ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে শেরে বাংলায় সেই ‘কালচে পিচ’!
আগে অনেকবারই এমন হয়েছে। কোনো আন্তর্জাতিক আসরে করুণ পরিণতি বা যাচ্ছেতাইভাবে হারের পর জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড কিংবা নেদারল্যান্ডসের মতো কোনো দলকে দেশে এনে আবার জয়ের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ।
শুধু নিজেদের চেয়ে কম শক্তির দলকে দাওয়াত দিয়ে এনে ঘরের মাটিতে জেতাই নয়; ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে-অতীতে বারবার, বহুবার বাংলাদেশ শেরে বাংলার সেই স্লো-লো আর খানিক টার্নিং পিচে খেলেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছে। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আবার জয়ের ধারায় ফিরেছে। এবারও কি তেমন ঘটবে?
যদিও প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ মোটেই হেলাফেলার দল না। শাই হোপের নেতৃত্বে যে দলটি এবার খেলতে এসেছে মিরাজের বাহিনীর সাথে, সে দলটির কাছেই কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরে ৩-০ তে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবং সেখান থেকেই আসলে শনির দশা শুরু।
তারপর আর সে খারাপ সময় কাটেনি। টানা ৪ সিরিজ হার এবং ১২ ম্যাচের ১১টিতে পরাজিত হওয়া। বাংলাদেশ আর ‘বৃহস্পতির’ দেখা পায়নি।
বাংলাদেশ দলের করুণ দশা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ৩ ম্যাচের সিরিজে চরমভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে পারা কঠিন। অনেকের মতে, একমাত্র উইকেটের সহায়তায়ই সেটা সম্ভব। না হলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে বাজে ফর্ম, ব্যাটিংয়ের যে জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা, তা দিয়ে ক্যারিবীয়দের হারানো কঠিন হবে।
একমাত্র শেরে বাংলার সেই ‘টিপিক্যাল’ পিচে খেলা হলেই হয়তো ক্যারিবীয়দের সাথে জয়ের দেখা মিলতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, আবারও কি সেই ঠেলাগাড়ির গতি ও হাঁটু-পেট উচ্চতার পিচে হবে খেলা? যেখানে একঝাঁক স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমে শাই হোপের ক্যারিবীয় বাহিনীকে বধ করবে মিরাজের দল? এমন একটা গুঞ্জন কিন্তু আছে।
কিন্তু তা কী করে সম্ভব? গামিনি ডি সিলভার বিদায়ের পর টনি হেমিং এসে নাকি শেরে বাংলার উইকেট ও আউটফিল্ডকে লর্ডস, ওভাল, মেলবোর্ন, সিডনি, এডিলেড, সেঞ্চুরিয়ন, ওয়ান্ডারার্স, জামশেদপুর, ওয়াংখেড়ের মতো বানিয়ে ফেলেছেন! সেই পিচ কি এই কদিনে স্লো ও লো করা সম্ভব? সত্যিই বাংলাদেশ আবার স্লো, লো আর খানিক টার্নিং পিচেই ফিরে যাচ্ছে?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, শোনা যাচ্ছে হোম অব ক্রিকেটের পিচ নাকি আবার আগের মতই মন্থর গতির, নিচু বাউন্সি ও টার্নিং হবে?
ফাহিমের জবাব, না মনে হয়। উইকেট আগের মত হবে না। ওরকম উইকেট হবে না বলেই মনে হয়। আগের তুলনায় অনেক ভালো হবে। ওয়ার্ল্ডকাপ খেলতে যাবার আগে আমাদের নারী দল শেরে বাংলার নতুন করে পরিচর্যা করা উইকেটে প্র্যাকটিস করেছে। আমি সে সময় উপস্থিত থেকে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে উইকেট আগের চেয়ে বেশ ভালো। গতি ও বাউন্স স্বাভাবিক। তবে একটু টার্ন থাকতে পারে। কিন্তু পেস ও বাউন্স ভালো থাকবে। আদর্শ ওয়ানডে পিচ বলতে যা বোঝায়, এবার তা দেখা যাবে। উইকেট সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে।
নাজমুল আবেদিন ফাহিম যাই বলুন না কেন, শেরে বাংলার পিচের চরিত্র সম্ভবত আবার আগের মতই হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবার সেই চিরচেনা শেরে বাংলার পিচেরই দেখা মিলবে। মাঝে টনি হেমিংয়ের হাতের ছোঁয়ায় পিচের রং খানিক বাদামি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত কদিনে (বিশেষ করে আফগানদের কাছে নাকাল হওয়ার পর) তার রং আবার কালচে দেখা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, শেরে বাংলার উইকেট আবার আগের মতই স্লথ, মন্থর ও খানিক স্পিন সহায়ক থাকবে।
তার দল হোম অ্যাডভান্টেজ নেবে কিনা? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে এ প্রশ্ন করা হলে শুক্রবার মধ্যাহ্নে সংবাদ সম্মেলনে এসে হেড কোচ ফিল সিমন্সের জবাব, আমার চোখে উইকেট মিরপুরের চিরচেনা উইকেটের মতই দেখাচ্ছে। এতে সাধারণত কিছু টার্ন থাকে। হয়তো এবারও তাই থাকবে।
সত্যিই যদি তাই থাকে, উইকেটের চরিত্র ও আচরণ যদি না পাল্টায়, তাহলে আর গামিনিকে দোষারোপ করে কী লাভ হলো? এ লঙ্কানকে বদলে বদলে টনি হেমিংকে বেশি টাকা দিয়ে আনা হলোই বা কেন?
ঘুরে ফিরে সেই আগের চিন্তাভাবনায় ফিরে যাওয়া, আবারও নিজেদের মত স্লো, লো আর টার্নিং পিচে খেলে বড় গলায় কথা বলা; এই মানসিকতা পাল্টাবে কবে?
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে স্পিন অ্যাটাক, সেটাকেইবা দুর্বল, কমজোরি ভাবার যৌক্তিকতা কী? সবচেয়ে বড় কথ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের লম্বা স্পিনারদের সাথে স্পিনিং ট্র্যাকে মিরাজ, রিশাদ আর তানভীররা কি কুলিয়ে উঠতে পারবেন? ১৮, ২১ আর ২৩ অক্টোবর তিন ওয়ানডেতে সেই প্রশ্নের উত্তরই মিলবে। কারণ তিনটি খেলাই মিরপুরের শেরে বাংলায়।
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস