ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যে ঘটনায় বদলে গিয়েছিল হজরত হামজার (রা.) জীবন

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২৫

হজরত হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.) ছিলেন মহানবি মুহাম্মাদের (সা.) চাচা এবং একইসঙ্গে তার দুধভাই। তিনি মক্কার অন্যতম বীরযোদ্ধা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার বাবা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন কাবার তত্ত্বাবধায়ক ও মক্কার সম্মানিত নেতা। ইসলামের আবির্ভাবের সময় আবু তালিবের পাশাপাশি হামজাও বনু হাশিমের নেতৃস্থানীয় ও মক্কার অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।

নবিজির (সা.) নবুয়্যতের তৃতীয় বছরে আল্লাহ তাআলা নবিজিকে (সা.) তার আত্মীয়দের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক কর।’ (সুরা শুআরা: ২১৪) এরপর নবিজি (সা.) আনুষ্ঠানিকভাবে তার সব আত্মীয়দের ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। তখন নবিজির (সা.) চাচা আবু তালিব, হামজা ও আব্বাস নবিজিকে (সা.) সুরক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্তে একমত হন। ইসলাম প্রচারের কারণে নবিজির (সা.) ওপর যে কোনো আঘাত আসলে তা মোকাবেলা করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তারা ইসলাম গ্রহণ করেননি।

নবিজি (সা.) তার আত্মীয়দের সমবেত করে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলে আবু তালিব বলেছিলেন, আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চাই, তোমার উপদেশ গ্রহণ করি এবং তোমার বক্তব্য সত্য মনে করি। তোমার চাচারা এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ, আমিও তাদের অন্যতম। তাই তোমাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে পথে এগিয়ে যাও। আল্লাহর কসম! আমরা তোমাকে সুরক্ষা দেবো এবং তোমার ওপর আসা যে কোনো আঘাত প্রতিহত করবো। তবে আমার অন্তর আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম ছাড়তে সায় দেয় না। (কামেল লিইবনে আসীর: ২৭/২)

যে ঘটনায় বদলে গিয়েছিল হজরত হামজার (রা.) জীবনএ পাহাড়ের একটি গুহায় নবিজির (সা.) ওপর প্রথম কোরআন অবতীর্ণ হয়।

হামজা ও আব্বাসের অবস্থানও এরকমই ছিল। তারা নবিজিকে (সা.) সমর্থন ও সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তখনই পিতৃপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

নবুয়্যতের ষষ্ঠ বছর পর্যন্ত হামজা (রা.) এই অবস্থানেই ছিলেন। নবুয়্যতের ষষ্ঠ বছরের শেষ দিকে একটি ঘটনায় তার চিন্তা-ভাবনা বদলে যায়। তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

ঘটনাটি হলো, একদিন মক্কার মুশরিকদের অন্যতম সর্দার আবু জাহল নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফা পাহাড়ের কাছে পেয়ে তাকে নানা রকম মন্দ কথা বলেন ও গালিগালাজ করেন। নবিজি (সা.) কোনো জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন। তবুও আবু জাহল নিরস্ত হন না। তিনি নবিজির (সা.) দিকে একটি পাথর ছুঁড়ে মারেন। পাথরের আঘাতে নবিজির (সা.) মাথা ফেটে যায় এবং রক্ত ঝরতে থাকে।

মক্কার দাসী সাফা পাহাড়ের ওপরে তার ঘর থেকে এই দৃশ্যটি দেখতে পান। কিছুক্ষণ পর হামজা (রা.) শিকার থেকে ফিরছিলেন, তার কাঁধে ছিল ধনুক। ওই দাসী তাকে সামনে পেয়ে ঘটনাটি তাকে বলেন যে, আবু জাহল এভাবে আপনার ভাতিজাকে গালিগালাজ করেছেন, আঘাত করেছেন, কিন্তু আপনার ভাতিজা কিছুই বলেননি।

ঘটনার শুনে হামজা (রা.) ভীষণ রেগে যান। তিনি তখনই আবু জাহলকে খুঁজতে খুঁজতে কাবায় পৌঁছেন এবং সেখানে সবার সামনেই ধনুক দিয়ে আবু জাহলের মাথায় আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দেন এবং বলেন, তুমি আমার ভাতিজাকে গালি দাও—অথচ আমিও তার ধর্ম অনুসরণ করি! সে যা বলে আমিও তাই বলি!

যে ঘটনায় বদলে গিয়েছিল হজরত হামজার (রা.) জীবনকাবা ও মসজিদুল হারাম

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবু জাহলের গোত্র বনু মাখজুমের কিছু লোক আবু জাহলের সমর্থনে এগিয়ে আসে, বনু হাশিমের কিছু লোক হামজার সমর্থনে এগিয়ে আসে। কিন্তু আবু জাহল বলে, আবু উমারাহকে (হামজা) ছেড়ে দাও! আমি আসলেই তার ভাতিজাকে খুব বাজে ভাষায় গালি দিয়েছিলাম।

আবু জাহল জানতো হামজা তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। তার ভয় ছিল, এ বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হামজা হয়তো সত্যি সত্যি ইসলাম গ্রহণ করবেন।

হামজা (রা.) কাবা থেকে নিজের ঘরে ফিরে যান এবং ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে ভাবতে থাকেন। শয়তান তাকে মন্ত্রণা দেয় যে, তুমি তো কোরাইশের নেতা, তুমি কেন একজন ধর্মত্যাগীকে অনুসরণ করবে? কেন পিতৃপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করবে?

হামজা (রা.) বলেন, হে আল্লাহ! যদি এটা সঠিক পথ হয়, তবে আমার অন্তরে এর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করে দাও। আর যদি এটি ভুল হয়, তবে আমি যে অবস্থায় পড়েছি, তা থেকে আমাকে পরিত্রাণ দাও।

সেই রাত তিনি মানসিক দ্বন্দ্ব ও দ্বিধা নিয়ে কাটান।

পরদিন সকালে তিনি নবিজির (সা.) কাছে গিয়ে বলেন, ভাতিজা, আমি এমন এক ঝামেলায় পড়ে গেছি যা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। কোনটা সঠিক, কোনটা ভ্রান্তি বুঝতে পারছি না। তুমি আমাকে কিছু বলো।

নবিজি (সা.) তাকে ইসলামের বিশ্বাস সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন, আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করেন এবং জান্নাতের সুসংবাদও দেন। নবিজির (সা.) কথায় তার অন্তর প্রশান্ত হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি সত্যবাদী। ভাতিজা, তোমার ধর্মকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দাও। আল্লাহর কসম! আকাশের নিচে যা কিছু আছে সব কিছুর বিনিময়েও আমি আর আগের ধর্মে থাকতে প্রস্তুত নই।

হামজার (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের প্রভাব ও শক্তি অনেক বেড়ে যায়। মুশরিকদের নির্যাতনের ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে পারছিলেন বা ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন করে রেখেছিলেন এমন অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন, ইসলামের কথা প্রকাশ করেন।

সূত্র: সিরাতে ইবনে ইসহাক, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

ওএফএফ/এএসএম

আরও পড়ুন