ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

আমেরিকায় ‘বর্ণ’ ছড়াবে ৭১ এর বীরত্বগাথা

প্রকাশিত: ১০:২৩ এএম, ২২ মার্চ ২০১৬

দূর পরবাসে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আমরা যারা সংসার পেতেছি, তাদের কাছে মা ও মাটির টান উপলদ্ধি করা যায় সহজে। কিন্তু বিদেশে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তানদের কাছে অনেকটাই আজানা বাংলাদেশের বীরত্বের ইতিহাস, সময়ের বিপরীতে হেঁটে জয় ছিনিয়ে আনার গল্প। গৌরবের ইতিহাস প্রবাসে বেড়ে ওঠা সন্তানদের কাছে পৌঁছাতে, ছেলে বুড়ো সবাইকে এক আড্ডায় সামিল করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত হয়েছে এক সংগঠন। গতানুগতিক অন্য সংগঠন থেকে কিছুটা আলাদা এ সংগঠনের পথচলা। ‘বর্ণ’ নামের গড়ে ওঠা অলাভজনক সংগঠনটি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রচেস্টার শহরে নিবন্ধিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও বাঙালির সংস্কৃতি বিদেশ বিভুয়ে বসবাসকারী প্রবাসীদের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য।

amirica

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিশেষ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ‘বর্ণ’ মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক বিশেষ সিনেমা প্রদর্শনী, প্রামাণ্যচিত্র, কবিতা আবৃতি, স্বরচিত কবিতা পাঠ আয়োজন করা হবে বলে জানালেন সংগঠনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ফয়যুল মোমেন ফয়েজ।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্ণ প্রচার করতে যাচ্ছে ১৯৭১ সালের বাল্টিমোরে সচেতন জনসাধারণের প্রতিবাদের উপর নির্মিত ‘ব্লকেড’ নামের প্রামাণ্যচিত্র। ১৯৭১ সালে যখন আমেরিকান সরকার পাকিস্তানকে সামরিক সহযোগিতা করছিল তখন সাধারণ নাগরিক পাকিস্তানি গণহত্যার বিরদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই ওয়াশিংটন ডি সি নিকটবর্তী বাল্টিমোর শহরের পোর্টে জামায়েত হয়ে হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরদ্ধে প্রতিবাদ করেন। পোর্টে অবস্থানরত সচেতন আমেরিকানরা ‘পদ্মা’ নামের সমরাস্ত্রবাহী জাহাজটির চারপাশে অবস্থান নেয়। জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদকারীরা ছোট ছোট নৌকায় জাহাজটি ঘেরাও করে। প্রামাণ্যচিত্রতে দুর্লভ কিছু ভিডিও চিত্র, স্থির চিত্র ও প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীদের স্মৃতিকথা ধারণ করেছেন পরিচালক আরিফ ইউসুফ ও তাসবির ইমাম সাক্ষর। রিচার্ড টেইলরের লেখা বই অবলম্বনে এ নির্মাণ। মিশিগানের রচেস্টার পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ২৩ এপ্রিল প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচার করা হবে।

amirica

ইতোপূর্বে ‘বর্ণ’ মিশিগানের রচেস্টার শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজন করে ‘চলচ্চিত্র ও কবিতা বিকেল’। অনেকটা পরীক্ষামূলক প্রথম আয়োজন ছিল এটি। একাত্তরের যুদ্ধ-শিশুদের নিয়ে শামিম শহীদের নির্মিত শর্ট ফিল্ম ‘Angels of Hell ’ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। পেশায় প্রকৌশলী শামিম শহীদের এটি প্রথম শর্ট ফিল্ম, নির্মাতার নিজের ভাষায়, ‘ছবিটি মূলত মানবতা, ভালবাসা আর শ্রদ্ধানুভূতির একটি কাহিনী’; প্রায় পঁচিশ মিনিটের স্বল্প-দৈর্ঘ্য ছবিটি উপস্থিত সব দর্শকের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়, বিশেষ করে দুজন যুদ্ধশিশু, যারা এখন বড় হয়ে স্ব-স্ব স্থানে অধিষ্ঠিত, তাদের সাক্ষাতকারের মুহূর্তগুলো ছিল খুবই মর্মস্পর্শী! ছবিটি ইতোমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে, তেমনি দেশ-বিদেশ, যেমন কানাডা, ফ্রান্স, ভারত, ইতালি, আরমেনিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকার নামকরা অনেক ফেস্টিভালে দেখানোর আমন্ত্রণও পেয়েছেন।

