ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই কি মাসব্যাপী রোজা ফরজ ছিল?

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩

রমজান কোরআন নাজিলের মাস। কোরআন মানুষের জন্য হেদায়েত বা পথনির্দেশক। মুসলিম উম্মাহর জন্য নির্দেশনা হলো- যারা এ মাসটি পাবে তাদের জন্য রোজা পালন করতে হবে। কিন্তু ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই কি মাসব্যাপী এ রোজা রাখা ফরজ ছিল?

রমজানের রোজার পালনের নির্দেশ

হিজরতের পর মদিনায় দ্বিতীয় হিজরির ১০ শাবান মুমিন মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ হয়েছিল। কিন্তু এ রোজা ফরজ হওয়ার আগেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর রোজা ফরজ ছিল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে রোজাগুলোও ধাপে ধাপে পালন করেছিলেন। আর তা সাহাবায়ে কেরামগণও পালন করতেন। রোজা পালনের ধাপগুলো হলো-

প্রথম ধাপ

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা পালন করতেন। আর তা দেখে সাহাবায়ে কেরামগণও রোজা পালন করতেন। যাতে রোজা পালনের অভ্যাস তৈরি হয়।

কেউ কেউ বলেছেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি মাসে যে ৩দিন রোজা রাখতেন, তা ছিল আইয়্যামে বিজের রোজা তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা। আর তা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ফরজ ছিল।

দ্বিতীয় ধাপ

জাহেলি যুগে আরবের কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখতো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এসে হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে তার স্মৃতি পালনে আশুরার দিন গুরুত্বের সঙ্গে নিজে যেমন রোজা রাখতেন এবং তার সঙ্গীদেরও এ রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। তখন এ রোজা ফরজ ছিল।

তৃতীয় ধাপ

এরপর রোজার বিধান নিয়ে কোরআনুল কারিমের আয়াত নাজিল হলো। কিন্তু শুরুতে তখনো রোজা পূর্ণ আকারে ফরজ ছিল না। যার ইচ্ছা সে রোজা রাখতো এবং যার ইচ্ছা সে না রেখে মিসকিনকে খাদ্য দান করতো। কিন্তু রোজা রাখাটা আল্লাহর দরবারে পছন্দনীয় ছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-

اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَهٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡکِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ ؕ وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

‘(রোজা) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, এরপর তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে এবং শক্তিহীনদের উপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদইয়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করা এবং যে ব্যক্তি নিজের খুশীতে সৎ কাজ করতে ইচ্ছুক, তার পক্ষে তা আরও উত্তম আর সে অবস্থায় রোজা পালন করাই তোমাদের পক্ষে উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

চতুর্থ ধাপ

দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে আয়াত নাজিল করে পুরো রমজান মাস রোজা পানের নির্দেশ দেন। ফলে প্রত্যেক সামর্থবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য পুরো রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ হয়ে যায়। এ ধাপেই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। যা ছিল আগের সব-নবি রাসুলদের ধারাবাহিক রোজা পালনেরই অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

সুতরাং সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক (জ্ঞানসম্পন্ন সাবালক) স্থায়ীদের জন্য মিসকিনকে খাদ্যদানের বিধান রহিত হয়ে যায় এবং বৃদ্ধ ও রোগীদের জন্য তা বহাল রাখা হয়। কিছু কিছু আলেমগণের মতে এ বিধান গর্ভবর্তী ও দুগ্ধদাত্রী নারীদের জন্যও বহাল করার কথা বলা হয়। যারা গর্ভকালে বা দুগ্ধদান কারে রোজা রাখলে তাদের সন্তানের বিশেষ ক্ষতি হবে আশঙ্কা থাকে।

সুতরাং রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আবশ্যকীয় বিধান। তারপর থেকেই মুমিন মুসলমান মাসব্যাপী পালন করে আসছেন রমজানের রোজা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাসব্যাপী রমজানের রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নির্দেশিত ফরজ বিধান যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন