ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

দুনিয়া ও পরকালের সফলতায় বিশেষ তাওবা ও আমল

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২২

২৬ তারাবি আজ। রোজাদার মুমিন মুসলমানের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের পূঁজি খুঁজে পাওয়ার তারাবি। ক্ষমার চমৎকার ঘোষণা ও আমলের নির্দেশনার কথাই পড়বেন হাফেজে কোরআন। সুরা নুহে যেমন রয়েছে ক্ষমা প্রার্থনার বর্ণনা আবার সুরা মুলকের মতো আমলের বিশেষ সুরায় শুরু হবে আজকের তারাবি। সে সঙ্গে শেষ হবে ২৯ পারার তেলাওয়াত। ২৬ তারাবির প্রতি সুরাই গুরুত্বপূর্ণ। এ সুরাগুলোতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন বিদ্রোপের উত্তরগুলো জানতে পারবে মুসল্লিরা। আল্লাহ তাআলার কত চমৎকার ধারাবাহিক বর্ণনা।

২৬ তারাবিতে হাফেজে কোরআনগণ ১১টি সুরা পড়বেন। সুরা মুলক, সুরা আল-কালাম, সুরা হাক্কাহ, সুরা মাআরিজ, সুরা নূহ, সুরা জিন, সুরা মুযযাম্মিল, সুরা মুদ্দাছছির, সুরা ক্বিয়ামাহ, সুরা ইনসান ও সুরা মুরসালাত পড়া হবে আজ। সুরা মুলকের আমল ও সুরা নুহ-এ তাওবা-ইসতেগফারের ফজিলতের বিষদ বর্ণনাসহ তারাবিতে পড়া অন্য সুরাগুলোর ফজিলত ও সংক্ষিপ্ত আলোচ্য বিষয়গুলো নামাজ আদায়কারীদের জন্য তুলে ধরা হলো-

২৬ তারাবির সুরাগুলোতে রয়েছে বার বার জান্নাতের সুসংবাদ। রোজাদার মুসল্লিরা জান্নাত পাওয়ার ঘোষণা পেয়েই নিজেদের হৃদয়ে প্রশান্তি পাবেন। ক্ষমার ফজিলতে আল্লাহর অনুগ্রহের দিকে খুববেশি ঝুঁকে পড়বেন। সুরা নুহ-এ ক্ষমা প্রাথর্নার কথা বলা হয়েছে। যারা আল্লাহ কাছে তার নির্দেশ মোতাবেক ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে থাকবে নেয়ামতের ঘোষণা। আল্লাহ বলেন-

فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا  -  یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا -  وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا

'তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)

সুরা নুহ-এর আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বলেছেন। রোজাদার বান্দা জন্য এ নির্দেশনা ক্ষমা ও নেয়ামত পাওয়ার একটি বড় সুযোগ। যারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে তারা সুনিশ্চিত ক্ষমা ও নেয়ামত পেয়ে ধন্য হবে। নেয়ামতগুলো কী?

১. আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

২. রহমতের বৃষ্টি দান করবেন।

৩. যারা সন্তানহীন তাদের সন্তান-সন্তুতি দান করবেন।

৪. যাদের সহায় সম্বল নেই, তাদের ধন-সম্পদ দান করবেন।

৫. সবুজ উদ্যান দান করবেন।

৬. উপকারি নদ-নদী দান করবেন।

ক্ষমা প্রার্থনায় মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় নেয়ামত ও সুসংবাদ আর কী হতে পারে। এসবই বান্দার জন্য মহান প্রভুর একান্ত অনুগ্রহ।

সুরা মুলক : আয়াত ০১-৩০

সুরা আল-মুলক। পবিত্র নগরী মক্কায় অবর্তীণ কুরআনুল কারিমের ৬৭তম সুরা। আয়াত সংখ্যা ৩০। রুকু ২। কুরআন তেলাওয়াতের আমলকারীদের জন্য সুরাটি অনেক ফজিলতপূর্ণ। যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার আগ পর্যন্ত সুপারিশ করত থাকে। সুরাটি তাবারাকা, মুনজিয়াহ ও মানেয়া নামেও পরিচিত। সুরাটি ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআন মাজিদে একটি সুরা আছে, যা ৩০ আয়াত বিশিষ্ট; কেয়ামতের দিন যে তা তেলাওয়াত করবে; তার জন্য সুরাটি আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করে জাহান্নাম থেকে বের করাবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করাবে। আর সে সুরাটি হলো- تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ

এ সুরায় ইসলামি শিক্ষার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আবার যেসব লোক বেপরোয়া এবং অমনোযোগী ছিল তাদেরকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে সজাগ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ সুরায় মানুষের ঘুমন্ত বিবেক ও অনুভূতিকে জাগ্রত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

মানুষকে গুনাহমুক্ত জীবনের জন্য কোরআন-সুন্নায় অনেক আমলের বর্ণনা দিয়েছেন নবিজী। লক্ষ্য একটাই যাতে মানুষ গুনাহমুক্ত জীবন পায়। এ সুরাটিও তার একটি। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকেও বিষয়টি প্রমাণিত-

