ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

যেসব কারণে কাজে আসছে না বাজার মনিটরিং

মেসবাহুল হক | প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, ২০ মে ২০১৮

>> নিত্যপণ্যের এলসি মূল্য ও বিক্রয় মূল্য পর্যবেক্ষণ করা
>> পরিদর্শন শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল নিশ্চিত করা
>> বাজারে উদ্ভূত সমস্যা, নিজস্ব পরামর্শ ও মতামত প্রদান
>> মনিটরিং টিমের সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়া
>> বাজার মনিটরিংয়ের জন্য রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন
>> মূল্য তালিকা প্রদর্শনের জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে, পাশাপাশি অস্বাভাবিক মজুত ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত ১৪টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। কিন্তু ক্রেতা থেকে শুরু করে বাজার-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারের বাজার মনিটরিং সিস্টেম পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এবার খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তাদের পর্যবেক্ষণে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্রও উঠে এসেছে।

এ কারণে চাহিদার তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত অনেক বেশি থাকার পরও রমজানের শুরু থেকে এসব পণ্যের মূল্য হুঁ-হুঁ করে বেড়েছে।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে বাজার মনিটরিং টিমের কার্যক্রম জোরদারকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় মনিটরিং টিমগুলোর বিভিন্ন গাফিলতির চিত্র উঠে আসে। বাজার মনিটরিং করেও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট ও মনিটরিং টিম সদস্যদের আসতে দেরি হয় বলে টিমের কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হয়।

তিনি বলেন, ‘বাজার পরিদর্শন করে টিম লিডারগণ রিপোর্ট প্রদানে প্রায়শই বিলম্ব করেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে পরামর্শ বা স্পষ্ট মতামত প্রদান করেন না। পরিদর্শিত বাজারে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করলে মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু মনিটরিং টিম এসব করে না। তাই বাজার মনিটরিংয়ের তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায় না।

তিনি পাইকারি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের এলসি মূল্য এবং বিক্রয় মূল্য পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করারও আহ্বান জানান।

সভায় একজন যুগ্ম সচিব জানান, ইতিপূর্বে বাজার পরিদর্শনের দিন পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স পাওয়া যেত। বর্তমানে বাজার-সংশ্লিষ্ট থানা থেকে ফোর্স নিয়ে পরিদর্শন করতে হয়। এজন্য বাজারের নাম পূর্ব হতেই প্রকাশ পেয়ে যায়। যে বাজার পরিদর্শনে যাওয়া হয় সে বাজারের ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যান।

তিনি পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির প্রতিনিধিকে বাজার পরিদর্শনের দিন রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স নিলে বাজার মনিটরিংয়ে অনেক সুবিধা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও এপিবিএন থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাজার পরিদর্শন করে। ফলে বাজার পরিদর্শন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (অবা-৫) বলেন, ঢাকা মহানগরীর অনেক বাজারের ভেতরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। দুর্গন্ধের জন্য সেসব বাজারের ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। তিনি সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধির নিকট কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলো ময়লা-আবর্জনামুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বাজারগুলোতে সবজির দোকানগুলো আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বাজারে যেসব পণ্য যে দামে বিক্রি হয় এর পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট হতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দেখা যায়।

তিনি সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিকে দৈনন্দিন বাজার তদারকির মাধ্যমে এসব সমস্যা দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রতিটি বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শনের জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা যেতে পারে। এটি চালু হলে বিক্রেতারা ক্রেতাদের বিভ্রান্তি করতে পারবেন না। ফলে ক্রেতারা ন্যায্যমূলে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

ডিএমপির প্রতিনিধি সভায় বলেন, ডিএমপিতে পুলিশ সদস্যদের স্বল্পতা রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেসব অনুষ্ঠানের বিদেশি অতিথিদের প্রটোকলে অনেক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকেন।

বাজার মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম আরও জোরদারের জন্য ডিএমপি’র পক্ষ থেকে আগামীতে সকল ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি জানান, মনিটরিং কমিটির কার্যক্রমে তারা সবসময় সহযোগিতা করেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তিনি জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দিয়ে প্রতিটি বাজারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের ৩৫টি পণ্যের মধ্যে ২৫টির তালিকা প্রতিটি বাজারে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রয়াত মেয়রের নির্দেশ অনুসারে বাজার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে।

সভায় বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হলে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনো কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হলে তা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। এখন উৎপাদন ও সরবরাহ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা- জেলা প্রশাসকরাও তা যাচাই করছেন।’

তিনি বলেন, ‘মনিটরিং করার সময় পাইকারি ও খুচরা মূল্য যাচাই করে দেখতে হবে।’ বাজার পরিচ্ছন্নতায় সিটি কর্পোরেশনকে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট টিমের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে বাজার মনিটরিং টিমের সদস্যদের সম্মানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন শুভাশীষ বসু।

সভায় ছয়টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হচ্ছে- বাজার মনিটরিং টিমের কার্যক্রম জোরদারকরণে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটিকে সম্পৃক্ত করা; মনিটরিংয়ের সময় পাইকারি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের এলসি মূল্য ও বিক্রয় মূল্য পর্যবেক্ষণ করা; প্রতিদিন পরিদর্শন শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল নিশ্চিত করা; পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাজারে উদ্ভূত সমস্যা, নিজস্ব পরামর্শ ও মতামত প্রদান করা; মনিটরিং টিমের সবাইকে যথাসময়ে মন্ত্রণালয়ে অথবা টিমলিডার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করা; বাজার মনিটরিংয়ের জন্য রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিএমপিকে অনুরোধ জানান এবং সিটি কর্পোরেশন তার অধীনস্থ বাজারসমূহে সাদা বা কালো বোর্ডের পরিবর্তে মূল্য তালিকা প্রদর্শনের জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপনের বিষয়টি যাচাই করার অনুরোধ জানানো হয়।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতার বিষয়ে কথা বলেছি। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পর্যবেক্ষণে বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব যে, যেসব সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো যেন দ্রুত সমাধান করা হয়।’

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সারা বছরই আমাদের ১৪টি মনিটরিং টিম বাজার তদারকি করে। রমজান উপলক্ষে এবার বেশ কিছুদিন আগে থেকে টিমগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।’

এমইউএইচ/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন