ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে কৃপণতা ও অতিব্যয়

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২৫

মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী তার ওপর কিছু অর্থনৈতিক দায়িত্ব আসে। এর মধ্যে কিছু আবশ্যিক দায়িত্ব, কিছু ঐচ্ছিক দায়িত্ব। নিজের স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা, তাদের জরুরি প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করা, বাবা-মা অসহায় ও সম্পদহীন হলে তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ফরজ বা আবশ্যিক দায়িত্ব, সামর্থ্যবান হলে নিজের সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ বা আবশ্যিক দায়িত্ব।

এ ছাড়া নিজের অন্যান্য অভাবী আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মীদের সাধ্য মতো খোঁজ খবর রাখা, সামাজিক কল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি ঐচ্ছিক দায়িত্ব, বিশেষ পেক্ষাপটে আবশ্যিক দায়িত্বও হয়ে উঠতে পারে।

কেউ যদি নিজের ফরজ-ওয়াজিব বা আবশ্যিক কর্তব্যগুলো পালন না করে বা এ ক্ষেত্রে গড়িমসি ও অবহেলা করে, সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা না করে, কল্যাণমূলক কাজকর্মের ব্যয়ে অংশগ্রহণ না করে, শরিয়তের দৃষ্টিতে সে কৃপণ বিবেচিত হয়। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ও হাদিসে কৃপণতাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও মন্দ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে কৃপণতা ও অতিব্যয়

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না আর উত্তম আচরণ কর বাবা-মায়ের সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, এতিম, মিসকিন, আত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়- প্রতিবেশী, সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়; আর গোপন করে তা, যা আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে দান করেছেন। আমি প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আজাব। (সুরা নিসা: ৩৬, ৩৭)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদেরকে দিয়েছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর, তারা যাতে কৃপণতা করেছে, কেয়ামতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। আসমান ও জমিনের ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই। তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত। (সুরা আলে ইমরান: ১৮০)

অতিব্যয় থেকেও বাঁচতে হবে

কৃপণতা থেকে যেমন বাঁচতে হবে, অতিব্যায়ও করা যাবে না। দান-সদকাসহ সব ব্যয়ের ক্ষেত্রেই মধ্যপন্থা অলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আদর্শ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। (সুরা ফুরকান: ৬৭)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। (সুরা ইসরা: ২৯)

অপচয়কারীদের ‘শয়তানের ভাই’ ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, আত্নীয়স্বজনকে তার হক প্রদান করো, আর মিসকিন ও মুসাফিরকেও। তবে অপচয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তো তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ ছিল। (সুরা ইসরা: ২৬, ২৭)

ইসলামের দৃষ্টিতে কৃপণতা ও অতিব্যয়ছবি: সংগৃহীত

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ফসল কাটার দিন তার হক দিয়ে দাও, কিন্তু অতিরিক্ত করো না, নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আনআম: ১৪১)

একজন সাহাবি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও আখেরাতের মুক্তির জন্য নিজের প্রচুর সম্পদ দান বা ওয়াকফ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে নবিজি (সা.) তাকে বলেছিলেন, এক-তৃতীয়াংশ দান বা ওয়াকফ করুন, এক-তৃতীয়াংশও অনেক। আপনি যদি আপনার ওয়ারিশদের স্বচ্ছল অবস্থায় ছেড়ে যান এটা আপনার জন্য উত্তম তাদের এত দরিদ্র অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে যে তার মানুষের কাছে হাত পাতবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে আপনি পরিবারের জন্য যে খরচ করেন, তাতেও আপনাকে সাওয়াব দেয়া হয়। আপনি আপনার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দেন, তাতেও আপনাকে সওয়াব দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৩৯৩৬)

ওএফএফ/এএসএম

আরও পড়ুন