ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ইসলামে পুরুষের বিয়ের যোগ্যতা

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

মওলবি আশরাফ

আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে তারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। নারী ও পুরুষের প্রকৃতিগত পার্থক্যই মূলত পরস্পরের পরিপূরক হওয়ার পথ তৈরি করছে। কোরআনে বিষয়টাকে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, তোমরা একে অপরের অংশ। (সুরা আলে ইমরান: ১৯৫)

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী অবিবাহিত নারী ও পুরুষ কর্পদকশূন্য মিসকিনের মতো, যদিও তাদের অঢেল ধন-সম্পদ থাকে। (বাইহাকি ফি শুআবিল ইমান: ৫০৯৭) তাদের মধ্যে পরিপূর্ণতা তখনই আসে—যখন তারা আল্লাহর নামে একে অপরকে গ্রহণ করে। আর এই গ্রহণের ধর্মসম্মত ও সামাজিক পদ্ধতিকেই বলা হয় বিবাহ।

বিবাহের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, বংশরক্ষা এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্য থেকে এটি একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার এবং তিনি তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (সুরা রূম: ২১)

তবে বিয়ে করার জন্য নারী ও পুরুষ উভয়কেই বিয়ের যোগ্য হতে হয়। এখানে আমরা হাদিসের আলোকে পুরুষের বিয়ের যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করব।

পুরুষ কখন বিবাহের যোগ্য হয়?

হাদিস থেকে বোঝা যায়—একজন পুরুষ তখনই বিয়ের যোগ্য হয়, যখন সে একজন নারীর দায়িত্বগ্রহণের যোগ্য হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) যুবকদের বলেন, তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের (অর্থনৈতিক ও শারীরিক) সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা যৌনচাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করে। (সহিহ বুখারি: ৫০৬৫)

আরেকটি হাদিসে বিয়েকে ‘সম্পদশালী’ হওয়ার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন : 

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ‘যু-তওল’ (অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ দেওয়ার মতো সম্পদশালী), সে যেন বিয়ে করে, কারণ তা দৃষ্টিকে অবনতকারী এবং লজ্জাস্থানের অধিক হেফাজতকারী। আর যে ব্যক্তি সম্পদশালী নয়, সে যেন রোজা রাখে; কারণ রোজা তার জন্য ঢালস্বরূপ। (সহিহুল জামে: ৬৪৯৮)

দুটো হাদিসেই বিয়ের জন্য সামর্থ্যবান বা সম্পদশালী হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সামর্থ্য না থাকলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য রোজা রাখতে বলা হয়েছে। কারণ সম্পদ না থাকলে কেউ যথাযথভাবে দায়িত্বগ্রহণ করতে পারবে না। বিয়ের উদ্দেশ্য স্রেফ যৌনতা নয়, বরং এর সঙ্গে স্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ, সন্তানের জন্ম ও তার প্রতিপালনসহ অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে।

প্রাপ্তবয়স্ক হলে পুরুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণবোধ করে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হলেও দায়িত্ব গ্রহণের উপযুক্ত না হলে পুরুষ বিয়ের যোগ্য হয় না। তাই এই অবস্থায় তার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নিজেকে তৈরি করা উচিত।

বিয়ে করে ফেলার পর দায়িত্বে অবহেলা বা ব্যর্থতা ইসলামে অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, আমি দুই শ্রেণির দুর্বলের অধিকারের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করছি: এতিম ও নারী। (সহিহুল জামে: ২৪৪৭)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল, আর প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।… একজন পুরুষ—সে তার পরিবারের দায়িত্বশীল, আর তার পরিবারের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। (মুসনাদে আহমদ: ৫১৬৭)

এ ছাড়া বিদায় হজের ভাষণেও রাসুল (সা.) নারীর প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সর্বাধিক সচেতনতা অবলম্বন করার নসিহত করেছেন। (সুনানে তিরমিজি: ১১৬৩)

অকারণে তালাক দেওয়া নিন্দনীয়

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা শুধুমাত্র নতুন নতুন নারীদেহের স্বাদ নিতে বিয়ে করে, এবং ছোটখাটো দোষ দেখিয়ে তালাক দিয়ে দেয়। এ ধরনের কাজ করতে হাদিসে খুব স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা এমন নর-নারীকে পছন্দ করেন না, যারা স্বাদ নিতে একের পর এক বিয়ে করে। (মুসনাদে বাযযার: ৩০৬৪)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, আপনারা দোষ ছাড়া নারীদের তালাক দেবেন না। আল্লাহ এমন নারী ও পুরুষকে পছন্দ করেন না যারা একের পর এক বিয়ে করে ও তালাক দেয়। (জাওয়ামিউস সগির: ৯৮২৫)

এই হাদিসের উদ্দেশ্য এও নয় যে—দোষ থাকলেই তালাক দেওয়া যাবে। বরং ইসলামের মূল আকাঙ্ক্ষা হলো তালাক না দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আর একসাথে থাকতে গেলে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের দোষত্রুটি নজরে পড়বেই। মানুষ হিসেবে কেউ দোষের ঊর্ধ্বে না। স্ত্রীর কাছ থেকে যদি কোনো দোষ প্রকাশও পায়, এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা হুকুম হলো ধৈর্যধারণ করা এবং সংসার চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছো। (সুরা নিসা: ১৯)

ওএফএফ

আরও পড়ুন