ওলামা দলে যুক্ত হচ্ছেন না প্রখ্যাত আলেমরা
ইসলামী চিন্তাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এক প্লাটফর্মে রাখার চিন্তা থেকে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল গঠন করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ওলামা দল গঠন করা হলেও কার্যত প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না সংগঠনটি। বর্তমানে সংগঠনটির কর্মী সংখ্যা নেই বললেই চলে। এমনকি যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামা দলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর ওলামা দলের কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। দুই বছর পর কমিটি করার কথা থাকলেও গঠনতন্ত্র লংঘন করে গত ১১ বছর ধরে বর্তমান কমিটির নেতারাই সংগঠনটি পরিচালনা করছেন।
এদিকে, সর্বশেষ ঘোষিত কমিটিতে হাফেজ আব্দুল মালেককে সভাপতি এবং হাফেজ মাওলানা নেছারুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। টানা ৯ বছর ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় ইতোমধ্যেই দলটির অনেক নেতা বয়োবৃদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। আবার কেউ কেউ মারা গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে সংগঠনটির কর্মী সংখ্যা নেই বললেই চলে। এমনকি কমিটির ১৫১ নেতার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০/২৫ জন মাঝে মধ্যে বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সারাদেশে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২০টির মতো জেলা কমিটি সক্রিয় রয়েছে। বাকি জেলাগুলোতে সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওলামা দলের বর্তমান কমিটি দীর্ঘ ১১ বছরে কেন্দ্রীয় সম্মেলন তো দূরের কথা একটি বর্ধিত সভা কিংবা পরিচিতিও করতে পারেনি। সরকার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি সরকারের কোনো কর্মকাণ্ড বা ইসলামবিরোধী কোনো ইস্যুতে একটি বিবৃতি দিতেও দেখা যায়নি। দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করলে কোনো প্রস্তুতি সভাও করেনি সংগঠনটি। শুধু জানাজা, দোয়া আর মিলাদেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম।
২০১২ সালের ৬ আগস্ট অচলাবস্থা নিরসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে নতুন কমিটি দেয়ার আবেদন জানান দলটির ১১৮ জন নেতা। একইসঙ্গে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সংগঠনটির নাজুক পরিস্থিতির কথা অবহিত করেন তারা। এরপর মির্জা আলমগীর ওলামা দলের সাংগঠনিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেন বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে। পরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন তিনি। তবে এরপর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ জানা যায়নি।
ওলামা দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, দলীয় কর্মসূচিগুলোয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভাগ করে কোরআন তিলাওয়াত পড়াতেই ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ-মাহফিল বা দলীয় কোনো নেতার জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী এবং জানাযায় গুটি কয়েকজন নেতা হাজির হন। ইসলামবিরোধী কোনো ইস্যুতে রাজপথে নামা তো দূরের কথা একটি বিবৃতি দেয়নি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, যোগ্য নেতৃত্বের হাতে সংগঠনটির দায়িত্ব দিলে দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামা অন্তর্ভুক্ত হতেন। এছাড়া সারাদেশে জেলা ও থানা কমিটিগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে পারত ওলামা দল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ওলামা দল গঠন করার পর নব্বই দশকে সংগঠনটির প্রথম কাউন্সিলে মাওলানা এসএম রুহুল আমিন সভাপতি ও আলহাজ মোয়াজ্জেম হোসেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ১৯৯৭ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন দলের চেয়ারপারসন। পরবর্তীতে নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বিএনপি থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেন।
গতিহীন সংগঠনির নাজুক অবস্থার কারণে ওলামা দলে যুক্ত হচ্ছে না দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামারা। বর্তমান কমিটিতে এমন কোনো আলেম নেই যাকে দল মত নির্বিশেষে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। এমনকি সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য আলেম ওলামাদেরকে সংগঠনটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে বিএনপিরও কোনো উদ্যােগ গ্রহণ করেনি।
বর্তমান কমিটির সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেককে জাগো নিউজকে বলেন, কমিটি গঠনের কাজ চলছে। পাশাপাশি আমাদের সাংগঠনিক কাজও অব্যহত রয়েছে। যেসব জেলা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সেখানে আমরা কমিটি দিচ্ছি।
কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ফলে নতুন কমিটির বিষয়ে কোনো কাজ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ড যখন নির্দেশ দেবে তখনই কমিটি গঠন করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলকে সামনে রেখে নতুন কমিটির জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে নানা তদবির করছেন ওলামা দলের নেতারা। দুটি নতুন কমিটি তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। সভাপতি পদে বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি পদে বর্তমান প্রচার সম্পাদক দীন মোহাম্মদকে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসনের দফতরে জমা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, সভাপতি পদে বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি পদে মাওলানা আবদুল মজিদকে রেখে আরেকটি তালিকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহাজাহানের দফতরে জমা দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সংগঠনটির শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল মজিদ, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা কারী গোলাম মোস্তফা, ওলামা দলের শীর্ষ নেতা হাফেজ কারী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মাওলানা শামীমুর রহমান, মাওলানা আলমগীর হোসেন খলিলি, হাফেজ জসিম উদ্দিন, হাফেজ নুরুল হক, মাওলারা সেলিম রেজা, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা তাজুল ইসলাম।
এমএম/আরএস/আরআইপি