ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)

ওমর ফারুক ফেরদৌস | প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

নবীজি (সা.) তখন মক্কায় ইসলাম প্রচার করছিলেন। হজের মৌসুমে মক্কায় আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হজের জন্য মানুষ আসতো। তাদেরকেও তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। একবার হজের মৌসুমে আকাবা নামক স্থানে মদিনার খাযরাজ গোত্রের সাত ব্যক্তির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তারা তখন মূর্তিপূজা করত। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। এর আগে তারা মদিনায় বসবাসরত ইহুদিদের কাছ থেকে আল্লাহর রাসুলের (সা.) সম্পর্কে শুনেছিল এবং জানতে পেরেছিল যে তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী। এ কারণে তারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে।

তারা মদিনায় ফিরে গিয়ে আল্লাহর রাসুলের (সা.) বার্তা প্রচার শুরু করে। পরের বছর মদিনার বারো জন ব্যক্তি নবীজির (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন এবং আকাবায় তার হাতে বায়আত (অঙ্গীকার) করেন। এটিই ছিল আকাবার প্রথম বায়আত। তাদের সঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) মুসআব ইবনে ওমায়েরকে (রা.) পাঠালেন তাদের কোরআন শেখানো ও ইসলামি শিক্ষা প্রদান করার জন্য। মুসআব (রা.) মদিনায় আসআদ ইবনে জুরারার (রা.) মেহমান হন।

মুসআবের (রা.) মদিনায় আগমনের খবর শুনে মদিনার বড় গোত্র আওসের সর্দার সাদ ইবনে মুআয ও উসাইদ ইবনে হুযাইর তার সঙ্গে দেখা করতে যান। প্রথমে উসাইদ (রা.) গিয়েছিলেন মুসআবকে ইসলাম প্রচারে বাধা দিতে। কিন্তু মুসআবের কথা শুনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে সাদ ইবনে মুআযও (রা.) মুসআবের (রা.) কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে শোনেন এবং তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণের পর সাদ (রা.) তার গোত্রের সবাইকে সমবেত করে বলেন, হে বনু আবদিল আশহাল, তোমরা জানো আমি তোমাদের মধ্যে কেমন ব্যক্তি? তারা বলল, আপনি আমাদের সর্দার এবং আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। সাদ (রা.) বললেন, তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের পুরুষ ও নারীদের সঙ্গে কথা বলা আমার জন্য হারাম যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসুলের প্রতি ইমান আনো।

সেদিন সন্ধ্যার মধ্যেই আওস গোত্রের সবাই ইসলাম গ্রহণ করে। সাদ ইবনে মুআযের (রা.) ইসলাম গ্রহণ ছিল মদিনায় ইসলামের দাওয়াতের জন্য একটি বড় বিজয়। এরপর দ্রুত মদিনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে মদিনার প্রায় প্রতিটি ঘরে ইসলামের আলো পৌঁছে যায়।

মক্কায় তখন মুশরিকদের সঙ্ঘবদ্ধ অত্যাচার নির্যাতনে মুসলমানদের অবস্থা বিপর্যস্ত। নবীজির (সা.) দীর্ঘ ১৩ বছরের ইসলাম প্রচারের পরও মক্কার বেশিরভাগ মানুষ বিশেষত মক্কার নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বেশিরভাগ ইমান গ্রহণ করেনি। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ আসে। মুসলমানরা ধীরে ধীরে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়া শুরু করেন।

মক্কার কফেররা যখন বুঝতে পারে মুসলমানরা মদিনায় চলে যাচ্ছে, নবীজিও মদিনায় চলে যাবেন, তখন তারা নবীজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। এক রাতে তারা নবীজির বাড়ি ঘিরে রাখে। নবীজি (সা.) সকালে দরজা খুলে বের হলে তারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করবে এই ছিল তাদের পরিকল্পনা। নবীজি (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের এই পরিকল্পনার কথা জেনে যান। রাতেই তিনি তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে বের হন এবং সাহাবি আবু বকরকে (রা.) সাথে নিয়ে মদিনার পথে বের হয়ে পড়েন।

মুশরিকদের সব প্রচেষ্টা ও চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা তার রাসুলকে মদিনায় পৌঁছে দেন। নবীজির (সা.) নেতৃত্বে মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মদিনার বড় গোত্র আওসের সর্দার হিসেবে সাদ ইবনে মুয়াজ হয়ে ওঠেন নবীজির (সা.) একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।

বদরের যুদ্ধের সময় নবীজিকে (সা.) সমর্থন করে সাদ ইবনে মুয়াজের বলিষ্ঠ বক্তব্য স্মরণীয় হয়ে আছে। বদর যুদ্ধের আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধ করার ব্যাপারে যখন আনসার সাহাবিদের মতামত জানতে চান, সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনাকে বিশ্বাস করেছি এবং আপনার ওপর ইমান এনেছি। আমরা সাক্ষ্য দিয়েছি যে আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। আমরা আমাদের চুক্তি করেছি আপনাকে মান্য করার এবং আপনার নির্দেশ মেনে চলার। সুতরাং হে আল্লাহর রাসুল! যা করতে চান করুন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি। সেই আল্লাহর কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদের নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে চান, তবে আমরা ঝাঁপ দেব। আমাদের মধ্য থেকে একজনও পিছিয়ে থাকবে না। আমরা যুদ্ধে ধৈর্যশীল, শত্রুর মোকাবেলায় সত্যনিষ্ঠ। আশা করি আল্লাহ আপনাকে আমাদের মাধ্যমে এমন কিছু দেখাবেন যা দেখে আপনার চোখ শীতল হবে। আপনি আমাদের নিয়ে এগিয়ে চলুন!

সাদ ইবনে মুয়াজের (রা.) এই বক্তব্য শুনে রাসুল (সা.) আনসারদের সমর্থনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হন এবং যুদ্ধের ঘোষণা দেন।

ওহুদের যুদ্ধে তিনি নবীজির (সা.) অবস্থানস্থল পাহারার দায়িত্ব পালন করেন। পেছন থেকে অতর্কিত আক্রমণে মুসলমানরা যখন কিছু সময়ের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন, তখন যে ১৫ জন ব্যক্তি নবীজির (সা.) পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের অন্যতম সাদ ইবন মুয়াজ (রা.)।

খন্দকের যুদ্ধে কোরায়শের এক ব্যক্তি সাদের (রা.) পায়ের গোড়ালিতে তীর ছুড়ে মারলে তিনি গুরুতর আহত হন। নবীজি (সা.) মসজিদে নববিতে একটি তাঁবু স্থাপন করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থেকে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

নবীজি (সা.) বলেন, সাদের শাহাদাতে আরশ কেঁপে উঠেছে, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেছে।

ওএফএফ

আরও পড়ুন