ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সোশ্যাল মিডিয়া

রনিকে দেখে মনে হয়েছে আজ একটা ভাই পেয়েছি: সুমন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, ২২ জুলাই ২০২২

পাপ আর দুর্নীতি এখন শেষ সীমায় চলে গেছে, এমন মন্তব্য করে রেলখাতে দুর্নীতির প্রতিবাদে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিকে লড়াই-সংগ্রামের পথে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলছি, কিন্তু এখানে (কমলাপুর রেলস্টেশনে) এসে রনিকে দেখে মনে হয়েছে আমার এ লড়াই-সংগ্রামের পথে আজ একটা ভাই পেয়েছি। যে ছেলেটির এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকার কথা, লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করার কথা, সেই ছেলেটি আজ এখানে বসে দায়িত্ব নিয়ে বলছে, ‘রেলে দুর্নীতিবাজদের আড্ডাখানা, সিন্ডিকেটের আড্ডাখানা’। রেলকে দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন রনি। টানা অবস্থানে থেকে সে অসুস্থ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে রনির সঙ্গে দেখা করেন ব্যারিস্টার সুমন। এসময় তাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

রেলখাতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমরা সব মেনে নিই, তাই বলে দুর্নীতি করে আমাদের টাকা খাবেন সেটা মেনে নেবো না। এটা আমরা মানবোই না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সুমন বলেন, আমরা রেল মন্ত্রণালয়কে বাঁচাতে কতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। অথচ শোনা যায়, রেল মন্ত্রণালয় নাকি অর্ধেক চালান রেলের ভাবি (রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে)। মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, রেলমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও নাকি এ মন্ত্রণালয় চালান।

বাংলাদেশ রেলের অনলাইন টিকিট প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে আবারও কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেন রনিসহ অন্য শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ৭ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করেন তারা। গত ১৯ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে লংমার্চ করে রেলওয়ে ভবনে গিয়ে রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারকে স্মারকলিপি দেন। সে সময় ছয় দফা দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বিজ্ঞাপন

বেঁধে দেওয়া সময়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ২১ জুলাই বিকেল থেকে আবারও কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেন রনিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দফায় অবস্থান নিতে গিয়ে শুরুতেই রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীসহ আনসার সদস্যদের বাধার মুখে পড়েন রনি। এরপর তার সঙ্গে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন। এসময় স্টেশনের মূল গেটে বসে পড়েন রনিসহ তার সহপাঠীরা। বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে সেখানে যান ব্যারিস্টার সুমন। এসময় তিনি রেল মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী মন্ত্রণায়কে দুর্নীতমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এসময় রেলের দুর্নীতির প্রতিবাদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলেন- ‘দুর্নীতির কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় দুর্নীতির ঠাঁই নেই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তুমি কে আমাকে বাঙালি-বাঙালি।’

বিজ্ঞাপন

এরপর ব্যারিস্টার সুমন ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি এটা হলো কমলাপুর রেলস্টেশন। এখানে আপনারা কেউ এলে দেখতে পারবেন কতটা দুর্নীতি চলছে। এখানে এসেছি রনিকে দেখতে, তার প্রতি সহমর্মিতা জানাতে।

তিনি বলেন, রনির অভিযোগের ভিত্তিতে রেলের অনলাইন টিকেটিং প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এরপর আর কী প্রমাণ লাগে। আপনারা কী ভাবছেন, এই জরিমানা করায় রনি ঠান্ডা হয়ে যাবে। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। মনে রাখবেন, রনির জন্মই হয়েছে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে….।

রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সুমন আরও বলেন, রেলের বারোটা বাজিয়েছেন। আপনারা লোডশেডিংয়ের কথা বলেন, মেনে নেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেন, মেনে নেই। সব মেনে নেই বলে দুর্নীতি করে আমাদের টাকা খাবেন, সেটা কিন্তু মেনে নেবো না। এটা আমরা মানবোই না। এরকম রনির জন্ম সারাদেশে হবে।

বিজ্ঞাপন

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ, এরকম দুঃসময়ে আমরা আপনার যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি। আমরা লোডশেডিং সহ্য করছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও সহ্য করছি। কিন্তু আপনি যদি রেল মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে কন্ট্রোল না করেন তাহলে মানুষের দীর্ঘশ্বাসে আপনার লোকজন ভালো থাকবে না। এ দুই মন্ত্রণালয়ের প্রতি মানুষের যে ঘৃণা তা একসময় বড় আওয়াজে রুপান্তরিত হবে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি বলেন, আপনি তো আমাদের কথা বোঝেন, আপনার প্রতি অনুরোধ জানাই, এদের (দুর্নীতিবাজদের) ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। রনির সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত এবং এসব সমস্যা নিরসনে যত দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন আমি বিশ্বাস করি তত দ্রুত মানুষের আত্মা শান্তি পাবে।

লাইভে সবশেশে তিনি বলেন, কমলাপুর থেকে বিদায় নেওয়ার আগে আবারও বলছি, আমাদেরকে ‘রেলভাবি’ এবং সব দুর্নীতিবাজদের থেকে মুক্ত করুন। আশা করি, সবাই ভালো থাকবেন।

বিজ্ঞাপন

এফএইচ/এমকেআর/এমএস

বিজ্ঞাপন