মৎস্য ও পোল্ট্রি
খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ জটিলতা নিরসন জরুরি
আমাদের বিপুলসংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন আমিষের ঘাটতি তথা মাছ-মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে অনেক মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার। বিশেষ করে মুরগি ও হাঁস উৎপাদনের এ খামারগুলোর অধিকাংশের উদ্যোক্তাও প্রত্যন্ত এলাকার স্বল্পশিক্ষিত উদ্যোগী মানুষ। তারা নিজেরাই তৈরি করেছে তাদের কর্মসংস্থান। আমরা সবাই জানি, আমাদের নতুন প্রজন্মের খাদ্য চাহিদার শীর্ষে বর্তমানে অবস্থিত মুরগির মাংস। আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য এটি অত্যাবশ্যক। পছন্দের খাবার মুরগির মাংসকে আরো পছন্দনীয় করে তোলার জন্য গড়ে উঠেছে অনেক ফাস্টফুডের দোকান। সেখানেও তৈরি হয়েছে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান।
মৎস্য ও পোল্ট্রি উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। ব্যক্তি উদ্যোক্তা তৈরিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন মৎস্য ও পোল্ট্রি উৎপাদন বৃদ্ধিতে। এর পাশাপাশি ভূমিকা রেখেছে বিভিন্ন এনজিও। মাছের ও হাঁস-মুরগির চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে উৎপাদন, বৃদ্ধি পেয়েছে মাছের ও হাঁস-মুরগির খাবার ও ঔষধের চাহিদা। গড়ে উঠেছে তাদের খাদ্য ও ঔষধ উৎপাদনের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান; যার অধিকাংশই ক্ষুদ্রশিল্প। বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩০০ টি।
সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের নির্ধারিত ফি দিয়ে সার্টিফিকেট/ অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে এ সকল প্রতিষ্ঠান। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরিনারি ও অ্যাকুয়াতে ডিগ্রি অর্জনকারী অনেক কর্মকর্তা এ সকল কোম্পানিতে নিয়োজিত। এদের কারখানায় পরীক্ষাগার ও পরীক্ষক রয়েছেন এবং উৎপাদিত খাদ্য বিএসটিআই’র মানের কাছাকাছি রয়েছে বলে তাদের দাবি। এ দাবির শতভাগ সঠিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সারাদেশের প্রতিটি থানা/উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তাদের লাইভ স্টক অফিসার রয়েছে। তারা মূলত সুস্থ-সবল গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিয়োজিত। পোল্ট্রিফিডে ও ফিসফিডে কোনো ভেজাল থাকলে সেটিও চিহ্নিত করার এবং প্রয়োজনীয় (সহনীয় মাত্রায়) সরকারি ফি আদায় করার বর্ধিত সক্ষমতা অর্জনের যোগ্যতা তাদের রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের লোকবল বৃদ্ধি, আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পরীক্ষাগারের সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি করতে হবে।
অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব বিধায় দেশের আনাচে-কানাচে অনুমোদনহীন শতাধিক উৎপাদনকারী থাকার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না। বাস্তবে যদি তেমন প্রতিষ্ঠান থেকে থাকে তো সেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা আবশ্যক। মোটকথা মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী কোনো প্রতিষ্ঠান খাবার উৎপাদনে ট্রেনারি বর্জ্য ও বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর উপাদান ব্যবহার করে না, করবে না এবং তাদের উৎপাদিত খাদ্যের মান সম্পূর্ণ সঠিক আছে ও থাকবে তা শতভাগ নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত দায়িত্ব।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন : খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সে খাদ্য নিরাপদ হওয়াও প্রয়োজন। খামারে উৎপাদিত মাছ ও হাঁস-মুরগির সুস্থতার উপর আমাদের সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্যই সবার প্রিয় খাদ্য মাছ ও হাঁস-মুরগির সুস্থতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। আবার মাছ ও হাঁস-মুরগির সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের খাবার ও ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যক। নির্ধারিত মান নিশ্চিত করে মাছ ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন করলে রোগ বালাই ও দূষণ রোধ হবে।
মাছ, মাংস ও ডিম নিরাপদ হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের মান নিয়ন্ত্রণ করবে কারা? প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নাকি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন তথা বিএসটিআই? এক্ষেত্রে কাদের সক্ষমতা বেশি তাও বিবেচ্য। শুরু থেকে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিষয়টি দেখভাল করে আসলেও গত ২০১৮ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসটিআই বিষয়টি দেখভাল করার উদ্যোগ নেয়।
পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্যসহ ২৮টি পণ্যের বিক্রি, বিতরণ ও বাণিজ্যিক প্রচারণার আগে মান নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারা মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যমান নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কারখানায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর পাশাপাশি মোটা অংকের ফি প্রদান করে তাদের নিকট থেকে সার্টিফিকেশন মার্কস তথা সিএম সার্টিফিকেট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। দ্বৈত অধীনতায় পড়ে যায় মৎস্য ও পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিএসটিআই তাদের সিএম সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অধীনে যেতে এবং মোটা অংকের টাকা দিয়ে সিএম সার্টিফিকেট নিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। অতিরিক্ত চাপে পড়ে সিএম সনদ নিতে বাধ্য হয় হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি। দ্বৈত অধীনতার কারণে এবং অতিরিক্ত ফি দাবি করার কারণে অসন্তোষ তৈরি হয় কোম্পানির মালিকদের মধ্যে। দেখা দেয় হয়রানি ও ফিডের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ফিডের মূল্য বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই এর বিরূপ প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের মূল্য তালিকায়।
এমতাবস্থায় গত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তারের সভাপতিত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ও বিএসটিআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ইতোমধ্যে মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে অধিকাংশ নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত পিপিএম ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাই ২০১৮ সালে ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।’
পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘প্রতিটি উৎপাদন ইউনিটের সিএম সার্টিফিকেশনের জন্য বিএসটিআইকে নির্ধারিত হারে মুসক, মার্কিং ফি ও টেস্টিং ফি প্রদানের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে এ সেক্টরে বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়েছে। পোল্ট্রি সেক্টরকে আরো বিকশিত করার জন্য এ বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি প্রদান বিশেষ প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ ফিড ছাড়াও প্রিমিক্স ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট উৎপাদন করে থাকে। এ সকল খাদ্য প্রাণীর পুষ্টির চাহিদার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়; যা কেবল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবল (DVM/AH) দ্বারা নিশ্চিত করা সম্ভব। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক মানের মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাব থাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মানসনদ প্রদান করতে পারে। তাছাড়া ফিট রপ্তানিতেও বিএসটিআই এর মানসনদের প্রয়োজন হয় না।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০ এর ধারা (৩) এ মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে ধারা ১০ অনুযায়ী পশুখাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের আদর্শমাত্রা নির্ধারণ এবং ধারা ১১ এ পশুখাদ্যের মান নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীনে ঢাকা, সাভার, খুলনা ও চট্টগ্রামে পাঁচটি বৃহৎ কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি রয়েছে। মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য বিশেষ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এ খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে বিএসটিআই এর মানসনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই। সরকারের প্রতিটি সংস্থা নিজস্ব আইন, বিধিমালা ও নীতিমালা দিয়ে পরিচালিত হয়। বিএসটিআই যেমন মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, ঠিক তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ল্যাবরেটরি গুলোকে এগ্রিডিটেড সনদ প্রদান করেছে। সে ক্ষেত্রে তাদের আওতাধীন ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেন বিএসটিআই থেকে সনদ নিতে হবে’?
