প্রবাসে বাঙালি: আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্ব ও সমাজের মুখোশ

‘আপনি যেখানেই যান, নিজেকেই সঙ্গে নিয়ে যান’। এই কথাটি হয়ত আমরা শুনেছি, কিন্তু প্রবাসজীবনে এসে এর অর্থ গভীরভাবে অনুভব করি। দেশের বাইরে এসে কেউই আর আগের মতো থাকেন না। কিন্তু তবুও, আমরা কী সত্যিই জানি আমরা কে? আমাদের পরিচয়টা কী?
এই প্রশ্নগুলো প্রবাসী জীবনের প্রতিটি স্তরে গাঢ় হয়ে ওঠে। আজকের লেখাটি সেই সব প্রবাসী ভাই-বোনদের জন্য, যারা জীবনের অন্য রকম এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন—আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্ব আর সামাজিক মুখোশের ভারে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
প্রবাসে পা রাখলেই পরিচয় নিয়ে দ্বিধা শুরু হয়। একদিকে আমরা চাই—দেশীয় সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে, অন্যদিকে—নতুন দেশের নিয়ম-নীতি মেনে চলতে। অফিসে এক রকম, নিজের সমাজে আরেক রকম। ফলে, অনেকেই ধীরে ধীরে ‘আমি কে?’ এই সহজ প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে ফেলেন।
প্রবাসী সমাজে দেখেছি—
কেউ দেখান ধর্মভীরু, অথচ কার্যত ভিন্ন।
কেউ পরিচয় দেন সমাজকর্মীর, কিন্তু উদ্দেশ্য থাকে ব্যক্তিস্বার্থ।
আবার কেউ সামান্য উন্নতি করেই নিজেকে ‘আদর্শ প্রবাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই ছদ্মবেশ শুধু আত্মপ্রবঞ্চনা নয়—এটি পুরো কমিউনিটিতে বিভাজন ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বহু জায়গায় দেখা যায়, কোনো একটি সংগঠন বা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে এমন কিছু ব্যক্তি সক্রিয়, যারা নিজেদের অতীত বা আসল পরিচয় গোপন করেন। কখনো তারা ‘কবি’, কখনো ‘নেতা’, কখনোবা ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ হয়ে ওঠেন—কেবল ক্ষমতা, সম্মান বা সুযোগের আশায়। কিন্তু দিন শেষে এইসব চাতুরীর ভেতর থেকে সত্য বেরিয়ে আসে—ইনশাআল্লাহ, রাজাকে বাঁচানো যায় না।
প্রবাসে আমরা অনেকেই একাকী, নিজের অস্তিত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। সমাজে ‘কে কত বড়ো’, ‘কে কত টাকা আয় করে’, এই প্রতিযোগিতা আমাদের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে, আমরা মুখোশ পরি—মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
বিজ্ঞাপন
আশা এখানেই যে পরিবর্তন সম্ভব। আমরা যদি সত্যিকারের আত্মজিজ্ঞাসা করি, যদি নিজেদের ভুলকে মেনে নিই, যদি সমাজের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্বচ্ছতা ও সততা বেছে নিই—তাহলে একটি শক্তিশালী, বিশ্বাসযোগ্য প্রবাসী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
মাইগ্রেশন শুধু ভৌগোলিক স্থানান্তর নয়, এটি এক মনোজাগতিক ও নৈতিক রূপান্তর। আত্মপরিচয়ের সংকট ও সামাজিক দ্বিচারিতার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আমরা হয়ত আরও মানবিক, সংবেদনশীল এবং ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। তাই বলছি—আসুন, মুখোশ নয়, মুখোমুখি হই নিজেদের সঙ্গে। বাটপারি, চিটারির দিন শেষ হোক। ভবিষ্যৎ হোক স্বচ্ছ, সত্যভিত্তিক, সম্মানজনক।
প্রবাসী লেখক ও সমাজসেবক
বিজ্ঞাপন
এমআরএম/এমএস
বিজ্ঞাপন