ক্ষমতার প্রয়োজনে আদালতের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার অভিযোগ বারবার উঠেছে। কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হকের সিদ্ধান্ত পরিণতির দিক থেকে সবচেয়ে গভীর। কারণ, এটি শুধু একটি আইনগত রায় নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ব্যাকরণ নির্মাণ করেছে। আজকের বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, বিরোধীদলের রাজনৈতিক পরিসর, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—সব কিছুর মূলে রয়েছে এ রায়ের ছায়া।
আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, যেখানে বিচারালয় হবে আলো এবং বিবেকের প্রতীক, যেখানে বিচারক হবেন সত্য ও ন্যায়ের ধারক। সেখানে কোনো বিচারপতির রায় যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তা শুধু রাজনৈতিক নয়, রাষ্ট্রনৈতিক বিপর্যয়ও ডেকে আনে।
এখন সময় এসেছে বিচারব্যবস্থা ও সংবিধানকে রাজনৈতিক রক্ষাকবচ নয়, জনগণের মৌলিক অধিকার ও সম্মানের ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার। খায়রুল হকের রায়ের পুনর্মূল্যায়ন দরকার—আইনগত, রাজনৈতিক এবং নৈতিক—তিনটি দিক থেকেই। কারণ, ইতিহাস ক্ষমা করে না। বিচারপতির আসন একটি সম্মান, আর সম্মান অর্জনের জন্য চাই দায়বদ্ধতা।
যে মানুষ একদিন শীর্ষ এজলাসে বসে ছিলেন, আজ তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। ন্যায়ের নামে যেন আর কখনো অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা না হয়। খায়রুল হকের গল্প শুধু একজন বিচারপতির উত্থান-পতনের কাহিনি নয়, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক জ্বলন্ত প্রমাণপত্র। তিনি অপরাধী কি না—সেটা আদালত ঠিক করুক। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিচারপতি হওয়ার মর্যাদা যেমন অতি উচ্চস্থানে, তার দায়ও তেমনই সাংঘাতিক। কোনো বিচারপতি যদি ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হন, তাহলে তা রাষ্ট্র ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আর সেই ক্ষতি থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতের খায়রুল হকেরা কেবল ক্ষমতার ক্রীড়ানক হয়ে থাকবেন—ন্যায়বিচারের প্রতীক নয়।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট।
এইচআর/এমএফএ/এএসএম