সভাপতি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গুণগত মানের সাথে আপোস করবে না। তবে খামারি উৎপাদনকারীকে অতিরিক্ত খরচ, সময় বা দ্বৈত তদারকির বহির্ভূত রাখা সমীচীন হবে। একই পণ্যের মান-নিয়ন্ত্রণের দুটি সরকারি সংস্থার তদারকি মুক্ত ও সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদানে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। Thrust sector হিসেবে দেশীয় ফিড ইন্ডাস্ট্রিকে বিকশিত হতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।’
আলোচনা শেষে পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্যের বিএসটিআই সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি প্রদানের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিল করতে বিলম্ব হওয়ায় বিএসটিআই ফিড উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে মোটা অংকের ফি প্রদান করে তাদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। তাতে ফিড উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর বিড়ম্বনা আরো বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি অবশ্যই শিল্প বিকাশের অন্তরায়।
একটি বিষয় পরিষ্কার প্রতিমান হচ্ছে যে, পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উভয় মন্ত্রণালয়ই দেখভাল বা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এখানে অতি আগ্রহে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ না হোক। আশা করি, উভয়ের উদ্দেশ্যই মহৎ। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠানকে একইসঙ্গে এ দায়িত্ব দেওয়া হলে জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
যদি পোল্ট্রি ও মৎস্য সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে রেখে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসটিআইকে এদের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তো চরম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে। কেননা, পোল্ট্রি ও মৎস্য রোগাক্রান্ত হলে, বৃদ্ধি ব্যাহত হলে, খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা অন্য কোনো সমস্যা হলে পরস্পরকে দোষারোপ করা হবে। এক দপ্তর বলবে খাদ্যের মান সঠিক ছিল না, অন্য দপ্তর বলবে চিকিৎসা ও পরিচর্যা সঠিক ছিল না। তাছাড়া দুই পক্ষকে মেইনটেইন বা সন্তুষ্ট করতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে দ্রুত বর্ধমান অত্যন্ত সম্ভাবনাময় গুরুত্বপূর্ণ পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্প।
বাস্তবে পোল্ট্রি ও মৎস্য ফিড শিল্প কারখানা সরাসরি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করে না। তারা মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার উৎপাদন করে। তাদের উৎপাদিত খাদ্যমানের উপর মাছ ও হাঁস-মুরগির সুস্থতা অনেকাংশের নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিরাপদ মাছ-মাংস ও ডিম পাওয়ার জন্য পোল্ট্রিফিড ও ফিশফিড নিরাপদ থাকা আবশ্যক। প্রশ্ন হচ্ছে, নিরাপদ পোল্ট্রিফিড ও ফিসফিড এবং ঔষধ ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে মানুষের জন্য নিরাপদ মাছ-মাংস ও ডিম সরবরাহের তদারকি কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা উচিত? বিএসটিআই অনুমোদিত হাজার হাজার পণ্যের সবটির মান বিতর্কের ঊর্ধ্বে কিনা? কোনো মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এককভাবে এ সংক্রান্ত সবকিছু দেখভাল করা সম্ভব? এই পুরো প্রক্রিয়াটি তদারক করার প্রয়োজনীয় যোগ্য/বিশেষজ্ঞ লোকবল এবং বিস্তৃতি কোন প্রতিষ্ঠানে অধিক?
মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়; তাদের সঠিক চিকিৎসা ও পরিবেশ নিশ্চিত করে সুস্থভাবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করা জরুরি। সে কাজের জন্য প্রয়োজন প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, খামার ভিজিট ও সঠিক পরিচর্যা। সেইসাথে প্রয়োজন খামারিকে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান। মৎস্য ও হাঁস-মুরগির উপর কোনো রাসায়নিকের বা অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। যার জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।
সারাদেশের প্রতিটি থানা/উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তাদের লাইভ স্টক অফিসার রয়েছে। তারা মূলত সুস্থ-সবল গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিয়োজিত। পোল্ট্রিফিডে ও ফিসফিডে কোনো ভেজাল থাকলে সেটিও চিহ্নিত করার এবং প্রয়োজনীয় (সহনীয় মাত্রায়) সরকারি ফি আদায় করার বর্ধিত সক্ষমতা অর্জনের যোগ্যতা তাদের রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের লোকবল বৃদ্ধি, আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পরীক্ষাগারের সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি করতে হবে।
সেইসাথে বৃদ্ধি করতে হবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী যোগ্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। এককভাবে একটি মন্ত্রণালয়কেই দিতে হবে সকল দায় ও দায়িত্ব। ক্রমবর্ধমান এ শিল্পের সঠিক সমৃদ্ধির জন্য যা খুবই জরুরি। মোটকথা সুস্থ-সবল গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে মানুষের জন্য নিরাপদ মাছ-মাংস নিশ্চিত করার দায়িত্ব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কেই দেওয়া উচিত এবং এটি করা উচিত অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট।
এইচআর/এএসএম