ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

দ. এশিয়ায় সবচেয়ে আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনা করবে ঢাকা ওয়াসা

মুসা আহমেদ | প্রকাশিত: ১১:১৯ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। দীর্ঘ এই সময় ঢাকার জলাবদ্ধতা, বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করা পানিতে ময়লা ও নাজুক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তাকসিম এ খান

সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মুসা আহমেদ

জাগো নিউজ: আপনি টানা ষষ্ঠবারের মতো ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ এ সময়ে ঢাকা ওয়াসার সফলতা কী কী?

তাকসিম এ খান: ঢাকা ওয়াসা মূলত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকাসহ সারাদেশে গতানুগতিক পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন চায়। তখন আমরা একটি প্রোগ্রাম (কর্মসূচি) হাতে নিয়েছিলাম। এই প্রোগ্রামের নাম ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা গতানুগতিক পানি ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে চেষ্টা করেছি। এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা করতে কাজ করছি। এ জন্য আমরা ২০২১ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম। আশা করি চলতি বছরের মধ্যে আমরা এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। এই লক্ষ্য নির্ধারণে আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। দেশ ডিজিটাল হবে। তখন বলেছিলাম, আমরাও ঢাকা ওয়াসাকে ডিজিটাল করব। এখন আমরা তা অনেকাংশেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

আগে ঢাকা শহরে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ পানি পেত। বাকি মানুষ পানি পেত না। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল না অনেক এলাকায়। পানির জন্য হাহাকার লেগেছে বহুবার। স্থানীয় এমপি এবং অন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই পানি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসায় সেনাবাহিনীর লোক নিয়োগ দেয়া হতো। এখন ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি। ওয়াসার দৈনিক পানির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬৫ কোটি লিটার। ঢাকা শহরে শীত-বর্ষা অনুযায়ী ২১০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার পর্যন্ত চাহিদা থাকে। তবে কোথাও পানি সঙ্কট হলে বা এমন সমস্যার তথ্য পেলে আমরা তা তাৎক্ষণিক সমাধান করছি। ফলে সামগ্রিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি নেই।

jagonews24

ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন নাগরিকদের চাহিদার চেয়ে বেশি, দাবি এমডির

আগের চেয়ে এখন এই পানির গুণগতমানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য পানির বিতরণ কার্যক্রম বা নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করা হয়েছে। এর সঙ্গে পানির অপচয় রোধ করা হচ্ছে, যা এশিয়ার অন্যান্য দেশে গড়ে ৪০ ভাগ পানি সিস্টেম লস বা অপচয় হয়। এটা ঢাকা ওয়াসায় মাত্র পাঁচ ভাগ। এমন ব্যবস্থাপনা ইউরোপের দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে নেই।

ঢাকা ওয়াসার আরেকটি সফলতা হলো সক্ষমতা বৃদ্ধি। আমরা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসায় রাজস্ব আয়সহ অনেক উন্নয়ন করতে পেরেছি। এসব সক্ষমতা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা (বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা) ঋণ দেয়ার আগে দেখে। এক্ষেত্রে আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। ফলে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে এখন আর তাদের ভাবতে হয় না যে, ঋণের টাকা ফেরত পাবে কি-না। এখন ঢাকা ওয়াসা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার ঋণ যথাসময়ে ফেরত দিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে সরকার ঋণ শোধ করার জন্য কিস্তি নির্ধারণ করে দেয়। বছরে গড়ে ৩০০ কোটি টাকার মতো ঋণ পরিশোধ করে ঢাকা ওয়াসা। ফলে আমরা ডিফল্টার বা ঋণখেলাপি নই। অনেকেই বলতেন এত ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করবেন কীভাবে! কিন্তু আমরা ঋণ পরিশোধ করে তা দেখাতে পেরেছি।

ওয়াসার আরেকটা সফলতা হচ্ছে সুশাসন বা গুড গভর্ন্যান্স। আমরা এখন আয়-ব্যয়ের অনুপাত নির্ধারণ করতে পেরেছি। আমরা যদি ১০০ টাকা আয় করি, তাহলে অপারেশন এবং মেইনটেন্যান্স সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা ব্যয় করলে ব্যবস্থাপনায় সুশাসন আসে। এর চেয়ে বেশি নয়। কম করলে আরও ভালো। চলতি বছর আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ হচ্ছে ৬২ টাকা। এর মাধ্যমে দুর্নীতি আরও কমে আসবে। যদিও আগে অপারেশন এবং মেইনটেন্যান্সে ১০০ টাকার মধ্যে ৯৫ টাকাই খরচ করা হতো। ফলে রাজস্ব আয়ের কোনো সুযোগই ছিল না।

জাগো নিউজ: ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ঢাকা ওয়াসায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

তাকসিম এ খান: পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনার কথা আমি আগেই বলেছিলাম। এর মধ্যে আমরা যে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছি, তা পরিবেশবান্ধব নয়। এতে ধীরে ধীরে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা মোটেই হতে দেয়া উচিত নয়। আমরা গেলাম সারফেস ওয়াটার (ভূ-উপরিস্থ পানি) ব্যবস্থাপনায়। এজন্য ২০১২ সালে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। সেখানেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ওয়াসাকে যত দ্রুত সম্ভব সারফেস ওয়াটারে যেতে হবে।

jagonews24

ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান

যদিও এই কাজটি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কারণ, ঢাকার চারপাশে যে নদীগুলো (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা) রয়েছে সেগুলোর পানি এখন দূষিত। আগে এসব নদী থেকে পানি নেয়া হলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা পানি আনার জন্য চলে গিয়েছি পদ্মা ও মেঘনা নদীতে। কাজেই আমরা সারফেস ওয়াটারে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আমরা যে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলো হাতে নিয়েছি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারব। ইতোমধ্যে সায়েদাবাদ ওয়াটার প্ল্যান্টের তৃতীয় ভাগের কাজ শুরু হয়েছে। এটা শেষ হলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। তখন ঢাকায় ৭০ ভাগ সারফেস ওয়াটার ও ৩০ ভাগ ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তখনই পানি ব্যবস্থাপনা হবে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই।

জাগো নিউজ: এখন বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির মান নিয়ে নাগরিকদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ পানি নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কি-না?

তাকসিম এ খান: আমরা জনগণকে খাবার পানি দিচ্ছি না। খাবার পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান থাকে। আমরা ওয়াসার লাইনের পানিতে সেটা দেই না। আমরা দেই খাওয়ার উপযোগী পানি। যে পানি নাগরিক পান করতে পারবেন, যদি এই পানিতে ময়লা না থাকে। এছাড়া পানির ট্যাংক যদি পরিষ্কার থাকে অথবা না থাকে তাহলে এই পানি পান করা যাবে ১০ মিনিট ফুটিয়ে।

এখন খাবার পানি বলতে যা বোঝায় তা হলো ড্রিংকিং ওয়াটার বা খাবার পানি। এটা বোতলজাত করা। সেটা ঢাকা ওয়াসা কোনো দিন বানাতে পারবে না। তবে আমরা পানযোগ্য পানি নাগরিকদের দিয়ে থাকি। আমরা যখন পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন করি তখন তা ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো যখন এই পানি পাম্প থেকে রাস্তা দিয়ে বাসা পর্যন্ত যায়, কিছু ক্ষেত্রে পাইপ ফুটো থাকে। ফলে বাইরের বর্জ্য পাইপে ঢোকে। এটা স্থানীয় সমস্যা। এমন ফুটো বা ময়লা পানির খবর জানতে পারলে আমরা সেটা রিফাইন (সংস্কার) করে দেই। এটা স্থায়ী কোনো সমস্যা নয়। এখন আমরা বলতে পারি ৯০ ভাগ পানি স্বচ্ছ থাকে। ভবিষ্যতে এই স্বচ্ছতা ১০০ ভাগে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য ঢাকা শহরকে ১৪৫টি ক্লাস্টারে (ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া বা ডিএমএ) ভাগ করেছি। ইতোমধ্যে ৬৪টি ডিএমএর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ডিএমএর কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে। এরপর আর পানির মান নিয়ে সমস্যা থাকবে না।

জাগো নিউজ: ঢাকা মহানগরীর সীমানা বেড়ে (৩৬টি ওয়ার্ড) এখন দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। নতুন এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ওয়াসা কী উদ্যোগ নিয়েছে?

তাকসিম এ খান: ঢাকার সীমানা ইতোমধ্যে বহুগুণ বেড়েছে। নতুন ওয়ার্ডগুলো নিয়ে আমরা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি। সে অনুযায়ী সেখানে আমরা কাজ শুরু করব। তবে কাজটি শেষ করতে আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় বছর লাগবে। কিন্তু এই কাজটি করতে গেলে পর্যাপ্ত তহবিল লাগবে। এই টাকা সরকারকে দিতে হবে। এই ইউনিয়নগুলোতে ডিএমএ পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করা হবে।

জাগো নিউজ: ওয়াসার বোতলজাত পানি ‘শান্তি পানি’। এই পানি বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন?

তাকসিম এ খান: শান্তি পানি বোতলজাত করে বিক্রি করা ওয়াসার কাজ নয়। ঢাকা ওয়াসার কাজ হলো বাসা-বাড়িতে নাগরিকদের পানি সরবরাহ করা। দেশে প্রাইভেট সেক্টরে বিভিন্ন কোম্পানি বোতলজাত পানি উৎপাদন করছে। কিন্তু কেউ জানে না এসব পানির মানদণ্ড কী এবং মানসম্মত পানি উৎপাদনের খরচ কত হয়। ওয়াসার এই পানি হচ্ছে একটি মডেল বা মানদণ্ড। বোতলজাত পানি কেমন হবে, শান্তি-পানি তার উদাহরণ। এই পানির মধ্যে যা যা উপাদান আছে অন্যান্য কোম্পানিকে পানি উৎপাদনে তা করতে হবে। তা না করলে এই কোম্পানিগুলো দোষী সাব্যস্ত হবে।

jagonews24

ঢাকা ওয়াসা ভবন

জাগো নিউজ: কয়েক বছর পরপরই ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়। এ পানির দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ আছে কি-না। নাকি প্রতি বছরই দাম বাড়ানো হবে?

তাকসিম এ খান: ২০০৭ সালে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগে এক টাকায় চার বালতি পানি বিক্রি হতো। এখন শহরে ১৪ টাকায় এক হাজার লিটার পানি বিক্রি করছে ওয়াসা। বাজারমূল্য হিসাব করলে এই পানির দাম ৫০ টাকা হওয়া উচিত। তবে এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ২৮ টাকা। বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৪ টাকায়। বাকি ১৪ টাকাটা কে দেবে? অন্যান্য দেশের ব্যবস্থাপনায় চললে হয়তো ২৪ টাকার কমে দিতে চাইবে না। এই হিসাবে পানির দাম কমানোর সুযোগ নেই।

জাগো নিউজ: ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বর্ষার পানি অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ছিল। ওয়াসা ব্যর্থ হয়েছে। এখন সেই দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়েছে। এখানে কি ওয়াসার ব্যর্থতা ছিল?

তাকসিম এ খান: আগে ঢাকা শহরের বর্ষার পানি ও জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা মিউনিসিপাল করপোরেশন তথা ঢাকা সিটি করপোরেশনের। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশন থেকে নিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে দেন। কিন্তু তার এই ভুল সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কেউ কথা বলেননি। বলতে পারেননি এটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ এ সিদ্ধান্ত ওয়াসা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পরে এভাবেই প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিটি করপোরেশনের বদলে ঢাকা ওয়াসা করবে। এরপরই জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়।

jagonews24

এখন ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

২০১২ সালে আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি, এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার জন্য। প্রতি বছরই চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব হস্তান্তর হয়নি। আমরা চিৎকার করে বলেছি, ওই সিদ্ধান্ত এরশাদের ভুল ছিল। সবশেষ ২০১৯ সালেও আমরা চিঠি দিয়েছি। তখন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ জলাবদ্ধতার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে আট বছর সময় লাগছে। অথচ সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ এ জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তারা কী করেছে? আমরা তো তাদের সেই ২০১২ সাল থেকেই বলে আসছি। আগ থেকেই যদি জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন নিতো, তাহলে ঢাকা শহরের পানির মান আরও বাড়ানো সম্ভব হতো। জলাবদ্ধতা নিয়ে ওয়াসাকে মাথা ঘামাতে হতো না। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসার কোনো বাজেটও ছিল না। এটা ছিল উটকো ঝামেলা।

জাগো নিউজ: ঢাকা ওয়াসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

তাকসিম এ খান: ঢাকা নিয়ে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান করা রয়েছে। আমরা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছি। এ সময় পর্যন্ত পানি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া ২০৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কী হবে তা মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে। আমরা এখন বাস্তবায়ন করছি। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ এখন আমরা দেউলিয়া নই। আমাদের অনেক উন্নয়ন সংস্থা ঋণ দিতে চায়। কিন্তু আমরা সবার ঋণ নিচ্ছি না। যেসব উন্নয়ন সংস্থা সহজ শর্তে ঋণ দেয় তাদের ঋণ গ্রহণ করছি।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ঢাকা ওয়াসাকে লোন দিতে চেয়েছিল। আমরা সেটা নেইনি। আমাদের সঙ্গে তাদের শর্ত এবং সময় মেলেনি। পরে আরেকটা ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের সঙ্গে চুক্তি করেছি।

আমাদের রোড ম্যাপ পরিষ্কার। ঢাকা ওয়াসা সরকারের একটি করপোরেট ম্যানেজমেন্ট ও বাণিজ্যিক সংস্থা। এ সংস্থার রয়েছে অত্যন্ত প্রগতিশীল একটি আইন। এ আইনের মাধ্যমে কাজ করলে আমাদের কেউ কোনোভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। আইনের মাধ্যমে আমাদের যা যা করণীয় আমরা তাই করছি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের সহায় আছেন।

jagonews24

ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান

এখন ঢাকা ওয়াসা স্মার্ট ম্যানেজমেন্টে যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার প্রত্যেকটি কাজ কম্পিউটার, ডিজিটাল ও অটোম্যাশনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে এই কাজটি এগিয়ে নেবে ঢাকা ওয়াসা। কোনো টেবিলে ফাইল থাকবে না, সবকিছু হবে কম্পিউটার ও মোবাইলে। এছাড়া এখন আমরা ই-নথি ব্যবহার করছি। টেন্ডার হচ্ছে ইজিপিতে। সেবা ও অভিযোগ হচ্ছে ই-সলিউশন কমপ্ল্যানে। অর্থাৎ সবকিছুই হবে আধুনিক প্রযুক্তিতে। এর মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি থেকে ঢাকা ওয়াসা মুক্ত হবে। একইভাবে ঢাকা ওয়াসার উৎকর্ষ বাড়বে।

জাগো নিউজ: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তাকসিম এ খান: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এমএমএ/এমএসএইচ/এইচএ/এমকেএইচ