ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

চীন থেকে

নিংসিয়ার শাহু হ্রদে একটি আনন্দময় দিন

আলিমুল হক | প্রকাশিত: ০৯:৩৭ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিংসিয়ায় আসার পর থেকে প্রতিদিনই লাঞ্চে ও ডিনারে ডজন খানেক পদের তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া হচ্ছিল। আসলে, ভাত খাওয়া হচ্ছিল না বললেই চলে। ‘ভাত’ শব্দটা না-থাকলে বাক্যটা পূর্ণতা পায় না বলেই এভাবে বললাম। অধিকাংশ সময় শুধু তরকারিই খাওয়া হচ্ছিল, মাঝেমধ্যে তার সাথে খানিকটা ভাত। আর তরকারির মধ্যে প্রতিদিনই ছিল ভেড়ার মাংস, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ও মাছ। তবে, ৯ আগস্টের লাঞ্চে কোনো মাংসের বালাই ছিল না, ছিল শুধুই মাছ! পদের সংখ্যা ঠিকই ছিল, কিন্তু সব পদই রান্না করা হয়েছে মাছ দিয়ে। আমি মাছে-ভাতে বাঙালি, এতে খুশি হলেও, দলের বাকিদের অনেকেরই মন বেজার হলো। কেউ কেউ মিন মিন করে প্রশ্ন করলেন, ‘মাংসের কোনো আইটেম নেই আজ?’ বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর কর্মকর্তার উত্তর: ‘না, নেই। আজকের লাঞ্চের থিম হচ্ছে মাছ। তাই, সব আইটেম মাছ দিয়ে রান্না করা হয়েছে।’ একটু খুলেই বলি।

চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ইনছুয়ান থেকে ৯ আগস্ট ২০২৫-এর সকালে আমরা বিদায় নিই। আগের তিন দিন অনেক খাটাখাটনি গেছে। ইন্টারেস্টিং অনেককিছু দেখার সুযোগ হলেও, এগুলোর মাঝে ঠিক বিনোদন বা রিক্রিয়েশান বলে কিছু ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে, ৯ আগস্ট সকাল থেকেই টিমের সবার মন ছিল তাই ফুরফুরে, কারণ দিনের প্রথম গন্তব্য শাহু হ্রদ। হ্রদ মানেই পানি, আর পানি মানেই নৌভ্রমণের হাতছানি। তবে, শাহু হ্রদ আমাদেরকে দিল আরও বেশিকিছু, মন ভরিয়ে দেওয়ার মতো বেশিকিছু।

শাহু হ্রদ অবস্থিত নিংসিয়ার শিচুইশান শহরের ফিংলুও কাউন্টিতে। এর কেতাবি নাম ‘নিংসিয়া শাহু প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা’। এই এলাকার মোট আয়তন ৪৩৬৬.৬৬ হেক্টর। এর মধ্যে মূল অংশ হচ্ছে ১৭৫০.৪৮ হেক্টর এবং মূল অংশকে আগলে রাখা ৫৬৯.৮৬ হেক্টর বাফার অঞ্চল। আর বাকি ২০৪৬.২৮ হেক্টর হচ্ছে এক্সপেরিমেন্টাল এরিয়া।

শাহু সংরক্ষিত এলাকায় বিশাল জলাভূমির পাশাপাশি আছে, বিশাল মরুভূমি অংশও! পানি ও মরুভূমির এমন সহাবস্থান সচরাচর দেখা যায় না। আমি পানির দেশের মানুষ। কাপ্তাই হ্রদ দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছি, ছোটবেলায় এমনকি খরস্রোতা নদীতে সাঁতারও কেটেছি। বড় হয়ে বিদেশে মরুভূমিও দেখেছি। কিন্তু, বিশাল হ্রদের পাশে বিশাল মরু অঞ্চলের মিলেমিশে থাকার
দৃশ্য দেখিনি। শাহু সংরক্ষিত অঞ্চলে এসে তা দেখেছি এবং বিস্মিত হয়েছি।

