ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মরুভূমিতে ছেলের অর্ধগলিত লাশ, পরিবারে শোকের মাতম

জেলা প্রতিনিধি | মাদারীপুর | প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

স্বপ্ন ছিল দেনা পরিশোধের পর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকায় নতুন ঘর তুলবেন। সচ্ছল জীবন-যাপন করবেন। তবে সেই স্বপ্ন নিমিষেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। সৌদি আরবের মরুভূমিতে ছেলের অর্ধগলিত লাশ পাওয়ার সংবাদের পর সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। এখন পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

নিহত সবুজ মাতুব্বর (২৪) মাদারীপুর শিবচরের কাদিরপুর ইউনিয়নের মানিকপুরের মেছেরমোল্লার গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল জলিল মাতুব্বরের একমাত্র ছেলে।

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গত ৮ মাস আগে সৌদি আরব যান তিনি। প্রথমে রিয়াদে যান। পরে কাজের খোঁজে আল কাসিম এলাকায় থাকা শুরু করেন। সেখানে কাজও পেয়ে যান। এরই মধ্যে ধার-দেনা পরিশোধের জন্য টাকাও পাঠাচ্ছিলেন।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয় বাবা জলিল মাতুব্বরের। বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর কথা বলে ফোন রাখেন। ১ তারিখ সকালে টাকা পাঠানোর কথা ছিল। টাকা না আসায় ওই দিন দুপুরে ফোন দিলে ছেলের নম্বর বন্ধ পান। পরে আবার চেষ্টা করেন। অথচ নম্বর বন্ধই থাকে। এভাবে একদিন পার হবার পর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন বাড়িতে থাকা বাবা-মা। এরপর সৌদিতে থাকা অন্যদের কাছ থেকে খবর পান ১ তারিখ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সবুজ।

এদিকে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) সৌদি আরবের আল কাসিম এলাকায় মরুভূমিতে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া এক মরদেহ খুঁজে পায় সৌদি পুলিশ। মরদেহটি সবুজের বলে ধারণা করে সেখানে থাকা অন্য বাঙালিরা। পরে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে এই খবর বাড়িতে পৌঁছালে চলে শোকের মাতম। খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন সবুজের বাড়িতে।

সবুজের চাচা খোকন মাতুব্বর বলেন, ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল সবুজ। নিখোঁজের বিষয়টি সৌদি পুলিশকেও জানানো হয়। সবুজ যেখানে থাকতো তার কাছেই নির্জন মরুভূমিতে বালু আর পাথর চাপা লাশ পায় পুলিশ। লাশ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবুজ যে প্যান্ট ও গেঞ্জি গায়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল, ওই পোশাক দেখে আশপাশে থাকা পরিচিতরা বুঝতে পারে লাশটি সবুজের। আমার ভাই ভ্যান চালিয়ে কষ্ট করে উপার্জন করে। তার একটাই ছেলে। ঋণ করে টাকা জোগাড় করে সবুজকে সৌদি পাঠিয়েছিল। এখন সব শেষ হয়ে গেলো। ছেলেও মারা গেলো আর এই ঋণের টাকাও কীভাবে পরিশোধ করবে।

সবুজের ছোট বোন রিয়ামনি আক্তার বলেন, আমার ভাইয়ের কাছে ৩ লাখ টাকা ছিল। আকামা করার জন্য রেখেছিল। হয়তো ওই টাকার জন্যই আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। সৌদি পুলিশের কাছে দাবি জানাই, তদন্ত করে ভাইয়ের হত্যাকারীকে শাস্তি দেওয়া হোক। আর আমার ভাইয়ের লাশ যেন বাংলাদেশে পাঠায়, যেন শেষ দেখাটা দেখতে পারি।

নিহতের বাবা জলিল মাতুব্বর বলেন, বাড়িতে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে চেয়েছিল। আমার সঙ্গে ওইটাই শেষ কথা। এতদিন নিখোঁজ ছিল। সোমবার ওখানে লাশ পেয়েছে। সৌদি থেকে জানিয়েছে লাশ সবুজের।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান বলেন, এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নেবো। যতটুকু পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এমআরএম/এমএস