ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিতর্কিত করতে নতুন কৌশল

ড. সুলতান মাহমুদ রানা | প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ৩০ মে ২০২৪

গত ২১ মে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে (ডিডব্লিউ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাব নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাবিউজারস গো অন ইউএন মিশনস’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডয়েচে ভেলের রিপোর্টের শুরুতে জাতিসংঘ মিশনের জন্য বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কিছু ভিডিও দেখানো হয়। প্রামাণ্যচিত্রে বিতর্কিত মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলীকে বলতে দেখা গেছে, ‘যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাদের পাঠানো উচিত নয়।’

এছাড়া প্রতিবেদনের শেষ দিকে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহ দমনের কিছু ছবি দেখিয়ে সে সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত শাভেন্দ্রা সিলভাকে দেশটির সেনাপ্রধান করার কারণে তাদের জাতিসংঘ শান্তরক্ষী মিশনে স্থগিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে (অনলাইন সময় নিউজ ২২ মে ২০২৪)। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা কি কখনও বাংলাদেশে হয়েছে? অবশ্যই না। একটি ডকুমেন্টারিতে বলে দেওয়া হচ্ছে যে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সংশ্লিষ্টদের পাঠানো উচিত নয়।

একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবেদনে কোনো সিদ্ধান্ত উল্লেখ করার মতো বিষয়টি মানানসই নয়। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় না যে, ডকুমেন্টারিটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় সম্পাদিত হয়েছে! বিষয়টি এসব দিক বিবেচনা করলে পরিষ্কার ধারণা করা যায় যে ডকুমেন্টারি হিসেবে ওই প্রতিবদেনটিকে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিতে কি শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সৈন্য পাঠানো বন্ধের অপতৎপরতায় নেমেছে একটি মহল?

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন দেশে তৎপরতা চালায় এনইডি। এজন্য তারা অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এবং সংস্থাকে ব্যবহার করে (আরটিভি নিউজ, ৭ ডিসেম্বর ২০২২)। একইভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের যে সুনাম রয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন তৎপরতা শুরু হতে পারে বলে স্পষ্টভাবে আশঙ্কা করা যায়।

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের যাত্রা অনেক গৌরবোজ্জ্বল। অংশগ্রহণের ৩৭ বছর হতে চলছে। এরপর থেকে বাংলাদেশ সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করছে। তাদের বিশ্বব্যাপী প্রশংসা রয়েছে। মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বীরত্ব ও ত্যাগের ইতিহাসও লম্বা। এ পর্যন্ত মোট ১৬৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত হয়েছেন।

গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্বীকৃতিও মিলেছে জাতিসংঘের। কিন্তু এতসব ইতিবাচক দিক থাকার পরেও ডয়েচে ভেলে ও নেত্রনিউজ কোন উদ্দেশ্যে, কাদের লাভের জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করছে? এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্র জিল্লুর রহমানের সিজিএসকে ফান্ডিং করছে গণতন্ত্র বিকাশের কথা বলে। আর তাসনিম খলিলের নেত্রনিউজকে ফান্ডিং করছে আইনি সহায়তা ও মানবাধিকারের কথা বলে (সময় নিউজ, ২২ মে ২০২৪)।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে লোক না নেওয়ার ষয়যন্ত্র অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ষড়যন্ত্র বিফলে যাওয়ার পর তারা এ ধরনের নেতিবাচক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের নীরব কূটনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

ডিডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করার জন্য গত ২৩ বছরে বাংলাদেশকে ২৫ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অথচ খুব ন্যায্যভাবে বলা যায় যে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের অর্থ রয়েছে। এটা কোনো সাহায্য কিংবা দয়া নয়।

গত ১৫ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে আলাপকালে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উঠে আসে।

গত বছরের জুনে ডিডব্লিউ র‌্যাব নিয়ে আরেকটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে এবং জাতিসংঘের মিশন থেকে এর সদস্যদের বাদ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। এছাড়া দোহাভিত্তিক আল-জাজিরার ‘অল প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে তাদের। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনী নিয়ে কল্পনাপ্রসূত খবর প্রকাশ করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী চিন্তা ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে মানবিক বাংলাদেশ আজ নতুন মর্যাদায় বিশ্বদরবারে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার মানবিক কূটনীতিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক সংস্কৃতির বাংলাদেশকে তুলে ধরলে বিষয়টির গুরুত্ব বিশ্ব রাজনীতি ও বাংলাদেশে বেড়ে যায়। শেখ হাসিনা তার ভাষণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানিয়েছে বারবার।

নেত্রনিউজের সম্পাদক ২০০৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরামর্শদাতা ছিলেন (অনলাইন নিউজ জাগ্রত জয়পুরহাট, ১০ অক্টোবর ২০২১)। বাংলাদেশিদের দিয়ে পরিচালিত যেসব সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের টাকা পায় তাদের মধ্যে অন্যতম নেত্রনিউজ। এই টাকা দেয় দেশটির ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি- এনইডি। এই এনইডিকে বলা হয় আধুনিক সিআইএ।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন দেশে তৎপরতা চালায় এনইডি। এজন্য তারা অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এবং সংস্থাকে ব্যবহার করে (আরটিভি নিউজ, ৭ ডিসেম্বর ২০২২)। একইভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের যে সুনাম রয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন তৎপরতা শুরু হতে পারে বলে স্পষ্টভাবে আশঙ্কা করা যায়।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

এইচআর/ফারুক/এএসএম

আরও পড়ুন