১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদিস শুনাব, যাহা শুনে তুমি খুশি হবে? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ শুনান। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি নিজে সুরা মুলক পড় এবং পরিবারের সবাইকে ও প্রতিবেশীকে উহা শিক্ষা দাও।কারণ উহা মুক্তিদানকারী ও ঝগড়াকারী। কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে ঝগড়া করে উহার পাঠকারীকে সে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবে এবং কবরের আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার একান্ত কামনা যে, এই সুরাটি আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে গেঁথে (মুখস্ত) থাকুক।’ (ইবনে কাসির)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন মাজিদে ৩০ (ত্রিশ) আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা রয়েছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার আগ পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। আর সুরাটি হলো تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ অর্থাৎ সুরা মুলক।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার মন চায় প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে যেন সুরা মুলক মুখস্ত থাকে।’ (বাইহাকি)

৪. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘তোমরা সুরা মুলক শিখে নাও এবং নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও। এটা কবরের আজাব হতে রক্ষা করবে এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে এই সুরা পাঠকারীর পক্ষে কথা বলে তাকে মুক্ত করবে।’

৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলক তেলাওয়াতের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)

সুরাটি তেলাওয়াতের সময়

সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। সুরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ায় রয়েছে অনন্য তাৎপর্য। এই সুরা নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি)

২. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’

৩. সুরা মূলক ৪১ বার (একচল্লিশ) তেলাওয়াত করলে সব বিপদ-আপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং ঋণ পরিশোধ হয়। এ সুরা পাঠে কবরের আজাব থেকেও বাঁচা যায়।

উল্লেখ্য যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক না পড়ে ঘুমাতে যেতেন না মর্মে বর্ণনার উপর ভিত্তি করেই আলেম-ওলামা ও বুজুর্গানে দ্বীনগণ ইশার নামাজের পর সুরা মুলকের তেলাওয়াতের আমল করার কথা বলেন। সুতরাং রাতে ঘুমানোর আগে কিংবা ইশার নামাজের পরে বুঝে বুঝে সুরা মুলক পড়া যেতে পারে।

সুরা আল-ক্বালাম : আয়াত ০১-৫২

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা আল-ক্বালাম ২ রুকু এবং ৫২ আয়াতে বিভক্ত। মক্কায় যখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধীতা প্রবল আকার ধারণ করে তখন এ সুরাটি নাজিল হয়। এ সুরা তিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সুরাটি বিষয়বস্তু হলো-

১. ইসলাম বিদ্বেষীদের আপত্তি ও সমালোচনার জবাব দেয়া হয়েছে এ সুরার মাধ্যমে।

২. তাদেরকে তাদের কাজের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে এবং উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।

৩. ইসলাম বিদ্বেষীদের যাবতীয় নির্যাতন হয়রানি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধৈর্যধারণ ও অবিচল থাকার উপদেশ দেয়া হয়েছে।

সুরা আল-হাক্কাহ : আয়াত ০১-৫২

সুরা হাক্কাহ মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরায় রয়েছে ২ রুকু এবং ৫২ আয়াত। এ সুরার প্রথম রুকুতে পরকালের বর্ণনা করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রুকতে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া এবং হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, আল্লাহ রাসুল; এ কথার সত্যতা বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা আল-মাআ’রিজ : আয়াত ০১-৪৪

সুরা মাআ’রিজ মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরাটি ৪৪ আয়াত এবং ২ রুকুতে বিভক্ত। এ সুরায় কাফেরদের ওই সব কথা ওঠে এসেছে; যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য অশোভণীয়। এ সুরায় মক্কার অবিশ্বাসীরা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিয়ামত, আখেরাত, দোযখ ও বেহেশত সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে যখন বিদ্রুপ ও উপহাস করতো।

এ সুরায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার বিষয়টি ওঠে এসেছে। অবিশ্বাসীরা নবিজীকে এ মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো আর তোমাকে অস্বীকার করার কারণে আমরা যদি জাহান্নামের শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে থাকি; তাহলে তুমি আমাদেরকে যে জাহান্নামের ভয় দেখাও তা আমাদের সামনে নিয়ে এসো। সুরাটি ওই সব বিদ্রেুাপকারী কাফেরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। সত্যের উপদেশবানী শোনানো হয়েছে। মূলত অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জের জবাবেই পুরো সুরাটি নাজিল করা হয়েছে।

