ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ ও পরিণতি

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০৬:৫৭ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

মুনাফিক কাকে বলে?

‘মুনাফিক’ শব্দের অর্থ প্রতারক বা কপটচারী ব্যক্তি। ইসলামে মুনাফিক হলো ওই ব্যক্তি যে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, ইসলাম পালন করে, কিন্তু অন্তরে কুফরি লালন করে।

কোরআনে মুনাফিকের বিশ্বাস ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

কোরআনে আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন:

“মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।

তারা আল্লাহ এবং ইমানদারদের ধোঁকা দেয়। অথচ এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। কিন্তু তারা তা অনুভব করতে পারে না।

তাদের অন্তর ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। মিথ্যাচারের কারণে তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আজাব।

যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।

মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যরা যেভাবে ইমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ইমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ইমান আনব নির্বোধদের মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা বোঝে না।

আর তারা যখন ইমানদারদের সাথে মেশে, তখন বলে, আমরা ইমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সঙ্গে) উপহাস করি মাত্র।

বরং আল্লাহই তাদের সঙ্গে উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার সুযোগ দেন।

এরাই তারা, যারা হেদায়াতের বদলে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।”

(সুরা বাকারা: ৮-১৬)

আল্লাহ এখানে মুনাফিকদের চার ধরনের খারাপ কাজ ও স্বভাব বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেকটা প্রকারই শাস্তির উপযুক্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

১. মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করা। মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া।

২. মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে, অপপ্রচার চালিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।

৩. ইমান, অন্তরের বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও সে অনুযায়ী নেক কাজ থেকে দূরে থাকা।

৪. আল্লাহর অবাধ্যতায় সীমালঙ্ঘন করা ও প্রকৃত মুসলমানদের নির্বোধ বলে অপবাদ দেওয়া। অথচ নির্বোধ তারা নিজেরাই। যারা সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখার পরও সত্য থেকে দূরে থাকে, সত্যের অনুসারীদের নির্বোধ বলে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সামান্য সুখের বিনিময়ে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখময় জীবন বিক্রি করে দেয়, যারা আল্লাহর প্রেরিত রাসুলের সাথে শত্রুতার করে প্রকারান্তরে আল্লাহর সাথে শত্রুতায় নেমে যায় নিঃসন্দেহে তারা নির্বোধ।

এ আয়াতগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি মুনাফিকরা কাফেরদেরই একটি অংশ। তারা শুধু মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য বলে, আমরা মুসলমান। কিন্তু কাফেরদের কাছে গেলে তারা নিজেদের প্রকৃত বিশ্বাস প্রকাশ করে এবং বলে, আমরা ওদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিজেদের মুমিন বলেছি, আমরা আসলে তোমাদেরই দলে।

মুনফিকের পরিণতি

মুনাফিকদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:

নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সুরা নিসা: ১৪৫)

অর্থাৎ তারা যেহেতু কাফের, তাই কাফেরদের মতো তারা চিরজাহান্নামি তো হবেই, কপটতা ও প্রতারণার কারণে অন্যান্য কাফেরদের চেয়ে তাদের শাস্তি বেশি হবে। জাহান্নামে তারা সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।

মুনাফিকের লক্ষণ ও কর্মগত মুনাফিক

কোরআনে যে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে, এদেরকে আমরা প্রকৃত বা বিশ্বাসগত মুনাফিক বলতে পারি।

এ ছাড়া হাদিসে মহানবী (সা.) কিছু কাজের কথা উল্লেখ করেছেন মুনাফিকের আলামত বা লক্ষণ হিসেবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুনাফিকের আলামত হলো তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখলে খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারি: ৩৩, সহিহ মুসলিম: ৫৯)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ঝগড়া হলে অকথ্য গালি দেয়, চুক্তি করার পর বিপরীত কাজ করে। (সহিহ মুসলিম: ৫৮, সুনানে নাসাঈ: ৫০২০)

এই লক্ষণগুলো কারো মধ্যে দেখা গেলেই সে প্রকৃত মুনাফিক গণ্য হয় না যদি সে বিশ্বাসগত ওপরে বর্ণিত মুনাফিকদের মতো না হয়, কাফের না হয়। তবে তাকে আমল বা কর্মগত মুনাফিক বলা যেতে পারে।

মুমিনদের কর্তব্য মুনাফিকদের লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লিখিত এসব কাজ থেকে দূরে থাকা।

ওএফএফ

আরও পড়ুন