ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সুবোধ তুই পালিয়ে যা

প্রভাষ আমিন | প্রকাশিত: ০৬:৩০ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

ইদানিং ঢাকার দেয়ালে একটি গ্রাফিতি শিল্প নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। ‘সুবোধ’ নামে এক কাল্পনিক চরিত্রকে ঘিরে দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে সমসাময়িক নানা ইস্যু। অবদমিত মতপ্রকাশের দারুণ মাধ্যম হয়ে উঠছে এই গ্রাফিতি আর্ট। ঢাকার দেয়ালে প্রথম গ্রাফিতিতে খাঁচাবন্দি সূর্য হাতে পালাতে উদ্ধত একজনকে দেখা যায়। নিচে লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা। সময় এখন তোর পক্ষে না।’ পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সুবোধের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে নানা অসঙ্গতি। কিন্তু কে এই সুবোধ, কারা দেয়ালে এই গ্রাফিতি ফুটিয়ে তুলছে তা রহস্যজনক। তবে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার হঠাৎ ছুটি নেয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার পর ভেবেছিলাম সুবোধ আর সুরেন্দ্র- দুজনের নামের এই মিলকে মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটা জ্বালাময়ী লেখা লিখবো। সুবোধের মত সময়টা সুরেন্দ্র কুমার সিনহারও পক্ষে না। তাকেও কি আসলে ছুটির আবরণে পালাতে হচ্ছে?

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনের বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হওয়াটা আমাদের গর্বিত করেছিল। প্রমাণিত হয়েছিল বাংলাদেশ সত্যি সত্যি একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র; এখানে ব্যক্তিকে ধর্ম দিয়ে নয়, কর্ম দিয়েই বিবেচনা করা হয়। তিনিও সরকারের সাথে আস্থার সম্পর্ক রেখেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। ক্যান্সারের চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানী করেছিলেন। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিস্তারিত প্রকাশের পর সেই রায় এবং রায়ের কিছু মন্তব্যকে ঘিরে সরকারের সাথে তার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়। বারবার কথা বলে তিনিই সেই তিক্ততাকে তিক্ততর করেছেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছিল বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতেই লড়ছেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী থাকা উচিত কি উচিত না, সেটা নিয়ে একটা একাডেমিক বিতর্ক হতেই পারতো। কিন্তু রায়ের বিস্তারিত প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের নেতারা এমনভাবে প্রধান বিচারপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন, যে একাডেমিক বিতর্কের সুযোগটা আর রইলো না। পুরো বিষয়টাই হয়ে গেল ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, রাগ, ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম। বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ বিচারপতিরাই তদন্ত করবেন, এমন ব্যবস্থার পরও আমি বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতেই রাখার পক্ষে ছিলাম। আমি বিশ্বাস করেছিলাম, বিজ্ঞ বিচারপতিরা অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের প্রজ্ঞা দিয়েই অভিযোগের যাচাই বাছাই করবেন। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল, যেটা ৭২এর সংবিধানে ছিল। যুক্তিটা ছিল, জনগণই যেহেতু সকল ক্ষমতার মালিক, তাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জনগণের হাতেই থাকা উচিত।

যেহেতু জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংসদের মাধ্যমেই জনগণ তাদের সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। তাই বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা মানেই জনগণের হাতে থাকা। কিন্তু আমি এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিলাম অন্য কারণে। আমি মনে করি না, বিচারপতিদের অপসারণের মত স্পর্শকাতর বিষয় সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হোক। এটা ভোটাভুটির বিষয় নয়; যুক্তি, প্রমাণ, প্রজ্ঞা, ন্যায্যতা দিয়েই বিচারপতিদের অপসারণের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাছাড়া সংসদের হাতে যাওয়া মানে আসলে এককভাবে সংসদ নেতার হাতে যাওয়া। কারণ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেয়ার ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের নেই। তবে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতার বিষয়টি বর্তমান সংসদ বা বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার মান দিয়ে বিচার করলে হবে না। এটার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা থাকা অবশ্যই দরকার।

তবে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিতর্কের সময় বিচারপতিদের কেউ কেউ যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে তাদের সেই প্রজ্ঞা নিয়ে আমার সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপতিদের অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে আচরণ করার শপথ নিতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক পারস্পরিক ব্যক্তিগত বিদ্বেষের যে উদগ্র প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা নজিরবিহীন। বিচারপতি মানিকের অবসর নেয়ার পরপরই তাকে বিপাকে ফেলতে অবসর নেয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে বিচারপতি মানিক রায় লিখে নিয়ে গেলেও প্রধান বিচারপতি তা গ্রহণ করেননি। আবার বিচারপতি মানিকও রাষ্ট্রপতির কাছে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন।

