সিইসি বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন : ড. এমাজউদ্দীন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ। বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ এর ব্যানারে বিরোধীজোটের পক্ষে কাজ করে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। সিটি নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান, নির্বাচন পরবর্তী বিএনপির পরিকল্পনা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগোনিউজ২৪.কমের নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক মোহাম্মদ।
জাগো নিউজ পাঠকদের জন্য দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব থাকছে আজ :
জাগো নিউজ : প্রতিকূল পরিবেশে বর্তমানে বিএনপি যে দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে; তা কতোটুকু সফল হবে বলে মনে করেন?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই যে এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে নাই। একটি মাত্র দল, যে দলকে দেশের অনেকে পছন্দ করে না। ওই দল ছাড়া সকল দলই এ পরিস্থিতি ভোগ করেছে। আওয়ামী লীগও এরকম সময় পার করেছে। যখন নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোক ছিলো না। যেমন আজকে ভারতের কংগ্রেসের দিকেই যদি তাকান তাহলে আপনারা তাদেরও এরকম দুরবস্থার চিত্র দেখতে পাবেন। একটা দল বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে সেটাকে পুনর্গঠন করা যাবে না এটা ঠিক না। যতোদূর জানি তরুণ, যুব ও শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি দিয়েই বেগম জিয়া এগিয়ে যেতে চান। এ তিনটি ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার জন্য বিএনপি নেতারাও চেষ্টা করছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে বিএনপি দেশে রাজনীতি করছে। এটাতো কোনো হেলাফেলা করার মতো দল নয়। নির্বাচনে একাধিকবার বিজয়ী হওয়া দল।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশের সংবিধান তৈরিতে ব্রিটেন ও ভারতকে অনুসরণ করার কথা বলেছেন। ব্রিটেন ও ভারতে যেরকম ভোটাভুটি হয় বা গণতন্ত্রের চর্চা করা হয়। গণতান্ত্রিক দেশ হলেও বাংলাদেশেতো এরকম হয় না। তাহলে কীভাবে বিএনপি তার এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : হতে হবে। আজ হোক কাল হোক। এটা হতেই হবে। না হলে সংসদীয় ব্যবস্থাটা টিকবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে জনগণ আর কাউকেই বিশ্বাস করবে না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে কী ম্যান্ডেট পেল সরকার? সিটি নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট পড়ার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে বাকি ৬০ শতাংশ কি বন্যায় ভেসে গেছে। তাদেরকি কোনো দায় দায়িত্ব নেই। আমরা এখন ঠিক পথে চলছি না। আমাদেরকে ঠিক পথে যেতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে সঠিক পথেই চলতে হবে।
জাগো নিউজ : বিএনপির বর্তমানে নেতৃত্বে তরুণ ও যুবকরা রয়েছেন। এদের মধ্যে যারা দলে নিষ্ক্রিয় তাদের বাদ না দিয়ে কি এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন সম্ভব?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : না, বাদ দেওয়ার প্রশ্ন না। যখন রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে এগুতে হয়, তখন প্রতিটি কাজ খুবই জটিল হয়। এটা অনেক কঠিন কাজও বটে। মামলা-হামলা গুম অপহরণ ও খুন বর্তমান সরকার যেভাবে চালাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি এড়াতে অনেকে আড়ালে রয়েছেন। দলের সিনিয়র ৮০ বছর বয়স্ক লোকেরা হয়রানির মুখোমুখি হতে চায় না। তাই তরুণ, যুবক ও শ্রমিকদেরকে দিয়ে নতুন করে শুরু করতে চান খালেদা জিয়া। সামনে এই তিন শ্রেণিকেই নিয়ে আসতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে সিনিয়রাও দলের জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করবেন।
জাগো নিউজ : বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে কি-না?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : গঠনতন্ত্র সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। গঠনতন্ত্রের মধ্যে থেকেই দল সুসংগঠিত করা যায়। গণতন্ত্র অনুসরণ করেই নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। আর এরাই দলের জন্য কাজ করবে।
জাগো নিউজ : জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করছেন শিগগির কি তা সবার সামনে প্রকাশ করবেন?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থা। একটা সংসদ রেখে আরেকটি সংসদের নির্বাচন হবে এটা কেউ কোনোদিন ভাবে না। আমরা যখন সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য ১৯৭২ সালে সংবিধান তৈরি করেছিলাম তখন আমাদের দৃষ্টি ছিলো ব্রিটেনের দিকে; পাশের ভারতের দিকে। এখনো ব্রিটেন এবং ভারতের দিকে দৃষ্টি রেখেই সংবিধানের সংশোধনী আনতে হবে। এ নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর সরকার যদি গ্রহণ করে ভালো, না করলেও গ্রহণযোগ্য উপায় বের করতে হবে।
জাগো নিউজ : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিনে মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন বর্জন করা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : এটা প্রার্থীদের সিদ্ধান্ত ছিলো। রাতেই অনেক জায়গার ভোট শেষ হয়ে গেছে। ভোটের নামে এটা ছিল প্রহসন।
জাগো নিউজ : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কৌশলগত কোনো ভুল ছিল কি-না?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : না, কৌশলগত কোনো ভুল নেই। বেগম জিয়াকে নির্বাচনে আনতে খুব বেগ পেতে হয়েছে। আমি বলেছি, রেজাল্ট কী হবে জানি না। তবে ভোটে অংশ নিতে হবে এই কারণে যে, সংলাপের কথা হচ্ছে নির্বাচনে অংশ নিলে সংলাপের পথ সুগম হবে। নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে ভোটারদের মাঝে আলাপ-আলোচনা হয়। অন্যদিকে যিনি প্রার্থী হবেন তিনি পুরো এলাকা চষে বেড়াতে পারবেন। এরকম পরিস্থিতিতে সংলাপের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
জাগো নিউজ : সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ করেছে বিএনপি। তারপরও এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কেন সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : নির্বাচন কমিশন যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে অংশগ্রহণকারী দল দায়ী না-কি নির্বাচন কমিশন দায়ী? নির্বাচনের আগে আমিসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন সাহেবর সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাকে বলেছিলাম প্রতিটি ভোটার যেন তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারেন। আর প্রার্থীরা যেন ভােটারের কাছে যেতে পারেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। আমাদের মতো বয়স্ক ব্যক্তিদের যদি কেউ বিশ্বাস না করে তাহলে কাকে বিশ্বাস করবে? কাজী রকিবউদ্দীন সাহেবও একজন বয়স্ক মানুষ তাকে বিশ্বাস না করলে কাকে বিশ্বাস করবো? তবে তিনি বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
জাগো নিউজ : গত ৫ জানুয়ারির বিএনপি নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়েছিল। অন্যদিকে সরকার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে মানুষ ভোটও দেয়নি। আবার নির্বাচনে প্রতিহত করার জন্য মাঠেও নামেনি কেউ। তাহলে জনগণ কি রাজনীতি থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে?
ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ : হ্যাঁ, জনগণ বর্তমান রাজনীতি পছন্দ করছে না। তবে সে সময় যদি জনগণ আরেকটু জোরেসোরে প্রতিহত করতেন তাহলে নির্বাচনটা হতো না। তবে এদেশের জনগণ এতা বোকা নয় যে- তারা কোনটা ভালো কোনটা মন্দ বোঝে না।
এমএম/এসএইচএস/বিএ/আরআই