নামাজের পর যে কারণে ইসতেগফার পড়া জরুরি
নামাজের সালাম ফেরানোর পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসতেগফার পড়তেন। এটি একটি সুন্নত আমল। শুধু সুন্নত পালনেই কি ইসতেগফার পড়া হয়? নাকি আরও কোনো কারণ আছে, যে কারণে নামাজের পর ইসতেগফার পড়া হয়?
‘রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজের সালাম ফেরাতেন, তখন সর্ব প্রথম যে শব্দ তাঁর পবিত্র জবান থেকে বের হতো, তাহলো- ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।‘ তিনি কেন তিন বার ইসতেগফার পড়তেন?
কোরআন-সুন্নাহর বর্ণনা মতে, গুনাহ বা অন্যায় কাজ সংঘটিত হলেই ইসতেগফার পড়া হয়। তবে নামাজের সালাম ফেরানোর পর বিশেষ দুটি কারণে ইসতেগফার পড়তে হয়। তাহলো-
১. নামাজের ভুলত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া
নামাজ যেভাবে হক আদায় করে পড়ার কথা; সেভাবে হক আদায় করে নামাজ পড়া হয় না। তাই নামাজের পর ইসতেগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি। কেননা ইসতেগফার পড়ার সময় মুমিনের মনে এ অবস্থা বিরাজ করে যে-
ما عبدناك حق عبادتك و ما عرفناك حق معرفتك
‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে আপনার ইবাদতের (নামাজের) হক আদায় হয়নি। না জানি কত ভুল কত বিচ্যুতি এই ইবাদতে (নামাজে) সংঘটিত হয়েছে। হে আল্লাহ! আমরা (নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর সর্বপ্রথম) সেই সব ভুল-ত্রুটির জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাই, যা এই নামাজে সংঘটিত হয়েছে।'
২. শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা
নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই অনেকে ওঠে দাঁড়িয়ে যান। বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। অথচ সে সময় পেছনে অনেকেই ছুটে যাওয়া নামাজ পড়তে থাকেন। এতে নামাজরত ব্যক্তিদের অসুবিধা হয়। যা মারাত্মক অন্যায়ও বটে। অনেকে আবার কথা বলায় মেতে ওঠেন। এসবই শয়তানের ধোঁকা। তা থেকে বাঁচতেও নামাজের সালাম ফেরানোর পরপর তিনবার ইসতেগফার পড়া জরুরি।
শয়তানের কাজই হলো মানুষকে নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে রাখা। নামাজের পর কথা ও কাজে মানুষকে ব্যস্ত করে তোলা। যা হাদিসে প্রমাণিত-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অভ্যাস (আমল) দুইটি সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোনো লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর নামাজের মধ্যে (নামাজ শেষ হলে) শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা (ব্যস্ততা) স্মরণ করিয়ে দেয়। এতে সে তাসবিহগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের/ব্যস্ততার দিকে চলে যায়।’ (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, তারগিব)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর উল্লেখিত অনুভূতি নিয়ে সুন্নতের উপর আমলের নিয়তে ৩ বার ইসতেগফার পড়া। যথাযথ হক আদায় করে নামাজ পড়ার চেষ্টা করা। ইসতেগফার করার মাধ্যমে শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি ইসতেগফার পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর ৩ বার ইসতেগফার পড়ার মাধ্যমে সুন্নতের ওপর আমল ও শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম