ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বৃদ্ধ একজন মানুষকে অপমান করে তার ছবিও তুলে রাখলেন!

ডা. নুজহাত চৌধুরী | প্রকাশিত: ০৮:৪৮ এএম, ২৮ মার্চ ২০২০

মানুষকে অপমান করার মধ্যে কি নিজের সম্মান বৃদ্ধি হয়? অন্যের মাথা হেঁট করে দিলে কি নিজের মাথার উচ্চতা বৃদ্ধি পায়? বৃদ্ধ একজন মানুষকে অপমান করে তার ছবিও তুলে রাখলেন। এত কঠিন আপনার ভেতরটা? একদিন কি সব কৃতকর্মের জবাব দিতে হবে না? শেষ বিচারের দিনেও না? সেদিন সৃষ্টিকর্তার সামনে আপনার মাথা কি উঁচু থাকবে? এত বড় বৈশ্বিক দুর্যোগের সম্মুখে দাঁড়িয়েও যারা আহমিকা ছাড়তে পারে না, তাদের মনুষ্যত্বই নেই। তাদের আমি মানুষই মনে করি না।

ভাবছেন কান ধরিয়েছেন যে বৃদ্ধের তাকে অনেক অপমান করে ফেললেন? হায় রে কুশিক্ষিত, অর্বাচীন মেধাবী! গায়ের জোরের ভয়কে সম্মান বলে না। আজ পুরো জাতিকে জিজ্ঞাসা করুন, এই ঘটনায় এই পিতৃসম বৃদ্ধের অমর্যাদা হয়েছে নাকি আপনার শিক্ষা, পরিবারিক পরিচয়কে আপনি জাতির সামনে ভূলুণ্ঠিত করলেন। আপনি আপনার চাকরির সমগ্র ক্যাডারকে জাতির সামনে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন।

প্রশ্ন উঠছে, কী প্রশিক্ষণ দেয়া হয় আপনাদের? কোথা থেকে শেখেন এত আদবের বরখেলাপ? যত বড় টেবিলেই বসেন আর যত টাকার মালিকই হন- আজকের এই ছবিতে কারও যদি অপমান হয়ে থাকে, সেটা হয়েছে আপনার।

সমগ্র জাতি আজ আপনাকে ধিক্কার দিচ্ছে, ছিঃ ছিঃ করছে। সমস্যাটা কোথায় আমাদের? ফলে ফলে গাছ যত ভরে ওঠে, ততই গাছ নুয়ে পড়ে। মানুষ যত বড় হয় তার তো তত বিনয়ী হওয়ার কথা। আমাদের সমাজে হয়েছে ঠিক উল্টো। দেশ যাকে যত বেশি দেয়, সে তত দেশকে লুণ্ঠন করে, দেশের মানুষের ক্ষতি করে। তাই জনগণের সেবক রাতের অন্ধকারে তুলে এনে নির্যাতন করে সাংবাদিককে, তাই সরকারি অফিসে গলায় ফাঁস লাগানো পাওয়া যায় নিরপরাধ মানুষকে।

এত অন্যায়, এত অহমিকা, এত অনাচার প্রকৃতি বেশি দিন সহ্য করবে না। বিশ্বাস করেন সব হিসাব হবে, সব হিসাব হয়। তাকিয়ে দেখেন চারপাশে- এই বৈশ্বিক মহামারির দিকে তাকান। কী মনে হয়? প্রকৃতি সব একদিন ফিরিয়ে দেয় না? পৃথিবীটা একটা প্রতিধ্বনি। আমরা যা দেব তাকে, সে তাই ফিরিয়ে দেবে। পাপ-পুণ্য, স্বর্গ-নরকের হিসাব তো তোলা থাকল; এই পৃথিবীতেই সব হিসাব হয়। পুরো চিত্রটা আমরা দেখতে পাই না দেখে মানুষ সেটা অনুধাবন করে না।

কোথা থেকে কীভাবে যে বিচার হয়, কে জানে সে কথা? আজকের এই দুর্দিন কি মানুষকে কিছু শেখাচ্ছে না? মহাবিশ্বের এই সমুদ্র সৈকতে দুই মুহূর্তের জন্য মানুষের পদচারণা। সেই যাত্রা পথে প্রকৃতির বুকে এত বিকৃত পদচিহ্ন না রেখে গেলেই কি নয়? হোক তা ব্যক্তি জীবনে অথবা মানবজাতি হিসেবে সামগ্রিকভাবে। এই মহাসংকটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে সব মানুষের আজ নিজেকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন।

লেখক : চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা।

এইচআর/বিএ/এমএস