ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

কোরআনের আলোয় মক্কার মুশরিকদের বিশ্বাস ও শিরক

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

মক্কায় মহানবী (সা.) যখন নবুয়্যত লাভ করলেন, মানুষের কাছে আল্লাহর বার্তা নিয়ে এলেন, তখন মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাসহ বেশিরভাগ মানুষই মুশরিক ছিল। কিন্তু মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে পুরোপুরি অস্বীকার করত না। তারা সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও আশ্রয়দাতা হিসাবে আল্লাহকে স্বীকার করতো। এরপরও তারা মুশরিক ছিল কারণ তারা আল্লাহর সাথে অন্য দেব-দেবীদের মূর্তির পূজা করতো। তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ও ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই মূর্তিগুলো আল্লাহর নৈকট্যের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ ও দুঃখ-দূর করতে পারে।

অর্থাৎ তাদের বিশ্বাসে আল্লাহর প্রতি ইমান থাকলেও তাতে শিরকের সংমিশ্রণ ছিল। তারা সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসাবে আল্লাহকে মানলেও আল্লাহকে এক ইলাহ ও এক উপাস্য হিসেবে মানত না। তারা তাওহীদুল উলুহিয়াত বা ইলাহের একত্ব মেনে চলত না।

এ ছাড়া ভাগ্য পরীক্ষার জন্য তীর নিক্ষেপ, নক্ষত্রের ওপর ভরসা করা, তাবিজ, কবজ ব্যবহার করাসহ বেশ কিছু শিরকি রীতিনীতি তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।

মহানবী (সা.) যখন তাদেরকে শিরক ত্যাগ করে শুধু এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিলেন, বাপ-দাদার কাছ থেকে পাওয়া কুসংস্কার ও রীতিনীতি বাদ দিয়ে আল্লাহর পাঠানো জীবনবিধান মেনে নেওয়ার দাওয়াত দিলেন, তখন তাদের অনেকেই তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল।

পবিত্র কোরআনের সুরা মুমিনুনে মক্কার কাফেরদের ইমান ও শিরকের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন, (হে নবী) বল,তোমরা (মক্কার মুশরিকরা) যদি জান তবে বল, এই জমিন ও এতে যারা আছে তারা কার? তারা বলবে, আল্লাহর । বল,তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? বল, কে সাত আসমানের রব এবং আরশের রব? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না? বল, তিনি কে যার হাতে সব কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার ওপর কোনো আশ্রয়দাতা নেই? যদি তোমরা জান। তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কীভাবে তোমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছ? (সুরা মুমিনুন: ৮৪-৮৯)

সুরা যুখরুফে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তুমি যদি জিজ্ঞাসা কর,আসমানসমূহ ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞই কেবল এগুলো সৃষ্টি করেছেন। (সুরা যুখরুফ: ৯)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। তবু তারা কীভাবে বিমুখ হয়? (সুরা যুখরুফ: ৮৭)

সুরা ইউনুসে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, বল, আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিজিক দেন? অথবা কে তোমাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। তুমি বল, তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না? তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব। সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? অতএব কোথায় তোমাদেরকে ঘোরানো হচ্ছে? এভাবে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের ব্যাপারে তোমার রবের কথা সত্য সাব্যস্ত হয়েছে যে, তারা ইমান আনবে না। (সুরা ইউনুস: ৩১-৩৩) 

এ আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, আরশের অধিপতি ও মহাবিশ্বের পরিচালক হিসেবে স্বীকার ও বিশ্বাস করত। এরপরও যেসব বিশ্বাস ও কাজের তারা কাফের ও সত্য প্রত্যাখ্যানকারী হিসেবে গণ্য হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেছেন, তা হলো:

  • আল্লাহর সাথে অন্যান্য দেবতার মূর্তির পূজা করা।
  • অন্যান্য দেবদেবীদের আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত হিসেবে কিছু ভালো-মন্দের মালিক ও আল্লাহর ক্ষমতার শরিক মনে করা।
  • মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম) কাছে প্রেরিত আল্লাহর আদেশ ও বিধান প্রত্যাখ্যান করা। ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ না করা।
  • পূর্বপুরুষদের রীতিনীতি ও কুসংস্কারে আটকে থাকা, ইত্যাদি।

আমাদের কর্তব্য এই ইতিহাস ও পবিত্র কোরআনের উল্লিখিত আয়াতগুলোর আলোকে নিজেদের বিশ্বাস ও কাজের বিচার করা। বর্তমান যুগেও আমাদের কারও অবস্থা যদি মক্কার মুশরিকদের মত হয়, আমরা যদি আল্লাহ তাআলাকে সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসেবে স্বীকার করেও, রব হিসেবে স্বীকার করেও আল্লাহ ছাড়া অন্য বিভিন্ন স্বত্ত্বার (যেমন পীর, ফকির, সুফী, আলেম, ওলী) পূজা করি, তাদের কবরে সিজদা করি, তাদেরকে নিজেদের ভালো-মন্দের মালিক মনে করি, তাহলে কি আমরা আল্লাহর কাছে মুসলিম গণ্য হব? আমরা কি আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হব না?

একইভাবে আমরা যদি আল্লাহকে রব মেনেও তার প্রেরিত দ্বীন ইসলামকে সামগ্রিকভাবে নিজেদের জীবনবিধান হিসেবে বিশ্বাস ও গ্রহণ না করি, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে মুসলিম হব না। বরং মুসলিম হতে চাইলে আল্লাহকে একমাত্র রব ও ইলাহ হিসেবে বিশ্বাস করার পাশাপাশি তার প্রেরিত দ্বীনকে মনে প্রাণে নিজের জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে ও যথাসাধ্য পালন করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের তওফিক দান করুন!

ওএফএফ

আরও পড়ুন