এখন জানা যাচ্ছে, প্রধান বিচারপতি বিচারপতি মানিকের পেনশনের ফাইল ছয় মাস ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। এতে নাকি বিচারপতি মানিকের ১০/১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য বিচারপতি মানিক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেটা তিনি করতেই পারেন। তবে আমার ধারণা ছিল, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিচারপতি মানিক মুখ খুলবেন না। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ বা সম্পৃক্ততা থাকলে বিচারকদের বিব্রত হওয়ার রেওয়াজ অনেক পুরোনো। এটা আসলে সাধারণ ভদ্রতা। যখনই কোনো বিষয়ে আপনার রাগ-অনুরাগ-বিরাগে পরিস্ফুট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেটা এড়িয়ে চলাই ভালো। কিন্তু বিচারপতি মানিক করলেন উল্টো।

সুযোগ পেয়ে তিনি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে পুরোনো আক্রোশের শোধ নিতে মাঠে নেমেছেন যেন। আক্রমণে, রুচিতে, শব্দ প্রয়োগে বিচারপতি মানিক ছাড়িয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের যে কোনো মেঠো রাজনীতিবিদকেও। ভদ্র সমাজে রীতি হলো, আপনি কারো সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন, যুক্তি দিয়ে; আক্রমণ করবেন ভদ্র ভাষায়। প্রধান বিচারপতির ভাষায় ‘অপরিপক্ক’ সংসদীয় ভদ্রতায় ‘মিথ্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় না, বলতে হয় ‘অসত্য’। কিন্তু একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যখন প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমাকে শুধু সুপ্রিম কোর্ট থেকেই নয়, দেশ থেকেও যেতে হবে’ তখন বুঝতে হয়, সংসদীয় গণতন্ত্র নয়, বিচার বিভাগই আসলে ‘অপরিপক্ক’। এমন অপরিপক্ক বিচার বিভাগের হাতেই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রাখতে এখন আর মন সায় দিচ্ছে না। তাছাড়া সংবিধান রক্ষার শপথ নেয়া বিচারপতিরা অতীতে বারবার সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়ে সংবিধানকে পদদলিত করেছেন। তাই বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখা সত্যি কঠিন।

শেষ পর্যন্ত বিচারপতি মানিকের হুমকিই সত্য হয়েছে। কাগজে কলমে এখনও সুপ্রিম কোর্ট ছাড়তে হয়নি, তবে প্রকারান্তরে দেশ ছাড়তে হয়েছে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে। এমনিতে ছুটি খুব আনন্দের; সব বয়সের, সব মানুষের কাছেই। কিন্তু প্রধান বিচারপতির ছুটির মত আলোচিত ও বিতর্কিত ছুটি বাংলাদেশে কেন বিশ্বের কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। গত ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার কথা ছিল। তার আগের দিনই প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্যান্সারজনিত শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ৩০ দিনের মানে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন। পরে সে ছুটি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।

প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে আবার শুরু হয় নতুন বিতর্ক। প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কথা বললেও কারোই বুঝতে বাকি থাকেনি এটা আসলে শারীরিক নয়, এটা পলিটিক্যাল অসুস্থতা। বিরোধী দলের নেতারা এমনও বললেন, প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। যদিও প্রধান বিচারপতি স্বাভাবিক ভাবেই অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, আইসিডিডিআর’বি, এমনকি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মত জনবহুল এলাকাতেও গিয়েছেন। তবে প্রধান বিচারপতি বোমাটা ফাটালেন ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময়। এর আগে কোনো প্রধান বিচারপতি কবে বিদেশে যান, কবে আসেন; তার খোঁজ কেউ নিতো না। কিন্তু ১৩ অক্টোবর গণমাধ্যম কর্মীদের হাট বসেছিল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে। আর প্রধান বিচারপতিও নজিরবিহীনভাবে গাড়ি থেকে নেমে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের হাতে একটি লিখিত বক্তব্য তুলে দিয়েছেন। সেই বক্তব্য বিতর্কের আগুনে ঘি ঢাললো যেন।

২ অক্টোবর যিনি শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিলেন। ১৩ অক্টোবরই তিনি বললেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। আমরা আমজনতা কোনটা বিশ্বাস করবো? অন্তত প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে এ ধরনের দ্বিধা কেউ আশা করেনা। লিখিত বক্তব্যে তিনি আসলে বুঝিয়ে দিলেন, শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিলেও তিনি আসলে রাজনৈতিক কারণেই অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন। তিনি বলে দিলেন, সমালোচনায় তিনি সত্যিই বিব্রত। তার বিশ্বাস, রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি অভিমান করেছেন এবং অচিরেই তা দূরীভূত হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনার উদ্যোগে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’