সুরা নুহ : আয়াত ০১-২৮

সুরা নুহ-এর আয়াত সংখ্যা ২৮ ও ২ রুকুতে বিভক্ত। সুরাটি মক্কায় নাজিল করা হয়। এ সুরায় নবুয়তের সত্যতা প্রমাণে হজরত নূহ আলাইহিস সালামের বিস্তারিত ঘটনা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করা হয়েছে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে মানুষদেরকে জানানো হয়েছে যে, তোমরা হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যে আচরণ করছো; হজরত নূহ-এর ওপর তার কাওমও সে রকম আচরণ করতো। তোমরা যদি প্রিয়নবির সঙ্গে তোমাদের আচরণ ভালো না কর; তবে তোমাদের ওপরও নূহ আলাইহিস সালামের কাওমের শাস্তির পতিত হবে। এ সুরায় মানুষের নিকট আল্লাহ তাআলার দাওয়াত পৌছানোর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম মিল্লাতের ক্ষমা প্রার্থনায় একটি দোয়ার আবেদন তুলে ধরেছেন-

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا

উচ্চারণ : 'রাব্বিগলিলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাতি ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা।' (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)

অর্থ : 'হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে , যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন।'

সুরা জিন : আয়াত ০১-২৮

সুরা জিন মক্কায় অবতীর্ণ। ২রুকু ও ২৮ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরা নাজিলের একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে। আর তা হলো-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবিকে নিয়ে উকায বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখলা নামক স্থানে তিনি ফজরের নামাজে ইমামতি করেন।

সে সময় একদল জিন ওই স্থান অতিক্রম করছিল। তারা প্রিয়নবির কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনে সেখানে থেমে যায় এবং গভীর মনোযোগসহ কুরআন শুনতে থাকে। এ সুরাতে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা আল-মুযযাম্মিল : আয়াত ০১-২০

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা মুযযাম্মিল ২ রুকু এবং ২০ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরার রুকু ২টি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নাজিল হয়। এ সুরার মাধ্যমে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের বেলায় ওঠে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁর মধ্যে নবুয়তের মতো গুরু দায়িত্ব গ্রহণের শক্তি ও সামর্থ্য তৈরি হয়।

তাছাড়া এ সুরার মাধ্যমে অর্ধেক রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের বিষয় এবং বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আল্লাহ তাআলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধৈর্য, সহমর্মিতা প্রদান এবং উপদেশ দেয়া হয়েছে এ সুরায়।

সুরা আল-মুদ্দাছছির : আয়াত ০১-৫৬

সুরা মুদ্দাছছির মক্কায় নাজিল হয়। সুরাটি ২ রুকুতে বিভক্ত হলেও এর আয়াত সংখ্যা ৫৬। এ সুরাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল সুরা। এ সুরাটি প্রিয়নবির নবুয়তি জীবনের প্রাথমিক কর্মসূচি।

এ সুরায় কিয়ামতে বর্ণনা, কাফের সর্দার ওয়ালিদ ইবনে মুগিরার আলোচনাসহ কুরাইশদের ঈমান আনা ও না আনার কারণ এবং তার ভয়াবহ পরিণতির কথা আলোচিত হয়েছে। ইবনে জারীর বর্ণনা করেন, ‘প্রথম ওহি নাজিলের পর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বেশ কিছু দিন ওহি নাজিল হওয়া বন্ধ থাকে। সে সময় প্রিয়নবি এতো কঠিন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন যে, কোনো কোনো সময় তিনি পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে সেখান থেকে নিজেকে নিচে নিক্ষেপ করতে বা গড়িয়ে ফেলে দিতে উদ্যত হতেন।

কিন্তু যখনই তিনি কোনো চূড়ার পাশাপাশি যেতেন, তখনিই হজরত জিবরিল আলাইহি সালাম তাঁর সামনে এসে বলতেন, ‘আপনি তো আল্লাহর নবি! এতে তার হৃদয় মন প্রশান্তিতে ভরে যেতো এবং তার অশ্বস্তি ও অস্থিরতা ভাব বিদূরিত হয়ে যেতো।

সুরা আল-ক্বিয়ামাহ : আয়াত ০১-৪০

সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। এতে রয়েছে ২ রুকু এবং ৪০ আয়াত। এ সুরায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আপনি ওহি মুখস্ত করতে দ্রুততর জিহ্বা নাড়াবেন না। এ সুরায় অবিশ্বাসীদের কৃতকর্ম এবং মুমিন বান্দার করণীয় ওঠে এসেছে।

সুরা আল-ইনসান : আয়াত ০১-৩১

সুরা আল-ইনসানের আরেক নাম সুরা আদ-দাহর। এ সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ এবং সুরাটিতে ৩১টি আয়াত এবং ২টি রুকু রয়েছে। এ সুরার মূল কথা হলো মানুষকে দুনিয়ায় তার প্রকৃত অবস্থা এবং মর্যাদা অবহিত করা। মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হলে ফলাফল কি হবে আর অকৃতজ্ঞ হলে তার ফলাফল কি হবে সে সব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে এ সুরায়।

সুরা আল-মুরসালাত : আয়াত ০১-৫০

এ সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়। সুরাটি ২ রুকু এবং ৫০ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরায় মক্কাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। পরকালের প্রমাণ এবং সত্য গ্রহণের সুফলের পাশাপাশি সত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার যে পরিণতি ভোগ করতে হবে তা এ সুরায় ওঠে এসেছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন