ধানসিঁড়ি এখন মৃতপ্রায়
কবি জীবনানন্দ দাশের সেই ধানসিঁড়ি এখন আর ধানসিঁড়ি নেই। নেই সেই স্রোত, নেই যৌবন। কালের প্রবাহে শীর্ণ হতে হতে আজ মৃতপ্রায়। শীতকালে জল শুকিয়ে এমনই হয় যে হেঁটে হেঁটে নদীটি অবলীলায় পার হওয়া যায়।
সরেজমিনে ধানসিঁড়ি তীরের রূপসি গ্রামে গিয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা ওয়াহেদ আকনের সঙ্গে। ষাটোর্ধ্ব ওয়াহেদ আক্ষেপ করে বলেন, `নদীর মুহে (মুখে) চর পড়ছে। আগের মতো খারি (গভীরতা) নাই। হুনছি এই নদী দিয়া বড় স্টিমার চলতো। আমরাও দেকছি, ধানসিঁড়ি নদীতে অনেক তুফান অইতো। স্রোত আছিলো মেলা। এহোন তো মইরা গেছে।`
একই গ্রামের ৮০ বছর বয়সী হানিফ মুন্সি বলেন, এটা অনেক বড় নদী ছিল। বড় বড় জাহাজ চলত এর বুকে। এখন ছোট ট্রলারও চলতে পারে না।
তিনি বলেন, সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান নদের মোহনায় বিশাল চর জেগে ওঠায় এ নদীর মুখের দক্ষিণ পাশের চরকাঠি এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর মুখ ছোট ও গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে শেষ প্রান্তে গিয়ে নদীটি প্রায় মরে গেছে।
ওয়াহেদ আকন ও হানিফ মুন্সি জানান, দেশ-বিদেশের বহু মানুষ আসেন এ নদী দেখতে। কিন্তু অনেকেই এসে হতাশ হন। কারণ, ধানসিঁড়ি এখন যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ধানসিড়ি তীরের বাসিন্দা হয়ে তারা গর্ববোধ করেন এবং এ নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত খননের দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝালকাঠি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মহসিনুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ধানসিঁড়ি নদীর উৎস মুখ থেকে সাড়ে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে খননের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ওই সময় সাড়ে চার কিলোমিটার খনন করা হয়েছিল। নিয়মিত বরাদ্দ না দেয়ায় পরের সাড়ে ৩ কিলোমিটার আর খনন করা হয়নি। প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ধানসিঁড়ি নদীর রাজাপুর অংশের অবস্থা বড়ই করুণ। ধানসিঁড়ি নদীর রাজাপুর অংশে খননের অভাবে ও বাগড়ি বাজার গরুর হাট এলাকায় দখল হওয়ার কারণে নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজাপুর অংশের পিংড়ি-বাগড়ি-বাঁশতলার মোহনা পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। কিন্তু উৎস মুখ ভরাট হওয়ায় নদীর ওই অংশ আবারও ভরাট হয়ে গেছে। সর্বত্র কচুরিপানা আটকে আছে।
নদী তীরের উপজেলার উত্তর-পূর্ব বাগড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস হাওলাদার ও আউয়াল গাজী জানান, খননের সময় পানির চাপের মৌসুম ছিল। এজন্য ঠিকাদার দু`পাড়ের মাটি ছেঁটে নদীর মধ্যে ফেলেছে। এতে সঠিকভাবে গভীর না হওয়ায় এবং পুরো নদী না কাটায় খননকৃত অংশও দ্রুত ভরে গেছে।
মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মঠবাড়ি ইউনিয়নের মধ্যে ধানসিড়ি নদীর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ নদীর অবস্থা এতটাই করুণ যে নৌকা চলাচলও করতে পারছে না। খননের সময় রাজাপুর অংশেরও অর্ধেক খননের কারণে খননকৃত অংশ দ্রুত ভরে গেছে। তাছাড়া যেখানে সেখানে মাছ ধরার ঝাউ দেয়ার কারণেও বাঁশতলা মোহনার বিভিন্ন পয়েন্টে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে ধানসিঁড়ি।
এসএস/এমএস