ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

আমাদেরকে সামান্য বিষয়ে রেগে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আল্লাহপাক মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন তাই জীবনে চলার পথে মানুষের মাঝে রাগ, ক্রোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি হতেই পারে। তবে ইসলামি শিক্ষা হল আমরা যেন আমাদের ক্রোধকে দমন করে রাখি। আর তাকেই মুমিনদের দলভুক্ত করা হয়েছে যে, ক্রোধ দমন করে চলে।

আমরা যেহেতু দুর্বল, আমরা সব সময় ক্রোধ দমন করতে পারি না, সামন্যতেই রেগে যাই। শুধু রেগে যাই না বরং রাগের মাথায় অনেক কিছু করে ফেলি।

অথচ আমাদের প্রিয়নবি ও শ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কতই না জুলুম অত্যাচার, নির্যাতন করেছে, তারপরও তিনি কখনও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কাউকে কষ্ট দেন নি। কতই না কটু ও মন্দ কথা বলা হয়েছে, এতে তিনি কি কখনও রাগ দেখিয়েছেন? না, তিনি তো ছিলেন দয়ার মহাসাগর।

তারই উম্মত হয়ে আমরা কেন তার শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করব না। এছাড়া ইসলামের এমন কোনো আদেশ-নিষেধ দেওয়া হয়নি যা পালন করতে আমাদের জন্য কষ্টকর।

কোনো কারণে কোন ব্যক্তি যদি উত্তেজিত হন তবে সেই উত্তেজনাকে দমন করার ঔষধ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আতিয়াহ ইবনে উরওয়াহ্ সাদিরা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘হজরত রসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘ক্রোধ শয়তানের পক্ষ হতে আর শয়তান আগুনের তৈরি, বস্তুত আগুন পানি দ্বারা নেভানো হয়। সুতরাং যখন তোমাদের কেউ উত্তেজিত হয় তখন সে যেন অজু করে নেয়।’ (আবু দাউদ)

রাগ দমনে মহানবি (সা.) যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে শিক্ষা দিয়েছেন:

মেশকাত শরীফের এক হাদিসে উত্তেজিত অবস্থাকে শিথিল করতে পানি পানের উল্লেখ রয়েছে। হজরত আবু যার (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মাঝে কারো উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে তবে যেন বসে পরে, যদি এতে রাগ চলে যায় তো ভালো, অন্যথায় যেন সে মাটিতে শুয়ে পরে।’ (আহমদ, তিরমিজি)

হজরত রসুল করিম (স.) বলেছেন, ‘কোনো লোকের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি রাগ করে এভাবে সালাম-কালাম বন্ধ করে থাকা উচিত নয় যে, দুই জনের দেখা হলে, একজন এদিকে আরেক জন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দুই জনের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে সালাম দ্বারা আগে কথা-বার্তা শুরু করে।’

হজরত আবু আইব আনসারী (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রসুল করিম (স.) বলেছেন, ‘কোন লোকের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি রাগ করে এভাবে সালাম-কালাম বন্ধ করে থাকা উচিত নয় যে, দুই জনের দেখা হলে, এক জন এদিকে আরাক জন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দুই জনের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে সালাম দ্বারা আগে কথা-বার্তা শুরু করে।’ (বুখারি, কিতাবুল আদব)

সালমান ইবনে সুরদ (রা.) বলেন, একবার দু’জন ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর পাশে বসে একে অপরকে গালি দিল। আমরা সেখানে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি একটা বাক্য জানি, যা বললে ক্রোধ সংবরণ করা সম্ভব। আর তা হলো, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

এই রাগ সংবরণের জন্য মানুষের ঈমান, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বাড়ানো প্রয়োজন। হজরত নবি করিম (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী সে নয়, যে যুদ্ধে ব্যাপক বীরত্ব দেখায় বরং শক্তিশালী হলো সেই ব্যক্তি; যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ’ (মুসলিম)

হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যখনই তুমি রেগে যাবে এবং রাগের বশবর্তী হয়ে খারাপ আচরণ করবে, তখনই তুমি আগুনে পড়বে।’

হজরত শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন, ‘তুমি যখন লড়ায়ের উপক্রম দেখ, তখন তুমি ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, নম্রতায় লড়াই বন্ধ করে, নম্র ব্যবহার ও মিষ্টি ভাষায় একটি উগ্র হাতীকেও চুল দিয়ে বেঁধে রাখা যায়। অতএব, তুমি যেখানেই লড়াই দেখ নম্র ব্যবহার কর। কেননা, রেশম অত্যন্ত নরম কিন্তু তা ধারাল ছুরি দ্বারা কাটা যায় না।’ (গুলিস্তা, বয়ান-১৫৩)

তিনি আরো বলেন, ‘তুমি দুর্গের দেওয়ালের ওপর পাথর ছুড়ে মেরোনা। কেননা, হতে পারে দুর্গ হতে পাথর এসে তোমার শরীরে লাগবে।’ (গুলিস্তা, বয়ান-১৫৫)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি বীর পুরুষ নয় যে কুস্তিতে অপরকে ধরাশায়ী করে দেয় বরং বাহাদুর তো হল সেই ব্যক্তি যে ক্রোধ ও উত্তেজনার সময় আত্মসংযমী হয়।’ (বুখারি)

‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বর্ণনা করেন, একবার একজন লোক মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করল, হে আল্লাহর রসুল! ‘আমাকে নসিহত করুন। তিনি (স.) বললেন, উত্তেজিত হয়ো না।’ লোকটি বার বার নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নসিহত করতে আরজ করতে থাকলেন। আর মহানবি (সা.) বার বার বলতে থাকলেন, ‘উত্তেজিত হয়ো না।’ (বুখারি, কিতাবুললি ইমান)

আল্লাহপাক চান তার বান্দারা যেন একে ওপরের সাথে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন পরিচালনা করে। অথচ আমরা দেখতে পাই, সমাজ ও দেশে যত ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তার মূলে হল ক্রোধ।

সামান্য বিষয়ে রেগে গিয়ে বড় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়, ভাঙচুর থেকে শুরু করে হত্যা পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। কিন্তু খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, যার জন্য ঘটনার সূত্রপাত তা অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে।

তাই আমাদেরকে সামান্য বিষয়ে রেগে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ক্রোধ দমন করার শক্তি দান করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
[email protected]

এইচআর/এমএস