ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাংলাদেশে দুর্নীতির বীজ বপন করে জিয়া পরিবার

ফারাজী আজমল হোসেন | প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২২

একটি ভাঙা সুটকেস থেকে কোনো রাষ্ট্র নায়কের রাজরানি হয়ে যাওয়ার গল্পকে রূপকথার সিনড্রেলার কাহিনিও যেন হার মানাবে। কিন্তু সিনড্রেলার জাদুর নানির মতো বেগম খালেদা জিয়ার ছিল না কোনো জাদুর নানি। বরং খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সম্পদের উৎস দুর্নীতি। এর শুরু অবশ্য বাংলাদেশের অবৈধ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে।

দুর্নীতি নিয়ে বিএনপি নেতাদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। কারণ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জানে, বিএনপির হাত ধরেই বাংলাদেশে দুর্নীতির সূত্রপাত। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং দুই ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ও তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়ে তারা ক্ষমতায় থাকা কালেই সবাই জানতো। ক্ষমতায় থাকা কালে বিদেষি বিনিয়োগকারীদের কাছে তারেক রহমানের অপর নাম ছিল ‘মি. পার্সেন্টিজ’। কেননা সব কিছুতেই তার পার্সেন্টিজ রাখতে হতো। এমন সব দুর্নীতির বিষয়গুলো আজ নথি ও তথ্য দ্বারা প্রমাণিত সত্য।

অবশ্য শুধু তারেক রহমানের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বিএনপি দলটার জন্মই দুর্নীতি থেকে। দলের মাথাদের পাশাপাশি সাধারণ নেতাকর্মীরাও দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাডা় কিছু বোঝেন না। বহুদিন মানুষ তাদের সরকারি ক্ষমতার বাইরে রাখায় এখন দলের ভিতরেই দুর্নীতি টিকিয়ে রেখেছেন জিয়া পরিবার ও তার সমর্থকরা। বিএনপির দলীয় পদ তাই বিক্রি হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। গত সাধারণ নির্বাচনের সময়ও বিএনপির বিরুদ্ধে আসন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিএনপি নেতারা নিজের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও প্রতারণা করতে কার্পণ্য করেন না। তার বড় প্রমাণ গতবারের সংসদ নির্বাচন। গত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০০ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। দ্বিগুণেরও বেশি আসনে মনোনয়ন দিয়ে চাঁদার বাণিজ্য করে তারা। তাদের এই আসন বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তৃণমূল বিএনপির নেতারাই। এই আসন বাণিজ্যের কারণেই বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোট দেয়নি। ফলে সরকারের ক্ষমতা দখল করে ফের দুর্নীতি বাণিজ্য করার সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে দলটির।

বিএনপি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের ধারণা খুব স্পষ্ট। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জিয়ার ভূমিকা সম্পর্কেও ভালোই জানেন সবাই। জিয়ার প্রদর্শিত বাংলাদেশকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য খালেদা ও তারেকের। তাই উন্নয়নের প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে খুন করার ষড়যন্ত্রও হয়েছিল। কিন্তু তারা সেদিন ব্যর্থ হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। মানুষ আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলেছেন বিএনপির নেতাদের।

বাংলাদেশের মানুষের মনের কথাই সম্প্রতি প্রতিফলিত হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের বক্তৃতায়। তিনি বলেছেন, 'বিএনপি একটি সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ, ভোট চোর-ভোট ডাকাত, স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিদের সংগঠন। তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসী দাঁতভাঙা জবাব দেবে'। প্রকৃত অর্থেই বিএনপি বাংলাদেশবিরোধী একটি রাজনৈতিক দল। তাই তারা ভোটে জেতার জন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বন্ধক রাখতেও দ্বিধা করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও বিএনপি কীভাবে বাংলাদেশের সর্বনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'জিয়া থেকে খালেদা জিয়া ২৮ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল, বাংলাদেশের মানুষের কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, সার দিতে পারেনি, কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল, বাংলাদেশের গুম খুনের রাজ্যে পরিণত করেছিল, অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিল। তারা দেশকে অকার্যকর, ধর্মান্ধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।’

আসলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশের মানুষকে অসৎ, নীতি-নৈতিকতাহীন বানানোর কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি নিজে ছিলেন চূড়ান্ত দুর্নীতিবাজ এবং ক্ষমতালোভী। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে তিনি নিজেও একজন ষড়যন্ত্রকারী। তিনিই ছাত্রদের হাতে অস্ত্র, অর্থ তুলে দিয়েছিলেন। জিয়ার স্বেচ্ছায় খাল কাটা কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি ছিল বেশ আলোচিত। খালকাটা দুর্নীতি নিয়ে ১৯৮১ সালে জিয়া মারা যাওয়ার পর সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকার কাজটি করলে ব্যয় হতো ৫ কোটি টাকা। তিনি খালকাটা কর্মসূচি করায় খরচ হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। সেই সময় থেকে মানুষকে নীতি-নৈতিকতাহীন করা শুরু হয়েছিল।

বিএনপি আসলে জন্মলগ্ন থেকেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো দেশপ্রেম তাদের মজ্জাতেই নেই। তাই ক্ষমতা দখলে জামায়াতের মতো দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মেলাতেও লজ্জা করেনি জিয়া ও তার উত্তরসূরিরা। বিএনপি নেতাদের বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বিএনপি নিজেরা চুরি, দুর্নীতি করে এখন লাগাতার মিথ্যাচার করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়।’

শুধু বাধা দেওয়াই নয়, ক্ষমতায় ফিরতে এখন লাশের রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি। ফের অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে তারা। দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায় খালেদা ও তারেকের সমর্থকরা। তারা বুঝে গেছে, নির্বাচনে তাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তাদের মতো দুর্নীতিবাজদের আর চায় না। তাই বিদেশি শক্তির মদতে অশান্তির আগুন জ্বেলে ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া বিএনপি। আর এটা বুঝতে পেরেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘বিএনপি তাদের আন্দোলন জমাতে উসকানি দিয়ে লাশ ফেলতে চায়’। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারীদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায়ই দোষী সাব্যস্ত। আদালত তাকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু হাসিনা সরকার মানবকিতা দেখিয়ে তাকে সরকারের নির্বাহী আদেশে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তিতে রেখেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে কারাগারে পাঠানোর সম্ভাবনা নেই বলে ইঙ্গিতও দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে শর্ত যুক্তভাবে তাকে যে কারামুক্তি দেওয়া হয়েছে।

নিজের প্রয়াত স্বামীর নামে ট্রাস্টি খুলে সেখানে দুর্নীতি করায় কারাদণ্ড হয় খালেদার। আওয়ামী লীগ মানবিকতা দেখালেও দেশকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিতে চাইছে খালেদার দল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এই মামলায় আপিল নাকচ করে তার শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার অন্য একটি বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। তবে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের বিষয়ে শুনানি হবে ২৯ জানুয়ারি। নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ১৩ ডিসেম্বর । এখন দেখার বিষয় এই দুটি মামলায়ও আদালত বিএনপি নেত্রীকে কী শাস্তি দেন।

দুর্নীতিতে মা-বাবার যোগ্য উত্তরসূরি কোকো এবং তারেক। কোকো মারা গেলেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। জিয়া পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন -এফবিআই’য়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ কয়েক বছর ধরে তদন্ত করেছেন। তার তদন্তেও উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, যা পরে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে পাওয়া যায়। মরিয়ার্টি তারেক রহমান সম্পর্কে লিখেছিলেন, 'তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...'।

ফলে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি নিয়ে বিএনপি নেতাদের কথা বলার কোনও মুখ নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষ জানেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও 'জিরো টলারেন্স' নীতি কার্যকর করে চলেছেন। বাংলাদেশের অগ্রগতিই তার বড় প্রমাণ।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জেআইএম