বাংলাদেশি পথশিশুদের সহায়তার জন্য পর্তুগালে ফান্ড রাইজিং ডিনার
বাংলাদেশের পথশিশুদের সহায়তার জন্য পর্তুগালে ফান্ড রাইজিং ডিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্তুগাল-বাংলাদেশ সলিডারিটি ডিনার শিরোনামে ইভেন্টটির অায়োজন করে বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো। পর্তুগালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে অায়োজিত এই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পথশিশুদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত মারিয়া ক্রিস্টিনা ফাউন্ডেশন (সাবেক ঢাকা ফাউন্ডেশন) এর প্রতিষ্ঠাতা পর্তুগালের প্রথম এভারেস্ট জয়ী নারী মারিয়া কনসেইসাও।
স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে পোর্তোর জাপানিজ সুসি টাপেন ইয়াকি রেস্টুরেন্টে ইভেন্টে প্রধান অথিতি ছিলেন পোর্তোর স্থানীয় (জইন্তা ফগ্রেসিয়া) সিটি কর্পোরেশন এর প্রেসিডেন্ট এন্তোনিও ফনসেকা। এছাড়াও পোর্তোয় বসবাসরত সকল বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সভাপতি শাহ অালম কাজলের পরিচালনায় ফান্ড রাইজিং ইভেন্টের সূচনা হয়। পোর্তো শহরের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী অাব্দুল অালিম ফাউন্ডেশনের বাচ্চাদের সহায়তায় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া কনসেইসাও এর হাতে এক হাজার ইউরো ক্যাশ প্রদান করেন। এছাড়াও পোর্তোয় বসবাসরত সকল বাংলাদেশি ফাউন্ডেশনের সহায়তায় অার্থিক অনুদান প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, আমিরাত এয়ারলাইনসে বিমানবালা হিসেবে কাজ করার সুবাদে ২০০৩ সালে মারিয়া প্রথম ঢাকায় আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালে এখানে হতদরিদ্রদের অবস্থা দেখে তাদের সহায়তার লক্ষ্যে ২০০৫ সালের জুলাইয়ে পরিবার, সহকর্মী এবং বন্ধুদের সহায়তায় মারিয়া ক্রিস্টিনা ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক কক্ষের একটি স্কুল দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।
শুরুতেই মারিয়া শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষাদানের ওপর মনোযোগ দেন। এ কাজে তিনি চাকরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করেন। এছাড়া অর্থের যোগান দিতে নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ২০০৯ সাল থেকে মারিয়া বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিতায় ২০০৯ সালে ১০ দিনে ৭টি ম্যারাথন, ২০১৩ সালে প্রথম পর্তুগিজ নারী হিসেবে এভারেস্ট জয়, ২০১৪ সালে ৬ সপ্তাহে ৭টি আল্ট্রা ম্যারাথন, গত বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়াসহ চলতি বছর আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে দ্রুততম নারীর খেতাব জয় করেন তিনি।
এ পর্যন্ত ৬টি গিনেসবুক রেকর্ডস নিজের দখলে নিয়েছেন মারিয়া। এছাড়াও ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৭৭৭টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এর মূলে রয়েছে বাংলাদেশের পথশিশুদের খাদ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার জন্য অর্থের জোগান নিশ্চিত করা।
২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় সাড়ে ৮শ’ পথশিশুকে মারিয়া ক্রিস্টিনা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের দেশসেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। এসব পথশিশুর পড়াশোনা, খাওয়া ও বাসস্থানের জন্য জনপ্রতি তাকে বছরে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়।
বর্তমানে মারিয়ার ফাউন্ডেশন থেকে ১২৭ জন শিক্ষার্থী ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ শাখায় বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে। কিন্তু মারিয়ার একার পক্ষে বিপুল অর্থের যোগান দেয়া বর্তমানে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
ফান্ড রাইজিং ডিনারের মাধ্যমে অর্থের যোগান দিতে এমন একটি অায়োজন করায় বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো'র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মারিয়া কনসেইসাও। তিনি বলেন, পর্তুগালে বাংলাদেশের কমিউনিটির সঙ্গে এক হতে পারলে অামার ভালো লাগে। অামি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছি, এদেশের মানুষেরা অন্য সবার মত না। এরা মানুষকে সহজে অাপন করে নেয়, সব সময় সবকিছু উজার করে ভালোবাসে। অামি পর্তুগালের মেয়ে হলেও অামার সব অর্জনে পর্তুগালের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও তুলে ধরেছি। যেকোনো প্রতিযোগিতায় অামি দুটো পতাকা নিয়ে যাই। একটি পর্তুগালের অন্যটি বাংলাদেশের। সুযোগ পেলে অামি বাংলাদেশে নিজের দ্বৈত নাগরিকত্ব পাবার চেষ্টা করবো।
এসএইচএস/এমএস