ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্বনির্ভরতার পথে দুগ্ধশিল্প

প্রকাশিত: ০৯:১৩ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

>>> চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ দুধ দেশেই উৎপাদন হয়
>>> দুগ্ধশিল্পে জড়িত প্রায় এক কোটি মানুষ
>>> জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান সাড়ে ৩ শতাংশ

বেকারত্ব দূরীকরণ ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশের সম্ভাবনাময় খাত দুগ্ধশিল্প। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এখন অনেক শিক্ষিত যুব সমাজ এ শিল্পে জড়িত হচ্ছে। এতে দেশের তরল দুধের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা ও বিশুদ্ধ দুধ সরবরাহে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে দেশীয় খামারি ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলো। এভাবেই বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও বেকার সমস্যা সমাধানেও দুগ্ধশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের বেসরকারি এক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৫৮ হাজার ৫৯০টি ফার্ম রয়েছে। যেখানে দুগ্ধ উৎপাদন কাজে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক দেশীয় খামারি। যারা নিজস্ব প্রচেষ্টায় দেশের উন্নয়নের পথে অবদান রেখে চলেছেন। তারা শুধু নিজেদের বেকারত্ব মোচনই নয়, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশীয় এ উদীয়মান শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এ পথে দুগ্ধশিল্পের অবদান অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এক পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক জনপ্রতি মাত্র ১৫০ মি.লি. দুধ পান করে, যা প্রতিবেশী দেশ ভারত (২২৭মি.লি.) ও পাকিস্তানের (৫২০মি.লি.) তুলনায় অনেক কম।

cow

বিজ্ঞাপন

উৎপাদনের রেকর্ড উপাত্ত অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ লাখ ৭০ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ লাখ ৮৩ হাজার টনে।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে এখন দুধের চাহিদা এক কোটি ৫০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকিটা আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। গত ১০ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন ও চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।

দুধের এ চাহিদার অনুপাতে জোগান দিতে দেশজুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশুদ্ধ দুধের জোগান দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুগ্ধ শিল্পকে, গড়ে তুলছেন এর ভবিষ্যৎ। এভাবেই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় কোটি মানুষ জড়িত এ শিল্পের সঙ্গে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিদের উৎপাদিত নিরাপদ দুধ নিয়ে আসছে প্রধান বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এখন আটটি বড় কোম্পানি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রাণ ডেইরি। যারা হাজার হাজার খামারিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাবলম্বী করেছে। তারা খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ থেকে শুরু করে গাভীর চিকিৎসা, পরামর্শ ও অর্থায়নে কাজ করছে। এতে দিন দিন খামার ও খামারির সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করে স্বাস্থ্যসম্মত দুধ বাজারে সরবরাহ করছে। এতে দেশের দুগ্ধশিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

milk

জানা গেছে, আগে বড় একটা সমস্যা ছিল দুধ বিক্রি করা যেত না। গোয়ালেরা দুধ নিলেও দাম কম পাওয়া যেত, আবার সময়মত টাকাও পাওয়া যেত না। এখন বড় কোম্পানিগুলোর দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র গড়ে ওঠায় এটা সহজ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সম্ভাবনাময়ী এ শিল্পের জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বর্তমানে সাড়ে ৩ শতাংশের মতো দেশের মোট জাতীয় আয়ে (জিডিপি) অবদান রাখা দুগ্ধশিল্পের পরিধি আরও বাড়বে বলে মনে করছে খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের চিফ ডেইরি এক্সটেনশন ডা. মো. রাকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রাণ-এর সঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত খামারি রয়েছে। যার মধ্যে ১২ হাজার রেজিস্টার্ড খামারি প্রাণ ডেইরিকে প্রতিদিনই দুধ সরবরাহ করেন।

তিনি জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের পাবনা, নাটোর, রংপুর ও সিরাজগঞ্জে প্রাণ-এর রয়েছে পাঁচটি ডেইরি হাব। প্রতিটি হাবের আওতায় রয়েছে কমপক্ষে ২০টি করে ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার। খামারিরা এসব সেন্টারে এসে দুধ দিয়ে যান। সেখানে প্রাণ-এর প্রশিক্ষিত ডেইরিকর্মী দুধের বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ডেইরি হাবে পাঠায়। মান নিয়ন্ত্রণের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা ও পশু চিকিৎসকরা। এসব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর দুধ নেয়া হয় নরসিংদীর প্রাণ-এর ফ্যাক্টরিতে। সেখানে প্রক্রিয়াকরণের পর বিশুদ্ধ দুধ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

milk

এরকম কঠোর ও বহুমুখী প্রক্রিয়ার কারণে প্রান্তিক পর্যায় থেকেই দুধ সংগ্রহের পদ্ধতি থাকে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকৃত। এছাড়া পর্যায়ক্রমিক মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিশ্চয়তা দেয় বিশুদ্ধতার। এ সব কিছুর মূলেই রয়েছেন খামারিরা। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণেই সম্ভব হয়েছে এরকম স্তরভিত্তিক মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বাস্তবায়ন। তাই সারাদেশে ডেইরি পণ্যের জোগানে ও দেশের দুগ্ধশিল্পের উত্তরণের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে খামারিদের হাত ধরেই। এতে দুধে স্বনির্ভর হচ্ছে দেশ।

এসআই/এএইচ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন