পোস্টার ব্যানারে সয়লাব ঢামেক হাসপাতাল
অসুস্থ এক কিডনি রোগীকে দেখতে রাজধানীর মগবাজার থেকে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসেন একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক আলতাফ হোসেন ও তার স্ত্রী। রোগীর ওয়ার্ড ও বেড নম্বর সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য না জানায় তিনি জরুরি বিভাগে এসে খোঁজ নেন। রেজিস্ট্রার খাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে ঢামেক হাসপাতাল-২-এর কথা বলেন। তিনি সেখানে রোগীকে খুঁজে পান।
রোগীকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আলতাফ হোসেন তার স্ত্রীকে বলছিলেন, ‘ঢামেক হাসপাতালের একি পরিবেশ। এটা কি হাসপাতাল নাকি নির্বাচনের প্রচার কেন্দ্র।’
তিনি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আরো বলছিলেন, ‘তুমি কী খেয়াল করেছ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ইনডোর, আউটডোর সর্বত্র পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনের ছড়াছড়ি। কোনোটিতে ডাক্তার এবং নার্সের আবার কোনোটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নির্বাচনী এবং ঈদ শুভেচ্ছা। আবার কোনোটিতে সবিনীত ভোট প্রার্থনা কিংবা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষে গুণগান প্রচার।’
‘এর ফলে হাসপাতালের চিকিৎসার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এগুলো দেখার এবং এ সম্পর্কে কারো কি কিছু বলার নেই’ এমনটি বলতে বলতে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলেন।
এমন মন্তব্য শুধু আলতাফ হোসেনের একার নয়, গত কয়েক দিন ধরে যারাই ঢামেক হাসপাতালে আসছেন- তারাই হাসপাতালের সর্বত্র ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনের সয়লাব দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 
সরেজমিন দেখা গেছে, এমারজেন্সি ও ক্যাজুয়েলটি কমপ্লেক্সের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে আশপাশের দেয়ালে আওয়ামী লীগের ৪৪তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী যুব লীগ নেতাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ঢামেক ইউনিট যুবলীগের পোস্টার ঝুলছে। একটু এগোতেই পুলিশ বক্সের ডানে-বামে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টারের ছড়াছড়ি।
ক্যাজুয়েলটি ভবনের পশ্চিম ও উত্তর দিক এবং বার্ন ইউনিটে বিশাল বিশাল ব্যানার। কোনোটি ঢামেক শিক্ষক সমিতির আবার কোনোটি নার্সদের আসন্ন নির্বাচনের। জরুরি বিভাগে নার্সিং স্টেশন, টিকিট ঘর ও হাসপাতালের ভেতর-বাইরে অসংখ্য পোস্টার এবং ব্যানার সাঁটানো। একই অবস্থা ঢামেক হাসপাতাল-২-এর। 
হাসপাতালের যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারের জঞ্জাল সম্পর্কে জানতে চাইলে উপপরিচালক ডা. খাজা মো. আবদুল গফুর বলেন, ‘যত্রতত্র পোস্টার ও ব্যানার লাগানোর ফলে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে- এ কথা সত্য।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে লিখিত চিঠি দিয়ে এগুলো সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
‘এখনো তো দেখা যাচ্ছে’- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. খাজা মো. আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের পরিবেশ নোংরাকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।’
এমইউ/জেডএ/এনএইচ/পিআর