ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

বাঙালির ‌পিঠার ঘ্রাণে মুখরিত লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি

এস ইসলাম | প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

শীতকাল মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠার উৎসব। নলেন গুড়ের ঘ্রাণ, ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, আর সঙ্গে খেজুরের রস—এই সবই যেন বাঙালির শীতের অনুষঙ্গ। লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরাও শীতের এ অনুষঙ্গকে হৃদয়ে লালন করেন।

রোববার (৫ অক্টোবর) পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সিতে আয়োজন করা হয় এক ‘পিঠা মেলা’, যেখানে বসেছিল বাংলা সংস্কৃতি ও স্বাদের অনবদ্য এক মেলবন্ধন।

অনলাইন স্যাটেলাইট চ্যানেল আইওএন টিভির উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল রিজেন্সি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পিঠা মেলা। সকাল দশটা থেকে শুরু করে রাত দশটা পর্যন্ত সারাদিন ধরে মেলায় ছিল পিঠার বাহার—ভাপা, পাটিসাপটা, চিতই, পুলি, পাকন, নকশি ও দুধপিঠা থেকে শুরু করে নারকেল ও গুড়ের নানা রকমের স্বাদ ও ঘ্রাণের পিঠার সমাহার। শুধু পিঠাই নয়, ছিল ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি, আর নানা দেশীয় মুখরোচক খাবার।

বাঙালির ‌পিঠার ঘ্রাণে মুখরিত লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি

যুক্তরাজ্যে বয়ে যাওয়া প্রবল ঝড় ‘অ্যামি’-র ঝড়ো বাতাস রোববারেও বহমান ছিল। কিন্তু প্রবাসী বাঙালির উচ্ছ্বাসে এ ঝড়ের কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রবল বাতাস উপেক্ষা করে বিপুল জনসমাগম ঘটে মেলায়। নারী-পুরুষ, শিশু ও প্রবীণ—সব বয়সের মানুষ একত্রিত হন এক বাঙালির এ মিলনমেলায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউহ্যাম এমপি ও লেবার সরকারের মন্ত্রী স্যার স্টিফেন টিম। তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে সমবেতদের পিঠা মেলায় আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।

বাঙালির ‌পিঠার ঘ্রাণে মুখরিত লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র লুতফুর রহমানের প্রতিনিধি, রয়্যাল রিজেন্সির মালিকপক্ষ, প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা।

এ সময় আইওএন টিভির কর্ণধার ঘোষণা করেন, যেহেতু এমন মেলার পরিসর লন্ডনে বাঙালির রাজধানী খ্যাত টাওয়ার হ্যামলেটস হতে নিউ হাম পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে, সেহেতু এর পরিসর পার্শ্ববর্তী রেডব্রিজ এবং বার্কিং ও দাগেনহাম বারা পর্যন্তও ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত করা হবে।

বাঙালির ‌পিঠার ঘ্রাণে মুখরিত লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি

মেলায় অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় পিঠা প্রতিযোগিতা। বিচারকদের মূল্যায়নে প্রথম পুরস্কার অর্জন করে ‘সিলেট কর্নার’, দ্বিতীয় পুরস্কার পায় ‘বাংলা রান্না ঘর’ এবং তৃতীয় পুরস্কার যায় ‘ডান্ডা গরম’ এর হাতে। স্টিফেন টিম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

রয়্যাল রিজেন্সির হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। দ্বিতীয় তলাতেও ছিল দর্শকদের ভিড়, সেখান থেকেও অনেকে পিঠা খাওয়ার সাথে সাথে উপভোগ করেন মেলার আয়োজিত সঙ্গীতানুষ্ঠান। শিল্পীরা পরিবেশন করেন নানান লোক ও আধুনিক বাংলা গান, যা অনুষ্ঠানে এনে দেয় উৎসবের রং ও সুরের আবেশ।

বাঙালির ‌পিঠার ঘ্রাণে মুখরিত লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি

পিঠা ও খাবারের স্টল ছাড়াও মেলায় ছিল দেশীয় পোশাক, গয়না ও হস্তশিল্পের দোকান, যা নারী দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সন্ধ্যা নাগাদ পুরো হাই স্ট্রিট নর্থ এলাকার আশপাশ ভরে ওঠে মেলার ভিড়ে, যেন এক টুকরো বাংলাদেশের উৎসব নেমে এসেছে লন্ডনে।

দিনভর উৎসব শেষে আয়োজক ও অতিথিরা জানান, এমন আয়োজন প্রবাসে জন্ম নেওয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রয়্যাল রিজেন্সির আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছিল পিঠার মিষ্টি গন্ধ, হাসির শব্দ, আর বাঙালিয়ানার অদৃশ্য বন্ধন—যা প্রমাণ করে, যত দূরেই থাকি না কেন, আমাদের হৃদয়ের ভেতরেই বেঁচে আছে প্রিয় বাংলাদেশ।

এমআরএম/জেআইএম