ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মাশাআল্লাহ অর্থ কী?

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

বহুল প্রচলিত একটি আরবি বাক্য ‘মাশাআল্লাহ’। আরবিভাষীরা তো বাক্যটি কথায় কথায় বলেনই, অন্যান্য ভাষায় কথা বলা মুসলমানরাও বলেন। বাংলা ভাষায়ও ‘মাশাআল্লাহ’ বহুল ব্যবহৃত। ‘মাশাআল্লাহ’র আক্ষরিক অর্থ হলো ‘আল্লাহ তায়ালা যেমন চেয়েছেন’। ভালো কিছু ঘটলে, কেউ কোনো ভালো কাজ করলে, সফলতা পেলে বা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখলে ‘মাশাআল্লাহ’ বলা হয় এই অর্থে যে আল্লাহ তাআলা যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। তার ইচ্ছা ছিল বলেই এই ভালো ব্যাপারটি ঘটতে পেরেছে।

কখন বলবেন ‘মাশাআল্লাহ’

১. কোনো কাজে সফলতা লাভ করলে বলুন ‘মাশাআল্লাহ’।

২. উত্তম উপার্জন, খাবার, পানীয়, পোশাক, উত্তম ফল-ফসলসহ যে কোনো নেয়ামত লাভ করলে বলুন ‘মাশাআল্লাহ’।

৩. নিজের সন্তান, আত্মীয়-স্বজনসহ যে কারো কোনো নেয়ামত লাভ ও সফলতা দেখলে বলুন ‘মাশাআল্লাহ’।

৪. যে কারো কৃতিত্বে খুশি হলে বলুন ‘মাশাআল্লাহ’।

৫. যে কোনো ব্যক্তি-বস্তুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলে বলুন ‘মাশাআল্লাহ’।

‘মাশাআল্লাহ’ কেন বলবেন?

নিজের বা অন্যের সফলতা, কৃতিত্ব, ভালো কাজ দেখে ‘মাশাআল্লাহ’ বললে এর মূল কৃতিত্ব আল্লাহ তাআলার দিকে সম্পর্কিত করা হয়, আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা হয় ও শোকর আদায় করা হয়। ফলে আল্লাহর ক্ষমতা-তওফিকের স্বীকৃতি ও শোকর আদায়ের কারণে সওয়াব হয়, বদনজর থেকেও বাঁচা যায়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, কেউ যদি কিছু দেখে মুগ্ধ হয় এবং বলে, ‘মাশাআল্লাহু লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যা চেয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই) তাহলে নজর ক্ষতি করতে পারে না। (ইবনুস সুন্নি, বাযযার)

পবিত্র কোরআনে ‘মাশাআল্লাহ’

সুরা কাহাফে আল্লাহ তাআলা দুজন বাগান মালিকের ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তাদের একজন যাকে আল্লাহ তাআলা বেশি সম্পদ দান করেছিলেন, সে ওই নেয়ামতের জন্য আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের বদলে অকৃতজ্ঞ ও দাম্ভিক হয়ে উঠেছিল। আরেকজন বাগান মালিক ছিলেন আল্লাহর শোকরগুজার বান্দা। তিনি ওই দাম্ভিক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়েছিলেন, বাগানের ফল-ফসল দেখে দম্ভ না করে আপনার বলা উচিত ‘মাশাআল্লাহ, আল্লাহর তওফিক ছাড়া কোনো শক্তি নেই’। কিন্তু ওই দাম্ভিক ব্যক্তি তার কথায় কর্ণপাত করেনি। ফলে তার ওপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। তার বাগান ধ্বংস হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি তাদের কাছে দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর যাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দু’টি আঙ্গুরের বাগান, আর ওগুলোকে খেজুর গাছ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম আর ও দু’টির মাঝে দিয়েছিলাম শষ্যক্ষেত। দু’টি বাগানই ফল দিত, এতে এতটুকু ত্রুটি করত না। এ দু’য়ের মাঝে আমি ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করেছিলাম।

লোকটির উৎপাদন ছিল প্রচুর। একদিন কথাবার্তা বলার সময় সে তার প্রতিবেশীকে বলল, আমি সম্পদে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আর জনবলে তোমার চেয়ে শক্তিশালী। নিজের ওপর জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি ধারণা করি না যে, এটা কোনো দিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি না যে কেয়ামত হবে। আর যদি আমাকে আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়ই, তাহলে অবশ্য অবশ্যই আমি পরিবর্তে আরো উৎকৃষ্ট স্থান পাব।

কথায় কথায় তার সঙ্গী বলল, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর শুক্র-কীট থেকে, অতঃপর তোমাকে পূর্ণাঙ্গ দেহসম্পন্ন মানুষ বানিয়ে দিয়েছেন? তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরিক করি না।

তুমি যখন মনে করলে সম্পদে ও সন্তানে আমি তোমার চেয়ে কম, তখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করে কেন তুমি বললে না, মাশাআল্লাহ! আল্লাহর তওফিক ছাড়া কোনো শক্তি নেই। আমি আশা করি আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন আর তোমার বাগানের ওপর আকাশ থেকে কোনো বিপদ পাঠিয়ে দেবেন, ফলে তা শূন্য ময়দানে পরিণত হবে। অথবা বাগানের পানি ভূ-গর্ভে চলে যাবে এবং তুমি কখনও তা ফিরিয়ে আনতে পারবেনা।

তারপর তার ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য হাতে হাত রেখে আক্ষেপ করতে লাগল, যখন তা ধ্বংস হয়ে গেল। সে বলতে লাগল হায়! আমি যদি কাউকে আমার রবের সাথে শরিক না করতাম!

আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার কোন দলবলও ছিল না, আর সে নিজেও এর মোকাবিলা করতে পারল না। এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার ক্ষমতা সত্যিকার আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ। (সুরা কাহাফ: ৩২-৪৪)

ওএফএফ

আরও পড়ুন