আল্লাহর পরিচয় কী?
ফেরাউনের প্রশ্ন, হে মুসা! তোমার রব কে?হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে মহান আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রশ্ন করেছিল ফেরাউন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম চমৎকারভাবে তাঁর রবের পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কী বলেছিলেন?
ফেরাউন নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছিল। আল্লাহর নির্দেশেই মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের কাছে তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছিলো। তখন ফেরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লামের কাছে আল্লাহর পরিচয় জানতে চায়। কে তোমাদের পালনকর্তা?
ফেরাউনের প্রশ্ন শুনে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেন। ফেরাউনের প্রশ্ন ও মুসা আলাইহিস সালামের উত্তর আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে উপস্থাপন করেন-
قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَا مُوسَى
সে (ফেরাউন) বলল, হে মুসা! তোমাদের পালনকর্তা কে? (সুরা ত্বহা : আয়াত ৪৯)
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেন এভাবে-
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَى
‘সে (মুসা আ.) বলল, আমাদের রব তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেছেন।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ৫০)
আলোচ্য আয়াতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার রব হচ্ছে ‘আল্লাহ’। তিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সব কিছুকে অস্তিত্বে নিয়ে এসেছেন। এগুলোর ভেতর অনুভূতিও সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তুকে নিজেদের কর্মকৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের দেওয়া পরিচয়ের একাধিক ব্যাখ্যা তাফসির গ্রন্থে ওঠে এসেছে। তাহলো-
১. মহান প্রভু তিনি; যিনি প্রতিটি বস্তুর জোড়া সৃষ্টি করেছেন।
২. মহান প্রভু তিনি; যিনি মানুষকে মানুষের আকৃতিতে বানিয়েছেন, গাধাকে গাধা আর ছাগলকে ছাগলের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
৩. মহান প্রভু তিনি, যিনি প্রতিটি বস্তুর জন্য সুনির্দিষ্ট আকৃতি দিয়েছেন।
৪. মহান রব তার প্রতিটি সৃষ্টিকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই তৈরি করেছেন।
৫. প্রতিটি সৃষ্টিকে তার জন্য যা উপযোগী সে ধরনের সৃষ্টিরূপ দিয়েছেন।
অর্থাৎ মানুষের জন্য গৃহপালিত জন্তুর কোনো সৃষ্টিরূপ দেননি। গৃহপালিত জন্তুকে কুকুরের কোনো অবস্থা দেননি। কুকুরকে ছাগলের বৈশিষ্ট্য দেননি। আবার প্রতিটি সৃষ্টিই তার অনুপাতে বিয়ে ও তার জন্য যা উপযুক্ত সেটার ব্যবস্থা করেছেন। সৃষ্টি, জীবিকা, বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রেও একটিকে অন্যটির মতো করেননি।
৬. মহান রব তার প্রতিটি সৃষ্টিকে তার উপযোগী করে জ্ঞান দিয়েছেন। তারপর সে ভালো জিনিসটার দিকে কীভাবে যেতে হবে সেটাও দেখিয়ে দিয়েছেন।
৭. সর্বোপরি মহান প্রভু তার প্রতিটি সৃষ্টির জন্যই তাকদির নির্ধারণ করেছেন, তারপর সেটাকে সে তাকদিরের দিকে চলার জন্য পথ দেখান। প্রতিটি সৃষ্টির কার্যাবলী, আয়ু এবং রিজিক লিখে দিয়েছেন।
মনে রাখা জরুরি
মহান প্রভু আর কেউ নন। তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ তাআলা। যার কোনো শরিক নেই। যিনি দুনিয়া সব কিছু সৃষ্টি করে থেমে যাননি বরং তাদের গতিপথও নির্ধারণ করে পথ দেখিয়েছেন। মহান প্রভুর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলছে পুরো সৃষ্টিজগত।
মহান প্রভুর দিকনির্দেশনার বাইরে এসে কারও ব্যতিক্রম কোনো কিছু ঘটানোর সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত কোনো বিষয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এক কথায় মহান রবের ইচ্ছা অনুসারেই পরিচালিত হচ্ছে এ পৃথিবী। একই নিয়মে সূর্য ওঠে এবং অস্ত যায়। চাঁদ নিরবিচ্ছিন্ন জোছনা বিলিয়ে যায়। আর এর মাঝেই ফুটে ওঠে মহান রবের পরিচয়। কতই না মহান আমাদের রব!
আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে মহান রবের পরিচয় পাওয়ার পর তার দেখানো পথ ও মতে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস