ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পিইসি বহাল : শিশুদের আনন্দ মাটি ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও

প্রকাশিত: ০৫:৩৮ পিএম, ২৭ জুন ২০১৬

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রোমেলের মনটা খুব খারাপ। গত রাত ১১টা পর্যন্ত  সে বাবার সাথে ক্যারাম খেলেছে। ভোর রাতে সেহরির জন্য রান্নায় ব্যস্ত মাও মাঝে এসে বাপ ছেলের খেলার ফলাফল কী জানতে চেয়েছেন। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এমন কী হলো তা বুঝতে পারছে না রোমেল।

দুপুরে টিভির একটি স্ক্রল দেখার পর থেকেই মায়ের মেজাজ খারাপ। একবার তার বাবার অফিসে আরেকবার বান্ধবীর কাছে মোবাইল ফোনে দৃঢ় স্বরে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তাহলে বাতিলের কথা কেন বলেছিলেন। এরমধ্যে বইয়ের টেবিল একবার গুছিয়ে অনেকটা শান্ত হয়ে বলেন, বাবা তোমাকে পিইসি (প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট ) পরীক্ষা দিতে হবে। সন্ধ্যা থেকে আবার সিরিয়াসলি পড়াশুনা করো।

গতকাল মন্ত্রীসভার বৈঠকে পিইসি পরীক্ষার বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রস্তাব নাকচ হওয়ার সংবাদে শুধু রোমেলের মা-ই নন, রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া হাজারো শিক্ষার্থীর মায়েরা এমন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তারা দারুণ ক্ষুব্ধ।

প্রত্যেকের একটাই কথা মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই কেন এ বছর পিইসি পরীক্ষা হবে না এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী। এমন ঘোষণার প্রেক্ষিতে স্কুলগুলোও কোচিং বন্ধ করে দিয়েছিল।

আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পিইসি বাতিলের প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হলে আলোচনা শেষে এটি নাকচ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি খ্যাতনামা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক জানান, মন্ত্রিসভার এজেন্ডাই পিইসি পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে এমনটা দেখে তিনি তার স্টেশনের স্ক্রলে পিইসি পরীক্ষা হচ্ছে না এমনটা দিতে যাচ্ছিলেন।

কী মনে করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পিএসসি পরীক্ষা বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাব পাঠালেও তা মন্ত্রিসভা নাকচ করে দেয়।

আজ এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে সচিবালয়ে কর্মরত একজন নারী সরকারি কর্মকর্তা তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে টেলিফোন করে পিইসি পরীক্ষা দিতে হবে জানালে ওই শিক্ষার্থী বিস্ময় প্রকাশ করে করে বলে, কি বলছো! দিতে হবে, এই না সেদিন শুনলাম পরীক্ষা হবে না!

রাজধানীর কলাবাগের বাসিন্দা নুরুন্নাহার তার পরিচিত এক গণমাধ্যম কর্মীকে ফোন দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা কিসের সাংবাদিকতা করেন। খুঁজে দেখুন কোচিং বইয়ের ব্যবসায়ী ও  কোচিং সেন্টারের মালিকরা মন্ত্রী সচিবকে কত টাকা দিয়েছে। পিইসি পরীক্ষা বহাল রেখে কোচিং ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা রোজগারের সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পিইসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা আন্দোলনে নামতে পারেন। তাদের অভিযোগ সরকার শিশুদের পড়াশুনাকে ব্যবসায় রূপ দিতে চাইছে। সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর নামে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষকরা নিজেরাও সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর কি হবে তা জানেন না বলে অভিযোগ করেন অনেক অভিভাবক।
 
অন্যদিকে, পিইসি পরীক্ষা বহাল থাকায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হলেও চাঙা বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা। কারণ হিসেবে অনেক অভিভাবক বলছেন,  এ পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল থাকলে তারা প্রাইভেট টিউশনির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা রোজগার করতে পারবে।

এমইউ/এসকেডি

আরও পড়ুন