ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অরক্ষিত ভালভ স্টেশনে ‘বড় দুর্ঘটনার’ শঙ্কা

প্রদীপ দাস | প্রকাশিত: ০১:৫৯ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সার্বিক গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ধনুয়া থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে নকলা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার বিদ্যমান ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইনের পাশাপাশি সমান্তরাল ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের লুপলাইন নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে তিতাস গ্যাস অধিভুক্ত এলাকা (গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস অধিভুক্ত এলাকা (বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ) এবং সুন্দরবন গ্যাস অধিভুক্ত (বৃহত্তর খুলনা বিভাগ) এলাকায় বর্ধিত হারে গ্যাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কলকারখানায় গ্যাস দেয়াও সম্ভব হবে। তবে এতে স্থাপিত ভালভ স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভালভ স্টেশনসহ কিছু অবকাঠামো অরক্ষিত থাকায় যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

চলতি বছরের জুনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দেয়া ‘ধনুয়া-এলেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়– নকলা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন (বিডি-পি ৭৮ : ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের এক নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এমন দুর্ঘটনার শঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ওই প্রতিবেদনে প্রকল্পে ব্যয়িত ৮২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার সম্পূর্ণ অর্থই ‘বিনিয়োগ ঝুঁকি’তে রয়েছে বলে মতামত দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও পাঁচটি ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। তিন পর্বের প্রতিবেদনের দ্বিতীয়টিতে ‘ভালভ স্টেশনের নিরাপত্তা ঝুঁকি’র বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

jagonews24

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে ‘বড় দুর্ঘটনা’র শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এসব স্থাপনা জাতীয় গ্যাস গ্রিডের নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই কখনও এসব স্থাপনায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হবে। তাই এসব স্থাপনায় জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিটি স্থাপনা এবং এর আশপাশে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।’

মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রকল্পে স্থাপিত ভালভ স্টেশনগুলোর চারপাশে শুধুমাত্র কাঁটাতারের ফেন্সিং (বেড়া) করা এবং নিরাপত্তার জন্য এখনও কোনো নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়নি। যমুনা নদীর পশ্চিমপাড়ে ইতোপূর্বে স্থাপিত ভালভ স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানকালে কোনো নিরাপত্তারক্ষীকে দেখা যায়নি।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারা (যারা নিবিড় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন) পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটা ভালভ স্টেশন পরিদর্শন করতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষী পাননি। আমাদের ভালভ স্টেশন আরও আছে। প্রকল্পের অধীনে আমরা তিনটা ভালভ স্টেশন বানাচ্ছি। সেই তিনটা নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। এর বাইরেও আরও চারটা পুরাতন ভালভ স্টেশন আছে। ওই চারটা আমাদের সিকিউরিটির আওতায়। শুধু দুটি আছে, সেখানে বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড নিয়োজিত। ওই চারটার মধ্যে একটি নিয়ে তাদের উদ্বেগ। তাছাড়া তারা হয়তো সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে গেছেন, গিয়ে হয়তো তারা সিকিউরিটি পাননি। আমাদের এখানে সিকিউরিটি ফোর্স আছে এবং ২৪ ঘণ্টাই সেখানে সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন আছে।’

jagonews24

সামছুর রহমান আরও বলেন, “সিকিউরিটি ফোর্স না থাকার কারণে তারা বড় বিস্ফোরণের কথা বলেছেন প্রতিবেদনে। এছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, লাইন পাইপ কিছু স্টক করা আছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লাইন পাইপ যেগুলো স্টক করা আছে, এটা নিয়ে আপনারা কনসার্ন কি-না? এটা আমাদের একটা ভাড়া করা ইয়ার্ড। তারা বললেন, ‘না। লাইন পাইপ তো আর চুরি হওয়ার বিষয় নয়। ভালভ স্টেশনে তো আমরা সিকিউরিটি পাইনি, এভাবে তো রাখা ঠিক হবে না…’।”

বিজ্ঞাপন

‘বড় দুর্ঘটনা’র শঙ্কার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এটা তাদের লেখনির দুর্বলতা। আমি তাদের বলেওছিলাম যে, এভাবে কেন বলছেন? দুর্ঘটনা কীভাবে হয়? মনে করেন, এখানে যদি কেউ বোমা ফেলে দেয়, যেহেতু গ্যাসের স্থাপনা– এ রকম ক্ষেত্রে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া এখানে তো এক্সপ্লোসিভে মেটেরিয়াল (বিস্ফোরকদ্রব্য) নেই, সেখানে যদি সিকিউরিটি নাও থাকে, অটো এক্সপ্লোশন (বিস্ফোরণ) হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের কোনো ভালভ রিজেক্ট নয় বা ব্যান্ডিং নয়। এখানে কোনো প্ল্যান্টও নাই। তো এটা একটা সিম্পলি ভালভ স্টেশন। তারা মূলত নিরাপত্তার দিক থেকেই কনসার্ন। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা যে রিপোর্টটা লিখলেন, সেটা প্রফেশনালি হয়নি।’

ভালভ স্টেশন নির্মাণ পরিকল্পনায় দুর্বলতা

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়নাধীন দুটি আরএমএস ও একটি এমএমএস ছাড়া লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনগত সুবিধার জন্য তিনটি ভালভ স্টেশন রয়েছে। ধনুয়া থেকে প্রথম ভালভ স্টেশনটির দূরুত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। এখানে বিবিয়ানা-ধনুয়া গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের অধীনে ২৪ ইঞ্চি লাইনের প্রায় সমান্তরালে লুপলাইন নির্মাণ হয়েছে। স্টেশনটির প্রবেশপথ, সীমানার প্রাচীরও ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কাজটি পাইপলাইন ঠিকাদার মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত। পাইপলাইনটির ‘ক্যাথডিক প্রটেকশন’ ব্যবস্থা কতটা কার্যকর রয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত পরীক্ষার জন্য সিপি টেস্ট পয়েন্টসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মূল রাস্তা থেকে ভালভ স্টেশন পর্যন্ত সংযোগ সড়ক এবং ভালভ স্টেশনটির চারপাশে ইতোমধ্যে ফেন্সিং নির্মাণ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

jagonews24

দ্বিতীয় ভালভ স্টেশনটি প্রথম ভালভ স্টেশন থেকে নিয়মমাফিক দূরত্বে অবস্থিত। এই স্টেশনে প্রবেশের জন্য একটা বাজার এলাকা অতিক্রম করতে হয়। এই স্টেশনে পাইপসংশ্লিষ্ট কার্যাদি সম্পন্ন হয়েছে। এখানেও পাইপলাইনের ‘ক্যাথডিক প্রটেকশন’ ব্যবস্থা কতটা কার্যকর রয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার জন্য সিপি টেস্ট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া স্টেশনটিতে প্রবেশের জন্য মূল রাস্তা হতে ভালভ স্টেশন কম্পাউন্ড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক ও ভালভ স্টেশনটির চারপাশে ইতোমধ্যে ফেন্সিং নির্মাণ হয়েছে। ল্যান্ড ফিলিংয়ের কাজ চলমান এবং স্টেশনটির রঙের কাজ এখনও সম্পন্ন হয় নাই। উল্লেখ্য, আনুমানিক ১৫০ ফুট দূরেই ব্রহ্মপুত্র বেসিন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত লাইনের জন্য একটি ভালভ স্টেশন রয়েছে।

স্টেশনের প্রবেশপথটি বাজার এলাকা শুরু হওয়ার আগেই অন্য পাশে অবস্থিত। দুটি পাইপলাইনের মধ্যবর্তী স্থানটি অধিগ্রহণপূর্বক একটি কম্পাউন্ডের মধ্যে দুটি ভালভ স্টেশন সংকুলান করা যেত। তাতে নিরাপত্তাজনিত এবং পরিচালন ব্যয় কমানোর সুযোগ ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পিডি/এমএআর/এমকেএইচ

বিজ্ঞাপন