নিংসিয়ার স্থানীয় সরকার শাহু হ্রদকে ঘিরে বিশাল এক প্রাকৃতিক অঞ্চলকে সংরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মূলত এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং খোদ হ্রদের উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে। বলা বাহুল্য, এ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি এখন সংরক্ষিত এক অভয়ারণ্যে বাস করে। বিশেষ করে পাখির কথা উল্লেখ করা যায়। ২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, শাহু হ্রদ সংরক্ষিত এলাকায় ১৭৮ প্রজাতির পাখির নিবাস; আছে ১৫৯ প্রজাতির বিভিন্ন গাছ-গাছালিও। এ সবই এখন সংরক্ষিত এলাকায় নিরাপদ।

যতদূর বুঝেছি, এলাকার মূল অংশ ও বাফার অংশের বাইরে যে এক্সপেরিমেন্টাল এরিয়া আছে, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। এখানে আছে বিভিন্ন ধরনের নৌযানে চেপে হ্রদের নির্দিষ্ট এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ; আছে ওয়াটার কার, স্পিডবোটসহ নানান ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। কোনো কোনো বিনোদনের তো নামও আমি জানি না!

নিংসিয়ার শাহু হ্রদে একটি আনন্দময় দিন

আমরা শুরুতে ট্রেনের মতো একাধিক কার্ট নিয়ে গঠিত লম্বা পর্যটন-গাড়িতে চেপে, গাছ-গাছালির ছায়াঘেরা পথ ধরে, নৌঘাটে যাই। সেখানে চেপে বসি বজরা আকৃতির নৌযানে। সেই যানে বসে হ্রদের পানি ও গাছ-গাছালির সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায়; মন প্রশান্ত হয়। প্রশান্ত মন নিয়ে আমরা গেলাম এলাকার মরুভূমি অংশে।

সেখানেও আছে নানান বিনোদনের ব্যবস্থা। আপনি সেখানে উটের পিঠে চড়তে পারেন, তথাকথিত মনস্টার ট্রাকে চেপে মরুভূমির উঁচুনিচু বালির রাস্তা দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন। দু’ধরনের ট্রাক দেখতে পেলাম। একটা ডজনখানেক যাত্রী বহনে সক্ষম। ছাদ খোলা। আর বাকিগুলো ছোট ছোট তিন বা চার চাকার মোটরযান। আমরা বড় ট্রাকে, যেটার গায়ে বড় করে লেখা ‘থান্ডার জেট’, মরুভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলাম। টিমলিডার বললেন, যাদের ব্যাক পেইন আছে, বা কাধে ব্যথা আছে, তাঁদের জন্য এ রাইড নয়। আমার ব্যাক পেইন আছে, যদিও অতো সিরিয়াস নয়। শুরুতে আমি এই ‘দানবের’ পিঠে না চড়ার কথা ভাবলাম, পরক্ষণেই মনে হলো, নো রিস্ক নো গেইন! সবার সঙ্গে গিয়ে আল্লাহর নামে থান্ডার জেটে চেপে বসলাম। সিটবেল্ট বেঁধে নেওয়ার নির্দেশ এলো; নিলাম। তারপর থান্ডার জেট মরুভূমির উঁচুনিচু বালির রাস্তা দিয়ে তীব্র বেগে ছুটতে শুরু করল। একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। মনে মনে ভাবলাম, না এলে ভুল করতাম।

গাড়ি আবারও ছুটছে। আমি গাড়িতে বা ট্রেনে বসলে সবসময় বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি। এটা অনেকটা নেশার মতো। বাইরের দৃশ্য দেখি। ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে দু’একটা ঘর চোখে পড়লো অন্য রঙের। বাকি সব লাল। বিশেষ করে ছাদ। আমি নিংসিয়ার গ্রামাঞ্চলের বাড়িঘর দেখছি। এর মধ্যে অন্তত দুটি মসজিদও চোখে পড়লো। মিনার নেই। তবে, চিনতে অসুবিধা হলো না। আচ্ছা, নিংসিয়ার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই কি হুই মুসলিম?

মরুভ্রমণ শেষে এলো নৌভ্রমণের সুযোগ। সবাই হৈহৈ করে নৌঘাটে যাচ্ছে। এবার আমি না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। যুক্তিসঙ্গত কারণেই। সকালে হোটেল থেকে নাস্তা না-করে বের হয়েছি; হ্রদ এলাকায় এসে অনেক হাঁটাহাঁটির ফলে পেট চো চো করছিল। এদিকে, মাথার উপর সূর্য, ভুলে মাথার ক্যাপটা বাসে রেখে এসেছি। সবচেয়ে বড় কথা, স্পিডবোট-টোটে চড়ার অভিজ্ঞতা আমার আছে। সুতরাং, সিদ্ধান্ত পাক্কা: নৌঘাটের বিশাল ছাউনির নিচে বসে চারপাশের সৌন্দর্য ও অন্যদের আনন্দ উপভোগ করব।

সত্যি সত্যি ওই ছাউনির নিচে বসে, চারপাশের সৌন্দর্য দেখার কোনো তুলনা হয় না। আমি মুগ্ধ হয়ে সব দেখছি। একসময় খেয়াল করলাম, মাথার উপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম, সিকিউরিটি ইসু। কিন্তু পরে জেনেছি, টিকিট কেটে হেলিকপ্টারে চেপে হ্রদ এলাকা আকাশ থেকে দেখার সুযোগও আছে। মূল্য অবশ্যই চড়া। থান্ডার জেটে বা স্পিডবোটে চড়ার জন্যও পকেটের টাকা খসাতে হয়, তবে সেটা হেলিকপ্টারের মতো না। খোঁজ নিয়ে জানলাম, ৯০০ ইউয়ান (১ ইউয়ান=১৭ টাকা) ব্যয় করলে, পর্যটকরা হেলিকপ্টারে বসে সরাসরি ইনছুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে পারেন!

মরুভূমি থাকবে, অথচ উট থাকবে না, তা কী হয়! মরুভূমি এলাকায় উট চলছে সারি সারি। আপনি টিকিট কেটে উটের পিঠেও চড়তে পারেন। সুযোগ পেলে আমি উটের পিঠে চড়তাম নিশ্চিত, ব্যাক পেইনের পরওয়া না করেই। কিন্তু সুযোগ ছিল না। টিমের কার্যসূচিতে উট নেই! নিজের পকেটের টাকা খরচ করে উটের পিঠে চড়বো, সেই উপায়ও নেই। দলছুট হওয়া যাবে না। পরে মনে হয়েছে, টিমলিডারকে অনুরোধ করে দেখা যেতো! কে জানে, উনি হয়তো বিকল্প ব্যবস্থা করতেন! আসলে আমার হেলিকপ্টারে চড়ে হ্রদ এলাকাটা আকাশ থেকে দেখার শখও হয়েছিল। কিন্তু তেমন আবদার করা বাড়াবাড়ি হয়ে যেতো নিশ্চয়ই!

যাই হোক, দলের অন্য সদস্যরা (একমাত্র আমি বাদে) বেশ কয়েক ধরনের নৌযানে চড়ে হ্রদে ভ্রমণ করায়, বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল। একসময় নৌভ্রমণশেষে তাঁরা ফিরে এলেন। জানলাম, দু’টি মেয়ে নৌযান থেকে হ্রদের পানিতে পড়ে গিয়েছিল! তাদের একজন ইরানসুন্দরী ইন্টারনেট সেলিব্রেটি। চমত্কার পোশাক, মাথায় হালকা ধরনের হিজাবের উপর কৃত্রিম ফুলে ঢাকা হ্যাট এবং মুখে ‘আসসালামু আলাইকুম’ শুনে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হুই মুসলিম মেয়ে। তো, বেচারি তার সকল পোশাক-আশাক আর সৌন্দর্য নিয়ে হ্রদের পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলেন। তবে, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি; গায়ে সেফটি ভেস্ট পরা ছিল, কাছাকাছি উদ্ধারকর্মীরাও ছিলেন। হ্রদের পানিতে অসময়ের স্নান ছাড়া আর কিছু ঘটেনি। আর পুরুষদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার রাভি মাল হান্ডুওয়ালা পড়ে গিয়ে হাতে চোট পেয়েছেন। তার হাতে ব্যান্ডেজ। আমাকে বললেন, ‘তুমি না-গিয়ে ভালোই করেছো।’

নিংসিয়ার শাহু হ্রদে একটি আনন্দময় দিন

এতোসব তথ্য জানলাম খাবার টেবিলে। নৌভ্রমণশেষে আমাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হলো পর্যটনকেন্দ্রেরই একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়। সেখানেও হ্রদের ছোঁয়া। বিশাল চৌবাচ্চায় মারমেইড তথা অর্ধেক মাছ ও অর্ধেক মানবীর সাজে সুন্দরী নারীদের কলাকৌশল প্রদর্শনের ব্যবস্থা আছে। লাঞ্চ শুরুর আগে ঘোষণা দেওয়া হলো: ‘এখন মারমেইড দেখা দিবেন।’

মারমেইডের ছলাকলা দেখার পর খাবার টেবিলে একটার পর একটা আইটেম আসতে লাগলো। প্রথম আইটেম বিশাল এক প্লেটে বিশাল একটা মাছ; তার উপরে নানান ধরনের সবজি ও মরিচের টুকরো ছড়ানো। জানা গেল, এটা শাহু হ্রদের মাছ। আমরা সবাই আগ্রহ নিয়ে খেতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আরেকটা আইটেম সার্ভ করা হলো। দেখে মনে হলো, চিকেন নাগেট। আসলে ফিস নাগেট! তারপর একের পর এক মাছের বিভিন্ন আইটেম আসতে লাগলো। আজকের লাঞ্চের থিম হচ্ছে ‘মাছ’। নো মিট-ফিট।

লাঞ্চের টেবিলে কথা হলো চীন আন্তর্জাতিক বেতারের গ্রিক ভাষা বিভাগের এক নারী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তার নামটা আমার আজও জানা হয়নি। বিগত ১৭ বছর ধরে তিনি সিএমজি-তে কাজ করছেন; বিয়ে করেছেন চীনের এক সুপুরুষকে। তিনি একসময় আমাকে প্রশ্ন করলেন: ‘আচ্ছা, তোমরা কি সবার শেষে ভাত নাও? আমাদের কাছে কিন্তু ভাত মূল আইটেম। ভাত ছাড়া আমাদের খাওয়া শুরুই হয় না!’ আমি বললাম, ‘দেখ, আমরা তরকারি দিয়ে ভাত খাই। ভাত ছাড়া সাধারণত তরকারি খাই না।’ বুঝলাম, চীনে রেস্তোরাঁয় সাধারণভাবে সবার শেষে ভাত সার্ভ করার ব্যাপারটা আরও অনেক বিদেশী খেয়াল করেছেন।

সব আইটেম মাছের বলেই বোধকরি টিমের অধিকাংশ সদস্য আধপেটা খেয়েই উঠে গেলেন। আমি ভালোই খেলাম, তবে শাহু হ্রদের মাছের আধেকটা রেখে উঠে যাওয়াটা ছিল আমার জন্য কষ্টের। কিন্তু কিছু করার নেই। সবাই উঠে গেছে, আমি বসে বসে কাটা বেছে বেছে মাছ খেতে পারি না। মনে একটা প্রশ্ন জাগল: আচ্ছা, এই যে এতোগুলো খাবার রয়ে গেল, সেগুলো কি ফেলে দেওয়া হবে? সেই সম্ভাবনাই বেশি। চীনের ‘চেটেপুটে খাও’ আন্দোলনের প্রভাব কি তাহলে কমতে শুরু করেছে?!

প্রশ্ন মাথায় নিয়েই ফিরতি পথে রওয়ানা দিলাম সবাই। টিমলিডার আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন আবার সেই নৌঘাটের দিকে। সেখানে তিনটা স্পিডবোটে সবাই চেপে বসলাম। মনে মনে খুশিই হলাম। আগের দফায় স্পিডবোটে না চড়ায় খানিকটা যে আক্ষেপ মনে ছিল না, তা নয়। সে আক্ষেপ দূর হলো। স্পিডবোট তীব্র বেগে ছুটছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম এক ঝাঁক পাখিও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সমান গতিতে ছুটছে; একেবারের মাথার উপরে; হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। এক রোমান্টিক পাখি তো আমাদের দলের এক সুন্দরীর মাথায় আলতো করে পা দিয়ে খোঁচাই মেরে বসলো! আমার মনে আরেকটি প্রশ্ন জাগলো: আচ্ছা, পাখিগুলো কি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত? নাকি এরা প্রাকৃতিকভাবে এমনটা করে?

চমত্কার একটি স্পিডবোট রাইডশেষে আমরা পৌঁছালাম আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী টুরিস্ট বাসের সামনে। বাস আমাদের নিয়ে ছুটতে শুরু করল, লক্ষ্য: কুইউয়ান শহর। পাক্কা ৪ ঘন্টার পথ। পথে দু’ধারে বিস্তীর্ণ কৃষিক্ষেত। এসব ক্ষেতকে কেন্দ্র করেই ছোট ছোট গ্রাম। বাড়িঘর অধিকাংশই দোচালা। ইটের দেওয়াল ও টালির ছাদ। অধিকাংশ ছাদ টকটকে লাল রঙের। চীনের জাতীয় পতাকার রঙও লাল। কোনো যোগসূত্র কি আছে? থাকার সম্ভাবনা প্রবল। থাকলে তা হবে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

পথে একবার গাড়ি থামলো সবাইকে ফ্রেস হবার সুযোগ দিতে। যেখানে থামা হলো, সেখানে দোকানপাট আছে, আছে ওয়াশরুমও। আমরা সেখানে ঢুকতেই অনেক মানুষের মধ্যে এক প্রবীণকে দেখলাম, যার মাথায় টুপি। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিকভাবে হাসলেন। রাভি বলল, ‘নিংসিয়ায় এই প্রথম আমি একজনকে দেখলাম যার মাথায় টুপি।’ আমি বললাম, ‘আসলে, মুসলিমদের জন্য টুপি পরা বাধ্যতামূলক নয়।’ বাথরুমে যাওয়ার তাড়া ছিল। তাই, প্রবীণ লোকটির সাথে একটা ছবি তোলা হলো না। আফসোস থেকে গেল।

গাড়ি আবারও ছুটছে। আমি গাড়িতে বা ট্রেনে বসলে সবসময় বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি। এটা অনেকটা নেশার মতো। বাইরের দৃশ্য দেখি। ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে দু’একটা ঘর চোখে পড়লো অন্য রঙের। বাকি সব লাল। বিশেষ করে ছাদ। আমি নিংসিয়ার গ্রামাঞ্চলের বাড়িঘর দেখছি। এর মধ্যে অন্তত দুটি মসজিদও চোখে পড়লো। মিনার নেই। তবে, চিনতে অসুবিধা হলো না। আচ্ছা, নিংসিয়ার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই কি হুই মুসলিম?

প্রশ্নটা যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন গাড়ি আমাদের নিয়ে পৌঁছালো একটি কৃষি খামারে। বিশাল এলাকাজুড়ে এই খামার। চারপাশে গ্রিনহাউজ। সেখানে চাষ হয় বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি। এগুলো আবার বিক্রি হয় চীনের বহু অঞ্চলে। আমরা একটা গ্রিনহাউজে ঢুকলাম। জীবনে প্রথম কোনো গ্রিনহাউসে ঢোকার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হলাম। ভিতরে দেখলাম হানিডিউ মেলন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। নিজেদের খামারে উত্পন্ন আঙুর, আপেল ও হানিডিউ মেলন দিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের আপ্যায়ন করল। আমি দুই-তিন স্লাইস হানিডিউ মেলন খেলাম। মিষ্টি ও সুস্বাদু। মিষ্টতা দিয়ে শেষ হলো আমাদের নিংসিয়ার আরেকটি দিন। বাকি দিনগুলোতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা দেখার বিষয়। (চলবে)

৯ আগস্ট ২০২৫
কুইইউয়ান, নিংসিয়া, চীন

লেখক: বার্তাসম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)
[email protected]

এইচআর/এমএস