সরকারের সাথে বিচার বিভাগের টানাপড়েন যে আজকের অস্বস্তিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে তার জন্য সরকারি দলের নেতাদের ঢালাও অতি প্রতিক্রিয়া যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী প্রধান বিচারপতির অতিকথন। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে যেমন তিনি অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেছেন। তেমনি দিনের পর দিন নানা আয়োজনে কথা বলে পরিস্থিতিকে জটিল করেছেন। আগে প্রধান বিচারপতিকে কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে দেখা যেতো না। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আসার পর বিচারপতিদের মধ্যেও রাজনৈতিক আকাঙ্খা দেখা দেয়। তারাও আস্তে আস্তে মুখ খুলতে থাকেন। কিন্তু এস কে সিনহা যেভাবে সব বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলেন, তা আগে কখনো ঘটেনি। এস কে সিনহা নিজের সর্বনাশের চূড়ান্তটা করলেন আবারও অতিকথনেই।

প্রধান বিচারপতি যে সাধারণ অসুস্থতায় ছুটিতে যাচ্ছেন না, যেতে বাধ্য হচ্ছেন; এটা সবাই বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু এমন ‘বিপ্লবী’ প্রধান বিচারপতি কেন, এভাবে ছুটিতে যাচ্ছেন, কেন প্রতিবাদ করছেন না; এটা নিয়ে সংশয় ছিল অনেকের মধ্যেই। আমার ধারণা ছিল সরকার প্রধান বিচারপতির এমন কোনো দুর্বলতার খোঁজ পেয়েছে, যা তিনি খণ্ডাতে পারেননি। কিন্তু সেই দুর্বলতাটা হয়তো আমাদের অজানাই থেকে যেতো, যদি না তিনি যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের হাতে লিখিত বক্তব্য ধরিয়ে দিতেন। এস কে সিনহা বিতর্কে বাংলাদেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা আগে কখনো ঘটেনি। এই যেমন প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময় যা বলে গেলেন, সে কারণে পরদিন সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতি দিল। সেই বিবৃতিতেই ফাঁস হয়ে গেল গোমর, প্রকাশ হলো ছুটি রহস্য।

সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ছাড়া আাপিল বিভাগের বাকি বিচারপতিদের ডেকে পাঠান এবং তাদের হাতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। এরমধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনের মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। পরদিন ৫ বিচারপতি প্রথমে নিজেরা বসেন এবং পরে প্রধান বিচারপতির বাসায় গিয়ে তার সাথে বৈঠক করেন। কিন্তু ১১টি অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে তারা প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে দেন, অভিযোগসমূহ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এরপর প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা না করে তিনি ছুটি নেন।

আমরা বুঝতে পারছি, প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ দেয়ার জন্যই অভিযোগগুলো আানা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগগুলো যদি সত্যি না হতো, তাহলে নিশ্চয়ই প্রধান বিচারপতি তার সহকর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা দিতেন বা সাংবাদিকদের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেন। অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির নিরবতাই বুঝিয়ে দেয়, ডালমে কুছ কালা হ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতির পর একটা জিনিস পরিষ্কার, এখন ছুটিতে থাকলেও কার্যত প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেছে। অ্যাটর্নি জেনারেলও বলেছেন, এরপর ছুটি শেষে ফিরে এসে তার আবারও প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। বুঝতে সমস্যা হয় না, এভাবে ছুটি বাড়তে বাড়তে একসময় ৩১ জানুয়ারি চলে আসবে। এস কে সিনহা হয়তো শিগগিরই আর দেশেও ফিরবেন না।

এই গোটা বিতর্কে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি কতটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে, ব্যক্তি এস কে সিনহার কতটা ক্ষতি হয়েছে; সে আলাদা বিবেচনা। তবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এক সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হয়ে গেল। বিচার বিভাগ আমাদের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রে, সম্মানের চূড়ায় ছিল। কিন্তু এবার বোঝা গেল প্রধান বিচারপতিকেও যা ইচ্ছা তাই বলে গালি দেয়া যায়। আওয়ামী লীগ আর প্রধান বিচারপতি মিলে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি করলো, তা কবে, কিভাবে পূরণ হবে জানি না।

যে দেশে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনের মত গুরুতর অভিযোগ ওঠে। যে দেশের দুই বিচারপতি একজন আরেকজনের পেছনে লেগে থাকেন ছেলেমানুষের মত; সে দেশে সুবোধদের থাকা সত্যিই কঠিন। সুবোধ তুই পালিয়ে যা। সময় এখন তোর পক্ষে না।
১৭ অক্টোবর, ২০১৭
[email protected]

probash

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন