ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

এখন আর বকশিশ দিতে হয় না

প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

এখন আর বকশিশ দিতে হয় না। এর ফলে হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি কমেছে শতভাগ। অথচ কিছুদিন আগেও এসব রোগীর কাছে ধাপে ধাপে বকশিশ আদায় করতো হাসপাতালটির আয়ারা। আর বকশিশ না দিলে রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ হয়রানি করতেন তারা।

রোগীদের এসব অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এসব সংবাদে অবশেষে টনক নড়েছে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষের। কিছুদিন হলো হাসপাতালের দেয়ালে লাগানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা রয়েছে- ‘সেবার জন্য বকশিশ দেওয়া ও নেওয়া থেকে বিরত থাকুন’।

এরপর থেকেই মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে বকশিশের কবল থেকে রেহাই পেয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনরা।

shohag
বুধবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।

হাসপাতালের ২য় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রসূতি রোগীরা যে যার মতো করে টিকিট কাটছেন। এরপর নিজেই সেই টিকিট নিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তারের কাছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো আয়া সেখানে যাননি। অথচ এর আগে রোগীদের কাছ থেকে টিকিট হাতিয়ে নিতেন আয়ারা। এরপর বলতেন, ‘চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য কিছু দেন’। টাকা না দিলে টিকিট ভেতরে জমা দিতেন না তারা। একইভাবে রোগীদের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকলে সেই স্লিপটিও টাকা না দিলে আটকে রাখতেন আয়ারা।

সবচেয়ে করুণ চিত্র ছিল অপারেশন থিয়েটারের। সেখানে বাচ্চা প্রসব করা মাত্রই জোর করে আয়ারা বাচ্চাকে কোলে নিতেন এবং মোটা অংকের টাকা না দিলে বাচ্চাকে স্বজনদের হাতে দিতেন না। টাকা দেয়ার পর একজন আয়া আরেকজন আয়ার কোলে বাচ্চাকে দিয়ে দিতেন। এভাবে টাকা পাওয়ার পরেই ধারাবাহিকভাবে সব আয়া বাচ্চার স্বজনদের কাছে টাকা আদায় করতেন। এখন সেই হয়রানির অবসান ঘটেছে। স্বস্তি ফিরে পেয়েছে রোগীরা।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শারমিন (২৪) জানান, ৬ মাস ধরে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ৫ মাসে তিনি আয়াদের হয়রানিতে অতিষ্ট ছিলেন। একমাস হলো তিনি কোনো রকমের হয়রানি ছাড়া হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণ করছেন।

তিনি বলেন, আগে সকাল ৮টায় হাসপাতালে এসে দুপুর পর্যন্ত সময় চলে যেত ডাক্তার দেখাতে। এখন সকালের মধ্যেই হয়ে যায়। আর আগে আয়ারা জোর করে কাগজ নিয়ে নিত। টাকা না দিলে দিত না। এখন আর কাউকে টাকা দিতে হয় না। এজন্য তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

service
একইভাবে ধন্যবাদ জানালেন নাজনীন নামের এক রোগী। তিনি বলেন, এখন সকল সেবা দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। অথচ আগে টাকা দিয়েও এত দ্রুত সেবা পাওয়া যেত না। পদে পদে টাকা নিত আয়ারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

বকশিশ চাওয়ার ব্যাপারে ২য় তলার এক আয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা না বলে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়েন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন গার্ড বলেন, ভাই আয়ারা আর কয় টাকা বেতন পায়। যা বেতন পায় তা দিয়ে চলা তাদের জন্য খুব কঠিন। তাই তারা রোগীদের কাছে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য কিছু আবদার করে। আর বকশিশের পরিমাণও তো বেশি না মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকা। যাহোক যা হয়েছে ভালোই হয়েছে বললেন তিনি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে পরিচালক মনিরুজ্জামান সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অফিসে টেলিফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও বার বার লাইন কেটে গেছে।

এমএএস/এসএইচএস/এবিএস