ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

গুলতেকিন যে ভুলগুলো করেছিলেন

শান্তা মারিয়া | প্রকাশিত: ০৭:২৩ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

গুলতেকিন খানকে আমি সবসময়ই পছন্দ করি। যখন তিনি হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ছিলেন তখনও প্রচারবিমুখ ছিলেন। তার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট দেখে যারা তাকে অ্যাটেনশন সিকার বলছেন আমি তাদের সঙ্গে মোটেও একমত নই। অ্যাটেনশন সিকার হলে তিনি সেই ডিভোর্সের সময়ই প্রচুর প্রচার নিতে পারতেন। কিন্তু সেটা করেননি। তাহলে কেন তিনি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পর মাঝে মধ্যেই পোস্ট দিচ্ছেন।

আমার মনে হয়, এর কারণ হলো তিনি এখন তার নিজের ভুলগুলো দেখতে পাচ্ছেন এবং অন্য নারীরা যেন এই ভুলগুলো না করেন সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই এই কথাগুলো বলছেন।

আসুন দেখে নিই গুলতেকিন কি কি ভুল করেছিলেন। সবচেয়ে প্রথমে যে ভুলটি করেছিলেন সেটি হলো নিজের চেয়ে বয়সে অনেক বড় এমন এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন, যার লেখায় তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি তখন মাত্র নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। প্রথমত দাম্পত্য পীর-মুরিদ বা গুণী-ভক্তের সম্পর্ক নয়। দূর থেকে যাকে অসম্ভব ভালো লাগে তার সঙ্গে জীবন কাটাতে গেলে দেবপ্রতিমার মহিমা তো নষ্ট হয়ই, খড় মাটিও প্রচুর পরিমাণে চোখে পড়ে ভক্তি উধাও হয়ে যায়। প্রিয় লেখক, প্রিয় অভিনয়শিল্পী, প্রিয় ক্রীড়াবিদ এমন কাউকেই শুধু ভক্তির প্রাবল্য থেকে প্রেমে পড়ে বিয়ে করা ঠিক নয়। বিশেষ করে সে লোক যদি বয়সে অনেক বড় হয়। বয়সে অনেক বড় একজন ব্যক্তি (তদুপরি তারকা) অনেক ক্ষেত্রেই সঙ্গীর ওপর মাতব্বরি করে। হুমায়ূনও তাই করতেন। দাম্পত্য সম্পর্ক হওয়া উচিত সমানে সমানে, বন্ধুর মতো, সহযোদ্ধার মতো।

দ্বিতীয় ভুলটি হলো তার কথার প্যাঁচে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া। হোটেল গ্রেভার ইন অনেক আগেই পড়েছি। তখনই আমার মনে হয়েছে লোকটি অত্যন্ত নার্সিসাস। যেভাবে তিনি স্ত্রীর এইচএসসি পরীক্ষা বানচাল করার উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে তাকে আমেরিকা নিয়ে আসলেন সেটা খুবই স্বার্থপরতার উদাহরণ। দ্বিতীয় কন্যা শীলার জন্মের বিবরণও লেখক নিজেই দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্ট বর্ণনা আছে, কীভাবে প্রসববেদনা ওঠার পরও স্ত্রীকে তিনি চা বানানোর হুকুম দেন। প্রসব বেদনা উঠেছে ভোররাতে (বা মাঝরাতে) আর তিনি তামাশা করছেন তার নিজের আরামের ঘুম মাটি হওয়া নিয়ে। যেন চাইলেই গুলতেকিন স্বামীর সুবিধাজনক সময়ে ব্যথাটি ওঠাতে পারতেন।

ওখানেই আরও বর্ণনা আছে তিনি প্রসব বেদনায় গুলতেকিনকে কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে দেখেছেন। এটা দেখার পরও পুত্রসন্তানের আশায় (সম্ভবত) আরও তিনটি সন্তানের জন্ম দিতে হয় কেন তার স্ত্রীকে? স্ত্রীর প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতি ও মমতা থাকলে বর্তমান কালে (যখন জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সুলভ) একজন শিক্ষিত ভদ্রলোকের এতগুলো সন্তান হয় নাকি? গুলতেকিনের ভুল হলো তিনি স্বামীর খায়েশে বাধা দেননি কেন?

এবারের পোস্টে গুলতেকিন যে ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন সেটিও শিক্ষণীয়। এক কাপড়ে ঠান্ডার মধ্যে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরও তিনি ওই লোকের সংসার আরও এতগুলো বছর কীভাবে করে গেলেন? এত প্রেম আসে কোথা থেকে? এখানে প্রেম-পাগলী নারীদের জন্য চরম শিক্ষণীয় হলো যে ব্যক্তি একবার তোমার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে সে বারে বারে করতেই থাকবে। ‘সে রাগের মাথায় করেছে, আসলে আমাকে অনেক ভালোবাসে’ এসব ফালতু ধারণা নারীরা (এবং পুরুষরাও) ঝেড়ে ফেলুন প্লিজ। মনে রাখবেন মানুষ যদি বর্জ্য ত্যাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে রাগও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। রাগের মাথায় অমানবিক আচরণ করেছে আসলে মানুষটি ভালো এটা একটা খোঁড়া যুক্তি।

মোট কথা নারী পুরুষ কারওই নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে বিয়ে করা উচিত নয়। এবং জীবনসঙ্গীর অমানবিক আচরণ সহ্য করে ঘর টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তিনি ঠিকই বলেছেন, কোনো মেয়ে যেন তার মতো ভুল না করে। আমি বলতে চাই, নারী পুরুষ কেউই যেন তার মতো ভুল না করে।

এটাকে বলা হয় নির্যাতনের চক্র। যারা এটা করে তারা এমন সুকৌশলে পার্টনারের অনুভূতি ম্যানিপুলেট করে যে অনেক সময় পার্টনার মনে করে আমারই দোষ। আমি এটা না করলে সে এত রাগ করতো না। এরা আবার রাগের পরে মাঝে মাঝে এমন কোমল কথাবার্তা বলে, ক্ষমা চায় যে, পার্টনার মনে করে সে আমাকে খুব ভালোবাসে। সে ওই রিলেশনশিপ ছাড়তেও পারে না।

গুলতেকিনের আরও অনেক লেখা আছে। সেগুলো নিয়ে বলতে গেলে লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে। সংক্ষেপে এটুকু বলি, যখন বুঝবেন, আপনার উন্নতি, আপনার ভালোমন্দ, অনুভূতি ও চাহিদার প্রতি আপনার সঙ্গীর (নারী বা পুরুষ) কোনো খেয়াল নেই, তিনি উদাসীন, তখন তাকে ত্যাগ করুন।

আর যদি মনে করেন নাহ, এসব সত্ত্বেও আমি তার সঙ্গেই থাকবো তাহলে অযথা আর প্যানপ্যান করেন না। যখন তিনি ত্যাগ করবেন তখন শাবানা অভিনীত চরিত্রগুলোর মতো স্বামীর সুখই আমার সুখ একথা ভেবে সেলাই কল নিয়ে বসে যান।

আরেকটি কথা, গুলতেকিন নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন বলে, প্রভাবশালী পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও হয়তো মুখ বুজে সহ্য করেছেন। এটা চরম ভুল। প্রেমিক যখন স্বামী হওয়ার পর (কিংবা প্রেমিকা স্ত্রী হওয়ার পর) নির্যাতক রূপে আবির্ভূত হয়, তখন মুখ বুজে থাকবেন না। নিজের ভুল স্বীকার করে পরিবারের সাহায্য নিন।

মোট কথা নারী পুরুষ কারওই নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে বিয়ে করা উচিত নয়। এবং জীবনসঙ্গীর অমানবিক আচরণ সহ্য করে ঘর টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তিনি ঠিকই বলেছেন, কোনো মেয়ে যেন তার মতো ভুল না করে। আমি বলতে চাই, নারী পুরুষ কেউই যেন তার মতো ভুল না করে।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষক।

এইচআর/জেআইএম