গোধূলি বেলা
অস্ট্রেলিয়ায় গোধূলি বেলার ছবি তুলেছেন শায়লা জাবীন
আমাদের বাসার বারান্দা থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। ভীষণ সুন্দর দৃশ্য, চাইলে ভয়ংকর সুন্দরও বলা যায়। যেদিন আকাশে মেঘ থাকে না, হাতে সময় থাকে আর মনের মাঝে ইচ্ছে জাগ্রত হয় সেদিন এই অতি সুন্দর দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়, যার স্থায়িত্ব খুব অল্প ক্ষণ, খুবই অল্প যা একদম হুট করেই কেটে যায়। আমি মনোযোগ দিয়ে আঁখি মেলে সূর্যাস্ত দেখি, দেখতে দেখতে হারিয়ে যাই কোথায় যেন! সূর্য অস্ত গেলে মনে হয়,এই যাহ্ একটা ছবি তুলে রাখতে পারতাম। পরবর্তীতে ছবি উঠানো হয়, সেই সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম না, সৌন্দর্য যেন অক্ষুণ্ন থেকে যায়...
বিকেলের শেষ ভাগ, সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্ত—যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন আকাশে নামে হালকা অন্ধকার। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে লালচে, কমলাটে, সোনালি আভা। বাংলায় একে বলে গোধূলি বেলা। অদ্ভুত রকমের আবেগ মেশানো রঙ মাখানো নীল ক্যানভাস। এমন চারপাশ মন ভালো করে দেয়, কারোর আবার মন খারাপ হয় হয়তো...! হতেই পারে। আমার অবশ্য মন ভালো হয়ে যায় তবে কিঞ্চিত উদাস হয়ে যাই। কিন্তু সেই উদাসীনতাও ইতিবাচক; যেন অন্তরের দরজা খুলে বসা যায়, হৃদয়ের অন্তর্দর্শন জেগে ওঠে।
প্রায় দু’মাস হয়ে গেল হজ শেষ করে ফিরে এসেছি। বিকেলে বেলা যেদিন ফুরসত মেলে সেসব দিনের কথা মনে পড়ে যায়। আজ মাগরিব–ঈশা পড়তে যাওয়ার সময় মদিনার আকাশ মনে পড়লো। এই দুনিয়ার সব রঙই আল্লাহর দেওয়া এক অলৌকিক শিল্পকর্ম। মদিনার সেই আকাশের রঙ, সেই গোধূলি—আজ খুব স্পষ্ট চোখে ভাসছে। কত মানুষ, কত প্রার্থনা, কত কান্না আর ভালোবাসার মিলন সেখানে। মসজিদ ই নববী এত নির্মল শান্তির একটা স্থান, যেখানে মন প্রসন্ন হয়, স্বপ্ন বেঁচে ওঠে, হৃদয় শান্ত হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখে মনে হলো, সেই দিনগুলোর স্রোত আবার আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে যেন...

আমার বরাবরই আকাশ দেখার অভ্যাস, যখন যেই দেশে, যে কোনো শহরে যাই, আমি খুব আগ্রহ নিয়ে আকাশ দেখি... যেমন অস্ট্রেলিয়ায় আকাশ আমার কাছে একটু কাছে মনে হয়। মনে হয় পা উঁচু করে হাত টা একটু লম্বা করে বাড়িয়ে দিলেই ছুঁয়ে দিতে পারবো। পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ বলে হয়তো এমনটা অনুভূত হয়। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, আমি এখানে অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, তাদের কাছেও আকাশ কাছে মনে হয়। যেন এই অনুভূতিও আকাশের মতোই সবার জন্য উন্মুক্ত। আজও ইচ্ছে হয় হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিই সেই আকাশকে।
গোধূলি বেলা আসলে কেবল দিনের সমাপ্তি নয়, জীবনেরও প্রতীক। আলো–অন্ধকারের মাঝামাঝি এই সময় আনন্দ আর বিষাদের এক অদ্ভুত সেতুবন্ধন। মানুষ যেমন একদিন পৃথিবী ছেড়ে যাবে সূর্যাস্তের মতো, তেমনি প্রতিবারই নতুন ভোর ফিরে আসে। হয়তো সেই আশার আলোই আমাদের উদাসীনতার ভেতরেও শান্তি এনে দেয়।
গোধূলি হলো আধ্যাত্মিকতার সময়, যেখানে আলো ও অন্ধকার মিলেমিশে জীবনের রহস্য বলে যায়।
এমআরএম/এমএস