ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নারী ও শিশু নির্যাতন চলছে এবং চলবে

শান্তা মারিয়া | প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ০৬ জুলাই ২০২১

মহামারি, লকডাউন, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশংকা, লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট সবকিছুর মধ্যেও ধর্ষণ কিন্তু থেমে নেই। এ এক আজব দেশ ও আজব জাতি। লকডাউন এবং কঠোর লকডাউনের মধ্যে মানুষের জীবন ও জীবিকা পড়েছে হুমকির মুখে। কত মানুষের চাকরি চলে গেছে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা জীবনের বারোটা বেজেছে অনেক আগেই। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে মহামারীর প্রকোপে। বাড়িভাড়া দিতে না পেরে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন কাজ হারানো কত ক্ষুদ্র কর্মজীবী। প্রবাসীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন, আবার অনেকে মহামাররি ভয়ে দেশে ফিরে এসে এখন আটকে পড়েছেন। ফিরতে পারছেন না কর্মস্থলে। সমস্যার শেষ নেই। প্রত্যেকেই আমরা মৃত্যুর ভয়ে ভীত, সন্ত্রস্ত। এর মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকলেও থেমে নেই ধর্ষণ।

দেশে গত ছয় মাসে ৭৬৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। এমনকি ধর্ষণের পর ২৪জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৫ জন আত্মহত্যা করেছে। ৬১১ জন একক এবং ১৫৬জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আসক আরও জানিয়েছে, গত ছয় মাসে শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন পরিস্থিতিও ছিল উদ্বেগজনক। এই সময়ের মধ্যে ৭২২ শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ৩১৭ শিশুকে। মোট ১ হাজার ৩৯ শিশু নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৪২০ শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে, আত্মহত্যা করেছে ৫১ শিশু, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫০ ছেলে শিশু, উত্ত্যক্তকরণ, শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন, শিক্ষকের কাছে নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও ২০৯ শিশু।

ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৬৪ নারী। এদের মধ্যে ৭জন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৫৭ জন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮জনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদ করায় ২ নারীকেও হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে থেমে থাকেনি পারিবারিক নির্যাতনও। গেল ছয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৫০ নারী। স্বামী, স্বামীর পরিবার ও নিজের পরিবারে হত্যার শিকার হয়েছে ২১০ নারী। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছে ৭৮ নারী।

যৌতুককে কেন্দ্র করেও লাগাতার চলেছে নারী নির্যাতন। নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে ১২১ নারী। নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে। নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে ৯জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭১ জন। আসক এই প্রতিবেদনটি করেছে সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত খবর এবং নিজস্ব উৎস ব্যবহার করে।

আরও কিছু আলোচিত খবরের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যখন পরীমণির ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুক সরব সেসময় কিন্তু এক আদিবাসী কোচ নারী টাঙ্গাইলে বর্বর নির্যাতন ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু তার বিষয়ে তেমন কোন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। কাছাকাছি সময়ে বাসে দুই বার দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় আরেক নারী।
আর প্রতিদিন সংবাদপত্র হোক বা অনলাইন পোর্টাল সব জায়গায় আর কোন খবর থাকুক না থাকুক ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত খবর এক বা একাধিক আছেই। তারমানে কি? তারমানে হলো এদেশের পুরুষ নামধারী এক দল পিশাচ মহামারি, লকডাউন কোন কিছু না মেনে লাগাতারভাবে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে নারী তো রেহাই পাচ্ছেই না, এমনকি ছেলে শিশুরও রক্ষা নেই। এদের মাথায় হিংস্রতা ও বিকৃত যৌনতা ছাড়া আর কিছু আছে বলে তো মনে হয় না। এরা কোনকিছু বাছ বিচার করছে না। নিকটাত্মীয়রাও এদের হাত থেকে রেহাই পায় না। এমনকি নরাধম ‘বাবা’ নামের অযোগ্য কিছু লোক নিজের কন্যাকেও রেহাই দিচ্ছে না।

অবস্থা দেখে মনে হয়, এদেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ হওয়ার নয়। একেবারে লাগাতার ‘চলছে ও চলবে’ পরিস্থিতি। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে এদের দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি কার্যকর করা উচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে এটা যেমন সুখের ও গৌরবের তেমনি বিপরীতক্রমে ধর্ষক ও নির্যাতকের দেশ হিসেবে আমাদের যে পরিচিতি হচ্ছে সেটা চরম লজ্জার।

এই সব নরপিশাচগুলোকে অবিলম্বে কঠোর শাস্তি দিয়ে আমাদের ইমেজ রক্ষা করতে হবে। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সকল উন্নয়নই বৃথা। শুনেছিলাম, বিপদের মধ্যে নাকি হিংস্র জানোয়ারও তার স্বভাব ভুলে যায়। ঝড়, বন্যা, প্লাবনে একই গাছে আশ্রয় নেয় বাঘ ও হরিণ। তখন নাকি কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। কিন্তু বাংলাদেশের কতিপয় পুরুষ এমনই ‘বস্তু’ যে তারা না বোঝ মহামারী, না বোঝে মৃত্যুভয়। এদের বিরুদ্ধে কি শাস্তি প্রযোজ্য এবং এদেরকে কিভাবে দমন করতে হয় সে উপায় ঠাওরানোর ভার আজ নাহয় পাঠকের উপরেই দিলাম।

লেখক : কবি, সাংবাদিক।

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন