ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিদ্বেষ ছড়ানো ধর্মের শিক্ষা নয়

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। কারো ওপর অন্যায়ভাবে চড়াও হওয়া বা অন্যায়ভাবে আক্রমণ করার অধিকার ইসলামে নেই। ইসলামের বাস্তব শিক্ষা হলো, কেবল আক্রান্ত হলেই তুমি যুদ্ধ করতে পার।

এখানে এ নির্দেশও রয়েছে যে, আক্রমণকারী বা আগ্রাসী হয়ো না, চুক্তি ভঙ্গকারী হয়ো না। আগ্রাসন বলতে কী বুঝায়? সে যুগে ইসলাম বিরোধীরা পরাজিত-সৈন্যদের দেহ ছিন্ন-ভিন্ন করে বিকৃত করতো, এটা সমর-নীতির পরিপন্থি, জিঘাংসা-মূলক অত্যন্ত গর্হিত এক কর্ম। ইসলামে এটি নিষিদ্ধ।

শিশু ও নারীদের হত্যা করাও নিষিদ্ধ। ধর্মীয় নেতাদের, পাদ্রী-পুরোহিত, রাব্বী, প্রমুখদেরকে তাদের উপাসনালয়ে হত্যা করা সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্য কথায়, যুদ্ধ কেবল মাত্র সমরক্ষেত্রেই সংঘটিত হতে পারে। অথবা অন্য কোন বিকল্প খুঁজে না পেয়ে যদি শহর বা নগরে যুদ্ধ করতে বাধ্যও হতে হয়, তবুও কেবল তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করা যেতে পারে, যারা বিরোধিতায় আগ-বাড়িয়ে অস্ত্র ধারণ করে আক্রমণ চালিয়েছে।
এছাড়া আত্মঘাতী বোমা-হামলা ইসলাম সমর্থিত বা অনুমোদিত নয়। আমরা আজ এটাই দেখছি যে, সুন্দর সাবলীল ও সুগঠিত এই সব ইসলামি শিক্ষার ওপর কোনো দলই আমল করছে না। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা শিশু, নারী, বৃদ্ধ, নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা করছে, অপরদিকে, আগ্রাসী বাহিনী, শহর, নগর-বন্দরে বোমা বর্ষণ করছে, গুলি চালাচ্ছে, করছে অতর্কিত আক্রমণ। তারা নগরগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নগর অবকাঠামো সমূলে বিনাশ করছে। এতে নাগরিক অধিকারের কিছুই আর অবশিষ্ট থাকছে না।

প্রতিটি বৃহৎ শক্তিই এখন পারমাণবিক বিপুল অস্ত্র সম্ভারের অধিকারী, এমনকি দরিদ্র-দেশগুলো পর্যন্ত অস্ত্রসম্ভার মজুত করণের এই দৌড়ে শামিল হচ্ছে।

মানবজাতি একেবারে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে, যেখানে কী না পবিত্র কুরআন আমাদেরকে নিরপরাধ, নিরীহদের কোন ক্ষতি না করার শিক্ষা দেয়, সেখানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ তাৎক্ষণিকভাবে জান-মালের বিপুল ক্ষতি সাধন করা ছাড়াও শারীরিক প্রতিবন্ধীতা ঘটায়, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকে। সুতরাং এটা তো হত্যা করার চেয়েও জঘন্যতর অপরাধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহৃত হওয়ার পর মানুষ ভেবেছিল বিশ্ব এমন এক মারাত্মক মারণাস্ত্র বানানো থেকে হয়ত বিরতই থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সে-সব অস্ত্রের প্রাণ সংহারী ক্ষমতা বাড়াতে তারা আরও এগিয়ে গেছে। আর নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব সামগ্রিক ধ্বংসলীলা সাধনকারী মারণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার দৌড়ে ছুটেই চলছে।

আজকাল আবার ভিন্ন দেশের সহায়-সম্পদ থেকে ক্ষমতাধর কিছু রাষ্ট্র নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়ার শক্তি রাখে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, পার্থিব লোভ-লালসা তোমাদের যুদ্ধের কারণ হওয়া উচিত নয়।

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য তুমি ক্ষোভ করো না। আর বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৮৮)।

মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ শিক্ষা দেন, পার্থিব এই সম্পদ ক্ষণস্থায়ী বৈ কিছু নয়। প্রতিনিয়ত তোমরা তা প্রত্যক্ষও করছ। তোমরা যদি তা লাভও করো, তবে এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো-এই সম্পদ বিলীন হয়ে যায়। আর কেবল বিলীনই হয় না, বরং এক আলোড়ন ও নিরন্তর এক অশান্তি পিছনে ছেড়ে যায়। এজন্য বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেক দেশ ও জাতির নিজ সম্পদের উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে কল্যাণ লাভে সচেষ্ট হওয়া উচিত। অন্যের বিত্ত বৈভবের প্রতি লালসার দৃষ্টিতে হাত বাড়ানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণত একজন মুসলমানের বিনা কারণে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি নেই, যদি না তা এমন লোকদের বিরুদ্ধে হয়, যারা আল্লাহর দ্বীন পালনে ও প্রচারে বাধা দেয় অথবা বিশ্বে শান্তি বিনাশের কারণ হয়। শান্তি বজায় রাখতে এটা অনুপম সৌন্দর্যমণ্ডিত শিক্ষা নয় কী?

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তারা সন্ধির জন্য হাত বাড়ালে তুমিও এর জন্য হাত বাড়িয়ে দিও এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করো। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৬১)।

সুতরাং এটা হলো ইসলামি শিক্ষা। চরমপন্থি মতাদর্শের কোনো স্থান এখানে নেই। ইসলামের মূল শিক্ষা হল সর্বাবস্থায় সবার প্রতি ন্যায়বিচার করা। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ এক উচ্চমান নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

মুসলমানরা যাতে সেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায়ের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হও। আর কোন জাতির শত্রুতা তোমাদের যেন কখনো অবিচার করতে প্ররোচিত না করে। তোমরা সদা ন্যায় বিচার করো। এই কাজটি তাকওয়ার সবচেয়ে নিকটে। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। নিশ্চয় তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আল্লাহ পুরোপুরি অবহিত’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৮)।

বৈরিতার বিলোপ সাধন করে সামনে এগিয়ে যেতে এবং শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এ শিক্ষা অত্যন্ত ব্যাপক প্রভাব সম্পন্ন ও ফলপ্রসূ। নিজ আত্মীয়-স্বজন বা আপনজনদের সাথে করা একই ব্যবহার ন্যায় বিচারের চাহিদা পূরণে শত্রুদের সাথে করাটা নিশ্চয়ই অসম্ভব কঠিন এক কাজ। তবুও ইতিহাস এ সাক্ষ্য বহন করছে যে, সেই আদর্শ ও নমুনাই বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্থাপন করে গেছেন। এমনকি, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর শত্রুদের অভাব-অভিযোগের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি রাখতেন। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয় ছিল স্বচ্ছ ও পবিত্র।

একবার হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল, শ্রেষ্ঠ মানুষ কে? মহানবি (সা.) বললেন, যার অন্তর পরিচ্ছন্ন এবং যে সত্যবাদী। সাহাবিরা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, পরিচ্ছন্ন অন্তর দ্বারা কী উদ্দেশ্য? মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যার মনে কোনো হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, অন্যের অনিষ্টের চিন্তা নেই, পাপহীন অন্তর। (ইবন মাজাহ)
অন্য বর্ণনায় হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের ভেতর পূর্ববর্তী জাতিসমূহের রোগ সংক্রমিত হবে। তাদের মতো তোমাদের ভেতর বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়বে। জেনে রেখ, বিদ্বেষ মানুষের ধর্ম শেষ করে দেয়। (তিরমিজি)

আল্লাহপাক সকলকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা বুঝার ও তার ওপর আমল করার তৌফিক দিন আর সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোর পরিবর্তে সবাই সবার জন্য শান্তির কারণ হই।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
[email protected]

এইচআর/জিকেএস

আরও পড়ুন