শর্ট ফিল্মটির প্রদর্শন শেষ হলে শামিম শহীদ নিজের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শোনান দর্শকদের, সাথে জানান তার কিছু ভবিষ্যত পরিকল্পনা, বিশেষ করে বাংলাদেশের ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। চা-নাস্তার বিরতি দিয়ে এরপর শুরু হয় অনুষ্ঠানটির কবিতা পাঠ পর্ব; রাহাত খানের স্বরচিত কবিতা দিয়ে শুরু হওয়া পর্বটিতে অংশ নেন আসিফ সালাহউদ্দিন, শফিক ইসলাম, জাকিরুল হক টুকু, আহমেদ জামি খান এবং ফেরদৌস গাজী। বহুদিন পর বাংলা কবিতার এই ছন্দ-মাধুরী দর্শক-শ্রোতা মনে সুন্দর দাগ কেটে যায়।

প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত ‘নিঃসঙ্গ সারথী’ প্রামাণ্যচিত্রটি দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানটি। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের জীবনীভিত্তিক এই ছবিটি প্রযোজনা করেছেন তারই মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি, যিনি বর্তমান সংসদের একজন সদস্য। প্রায় একশ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রটিতে উঠে এসেছে ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম এবং তৎপরবর্তী পঁচাত্তর অবধি বাংলাদেশের ইতিহাস। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবের সহজ সরল জীবনের নানা ধাপ, তার সততা, একনিষ্ঠতা আর বিশেষ করে একাত্তরে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সবকিছু খুব স্বচ্ছন্দ-সাবলীল ভাবে ফুটে উঠেছে ছবিটিতে, যা উপস্থিত দর্শকদের গভীরভাবে আপ্লুত করে।

প্রয়াত শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছোট ছেলে সাইফ ইমাম জামি (শহীদ রুমীর ছোট ভাই) অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তার আনন্দের কথা ব্যক্ত করেন আর আয়োজকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানান।

amirica

অনুষ্ঠানে আগত এক নারী তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘বার বার আমার দুই ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিল; তারা তখন বয়সে যুবক, পাক হানাদার বাহিনী আর তাদের শত্রুরা একদিন তাদের ধরে নিয়ে যায়, পরে অনেক কষ্টে ছাড়াতে হয় তাদের’!

আবেগে আপ্লুত এক প্রবীণ অতিথি জানান, ‘সবকিছু তো আসলে নিজের চোখ দিয়ে দেখা, মনে হচ্ছিল সেই সময়টায় যেন আবার ফিরে গিয়েছিলাম’! অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি প্রামাণ্যচিত্রে যখন ‘পূর্ব দিগন্তে- সূর্য উঠেছে- রক্ত লাল’ গানটির সুর ভেসে ওঠে, তখন কয়েকজন মধ্যবয়সী দর্শক স্বকণ্ঠেই গেয়ে ওঠেন গানটি। দুই বাংলার প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট জনের মত দর্শক অনেকটা পিন-পতন মনযোগ দিয়ে উপভোগ করেন অনুষ্ঠানটি, যারা এমন অনুষ্ঠান যেন আরো দেখতে পান ভবিষ্যতে, তার আশা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠান শেষে।

ব্যতিক্রমধর্মী এ নান্দনিক অনুষ্ঠানটি আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন আহমেদ জামি খান, ইমরান হোসাইন, জিয়া হক, সালাহউদ্দিন আজিজ, আবু আশরাফ, শাহরিয়ার আহমেদ, রাহাত খান, শামিম শহীদ ও ফয়যুল মোমেন ফয়েজ। আগত অতিথিদের বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুষ্ঠান, বিশেষ করে বাঙালি মন-মানসের সংগ্রামী ও অদম্য সংস্কৃতি আরো বেশি করে তুলে ধরার আগ্রহ ব্যক্ত করেন ফয়যুল মোমেন ফয়েজ।

‘বর্ণ’ সংগঠনটির প্রথম আয়োজন সফল হওয়ায় আয়োজকগণ বেশ আশাবাদী। ভবিষ্যতেও সকলের অংশগ্রহণ ও সমর্থন আশা করেন।

এসএইচএস/এবিএস