ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

কোরআনে হেদায়াতের দুই অর্থ

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০৫:৩০ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

সুরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, এই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত (সুরা বাকারা: ২) অর্থাৎ এই কোরআনে মুত্তাকিদের জন্য দিকনির্দেশনা রয়েছে এবং এতে তাদের পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ ও সফলতার জন্য পথনির্দেশ রয়েছে। আবার আমরা একই সুরায় রোজার ফরজিয়তের আলোচনায় আল্লাহ তাআলা কোরআনের গুণবলীর বর্ণনায় বলেন, এটি মানুষদের জন্য হেদায়াত। (সুরা বাকারা: ১৮৫)

এই দুই আয়াতের প্রথম আয়াত থেকে মনে হয়, কোরআনের হেদায়াত যেন শুধু মুত্তাকিদের জন্য নির্দিষ্ট; আর দ্বিতীয় আয়াতে হেদায়াতকে সবার জন্য ব্যাপক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ‘মানুষ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে—যা মুত্তাকী, অমুত্তাকী, মুমিন ও অবিশ্বাসী সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে।

এই দুই আয়াত পড়ে সাধারণ দৃষ্টিতে কোরআনের একজন পাঠকের কাছে মনে হতে পারে যে, এই দুই আয়াতের বক্তব্যের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু মূল ব্যাপার হলো, এই দুই আয়াতে ‘হেদায়াত’ শব্দটি দুই অর্থে এসেছে। কোরআনের ব্যাখ্যাকার ও আলেমগণ বলেন, উল্লিখিত দুটি আয়াতসহ কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে হেদায়াত দুই অর্থে এসেছে:

১. হেদায়াত অর্থ: সঠিক পথ কোনটি তা বর্ণনা করা এবং সেদিকে মানুষকে ডাকা 

হেদায়াতের এক অর্থ হলো, সঠিক পথ কোনটি তা বর্ণনা করা এবং সেদিকে মানুষকে ডাকা যা নবীগণ করেছেন, আলেম ও দাঈগণ করে থাকেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, প্রত্যেক জাতির জন্য একজন হেদায়াতকারী রয়েছে। (সুরা রা'দ: ৭) এখানে নবী ও দাঈগণকে হেদায়াতকারী বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রত্যেক জাতির মধ্যে আল্লাহ তাআলা কিছু মানুষকে হেদায়াতের জন্য নিয়োজিত রাখেন যারা তাদেরকে সত্যের দিকে আহ্বান করেন ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেন। একই অর্থে আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেছেন, তুমি অবশ্যই সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করো। (সুরা শুরা:৫২) এখানে আল্লাহ তাআলা নবী ও তাদের অনুসারী দাঈগণের দিকে হেদায়াতকে সম্পৃক্ত করেছেন যার মানে হচ্ছে দিকনির্দেশনা ও দাওয়াত দেওয়া।

২. হেদায়াত অর্থ: সঠিক পথ গ্রহণের তওফিক দেওয়া ও তাতে অবিচল রাখা 

হেদায়াতের আরেক অর্থ হলো, সঠিক পথ গ্রহণ করার তওফিক দেওয়া এবং তাতে অবিচল রাখা যা একমাত্র আল্লাহর তাআলার পক্ষে সম্ভব। যেমন আল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেছেন, তুমি যাকে ভালোবাসো, তাকেই হেদায়াত দিতে পারবে না, বরং আল্লাহ যাকে চান, হেদায়াত দেন। (সুরা কাসাস:৫৬)। এই হেদায়াত হলো প্রকৃত হেদায়াত, যে হেদায়াতের মাধ্যমে মানুষ ঈমান গ্রহণ করে এবং মুত্তাকিদের পথ অবলম্বন করে। একই অর্থে আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনি যাকে ইচ্ছা, হেদায়াত দেন (সুরা ইউনুস:২৫)

আরও পরিষ্কারভাবে বললে কোরআনের আয়াতগুলোতে হেদায়াত দুই ধরনের:

১. সাধারণ বা ব্যাপক হেদায়াত; এর মানে হলো, সঠিক পথ দেখানো, সত্য ও কল্যাণের পথ সঠিকভাবে বর্ণনা করা। এই অর্থে এসেছে এই আয়াত: আর সামুদ জাতিকে আমি হেদায়াত দিয়েছি। (সুরা ফুসসিলাত: ১৭) অর্থাৎ তাদের সামনে সত্য-মিথ্যার পথ স্পষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু তারা মিথ্যার পথই বেছে নিয়েছে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, তারা হেদায়াতের বদলে অন্ধকারকে প্রাধান্য দিয়েছে। (সুরা ফুসসিলাত: ১৭) একই অর্থে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তাকে দুইটি পথের হেদায়াত দিয়েছি। (সুরা বালাদ:১০) অর্থাৎ স্পষ্ট করেছি কোনটি ভালো ও কোনটি মন্দের পথ।

২. বিশেষ হেদায়াত; এর মানে হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাকে তওফিক দেওয়া, তার অন্তরকে খুলে দেওয়া, যাতে সে সত্যের পথে চলে এবং সফলতা অর্জন করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এরাই সেইসব মানুষ যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দিয়েছেন। (সুরা আনআম:৯০) একই অর্থে আল্লাহ তাআলা বলেন, যাকে আল্লাহ হেদায়াত দিতে চান, তার বুক ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রশস্ত করে দেন। (সুরা আনআম: ১২৫)

এই ব্যাখ্যা জানার পর আপনার বুঝতে আর অসুবিধা হবে না, কেন কিছু আয়াতে হেদায়াতকে মুত্তাকিদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, আর কিছু আয়াতে তা সাধারণভাবে মানুষের জন্য বলা হয়েছে। এভাবে আপনি এই দুই আয়াতের দ্বন্দ্বও বুঝে নিতে পারবেন: আল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেন, তুমি যাকে ভালোবাসো, তাকে হেদায়াত দিতে পারো না। (সুরা কাসাস: ৫৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেন, নিশ্চয়ই তুমি সঠিক পথের হেদায়াত দাও। (সুরা শুরা: ৫২) এখানে প্রথম আয়াতে যে হেদায়াত নবীর হাতে নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হচ্ছে বিশেষ হেদায়াত যা শুধুমাত্র আল্লাহর হাতে। আর দ্বিতীয় আয়াতে যে হেদায়াত রাসুলের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তা হচ্ছে সাধারণ হেদায়াত অর্থাৎ, সত্যের পথ দেখানো, যা রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্ণরূপে করেছেন। তিনি তার উম্মতকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন; যারা তার দেখানো পথ গ্রহণ করেছে, তারা আল্লাহর দ্বীন পেয়েছে, যারা পত্যাখ্যান করেছে, তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

সূত্র: ইসলাম ওয়েব

ওএফএফ

আরও পড়ুন