অফ স্পিনার থেকে রহস্য স্পিনার হয়ে ওঠা রুবেল এবার বিপিএলে
ছিলেন অফ স্পিনার, হঠাৎ মনে হলো মিস্ট্রি (রহস্র) স্পিনার হবেন। ক্যারিয়ারের শুরুটাও ছিল এমন। পাইওনিয়ার, দ্বিতীয় বিভাগ কিংবা প্রথম বিভাগ- এ ধরনের কোনো লিগ না খেলেই সরাসরি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে যান মোহাম্মদ রুবেল।
সেই থেকে শুরু, এরপর সবখানেই আলো ছড়াচ্ছেন চট্টগ্রামের এই ‘রহস্যময়’ স্পিনার। এবার ২৯ বছর বয়সে এসে বিপিএলেও সু্যোগ পেয়েছেন তিনি। খেলবেন রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের জার্সিতে। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে রুবেল শুনিয়েছেন তার ‘রহস্যময়’ স্পিনার হয়ে ওঠার গল্প।
প্রশ্ন: বিপিএলে দল পেলেন। প্রাথমিক অনুভূতিটা কী?
মোহাম্মদ রুবেল: বেশ একটা ভালো লাগার ব্যাপার। বাংলাদেশি এবং বিদেশি সুপারস্টারদের সাথে একই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাবো। ভালো তো লাগছেই। দারুণ লাগছে, আলহামদুলিল্লাহ।
প্রশ্ন: রাজশাহীর হয়ে খেলবেন। রাজশাহীর কোচিং স্টাফ বা অধিনায়কের- কারো সঙ্গে কী কথা হয়েছে?
রুবেল: এখনও রাজশাহী কোচিংয়ের ব্যাপারে (কারা আছে কোচিং স্টাফে) জানি না। গ্রুপ (হোয়াটসঅ্যাপ) খুলেছে একটা ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও কথা বলিনি।
প্রশ্ন: ২৯ বছর বয়সে এসে বিপিএলে দল পেলেন। এটা আসলে সত্যিই কঠিন। এতদিন ধৈর্য্য ধরে ক্রিকেট খেলে যাওয়া কতটা কঠিন বলে মনে হয় আপনার?
রুবেল: যেহেতু ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছি। ক্রিকেট তো খেলতে হবে। বয়স যখন আছে, ফিট আছি আলহামদুলিল্লাহ। ফিট থাকার চেষ্টা করি সবসময়। বয়সটা আসলে খুব বড় ফ্যাক্ট না। ফিট থাকলে যে কোনো কিছুই হয় আরকি। আর ক্রিকেট যেহেতু খেলতে হবে, এটা তো ধৈর্য্য ধরতেই হবে।

প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেটে আসার শুরুটা কিভাবে?
রুবেল: চট্টগ্রামের শান্তিনগরে আমার এলাকায় অনুশীলন করতাম। ২০১০-১১ সালেই মূলতঃ ক্রিকেটার হিসেবে পথচলা শুরু আমার। এরপর আমার কোচ বকর স্যার আমাকে সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে (চট্টগ্রামে) সুযোগ করে দেন। আমাকে ওনার ভালো লেগেছিল এ জন্য।
এরপর ঢাকায় আসলাম ২০১৫ সালে, ঢাকা সেকেন্ড ডিভিশন খেললাম। ২০১৫ থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত সাত-আট বছর বেসিক্যালি সেকেন্ড ডিভিশন খেলেছি। ঢাকায় আসার পর ২০২২-২৩ সালে সেকেন্ড ডিভিশন আর ২৪-২৫ মৌসুমে ফার্স্ট ডিভিশন খেলেছি। এরপর এনসিএল টিমে ডাকলো। এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেললাম এখানে। ইমার্জিং প্লেয়ার হলাম। তারপর লঙ্গার ভার্সন খেলালো। এখন তো আলহামদুলিল্লাহ বিপিএলের টিমই হইলো।
প্রশ্ন: এনসিএল খেলার সময় শান্তর (নাজমুল হোসেন) সাথে কোন কথা হয়েছিল?
রুবেল: না, আসলে তেমন কথা হয়নি। ওই টাইমে আমরা ছিলাম এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে। রাজশাহীর বিপক্ষে আমি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলাম। কারো সাথে কথা হয়নি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে রহস্যময় স্পিনারের সংখ্যা ওইভাবে নাই। তো সেদিক দিয়ে আপনার জন্য একটা সুযোগ কিনা যে নিজের জায়গাটা তৈরি করা...?
রুবেল: এটা তো অবশ্যই। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ভালো করার, যদি সুযোগ পাই। নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করার। আর মিস্ট্রি (রহস্য) স্পিনার আমি ছিলাম না। হয়েছি শেষ দুই বছরে। আগে নরমাল অফ স্পিন করতাম। তো লাস্ট দুই বছর সেকেন্ড ডিভিশন, ২০২৩-২৪ খেলার আগে আমি মিস্ট্রি স্পিনার হয়ে যাই আরকি। আগে নরমাল অফ স্পিন বোলিং করতাম।
প্রশ্ন: অফ স্পিনার থেকে রহস্য স্পিনার হওয়ার কারণ কী?
রুবেল: কারণ হচ্ছে, আসলে আমি যখন ঢাকায় এসে খেলা শুরু করি, তখন নরমাল অফ স্পিন করতাম। তখন আসলে এভারেজ পারফরম্যান্স হতো আরকি। তবে খুব খারাপও হইতো না। ভালো বলই করতাম। মানে এভারেজ পারফরম্যান্স হতো আরকি। দেখা যেতো সিজন শেষে ১৭-১৮ উইকেট এরকম পেতাম। সর্বোচ্চ ২১ উইকেট পেয়েছি সেকেন্ড ডিভিশনে। মানে মিস্ট্রি (রহস্য) স্পিনার হওয়ার আগে। তো চিন্তা করলাম ওইখান থেকে নরমাল অফ স্পিন করে তো এভারেজ পারফরম্যান্স হচ্ছে। ওইখান থেকে চিন্তা করলাম যে একটু ডিফারেন্ট কিছু ট্রাই করি। আলহামদুলিল্লাহ করলাম তো। মিস্ট্রি স্পিনার হওয়ার পর তো আসলে আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ভালোই হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনার বোলিংয়ে চাকিং-এর অভিযোগের কথা শোনা যায়। এটা নিয়ে কোন সমস্যায় পড়েছেন বা কোন অভিযোগ পেয়েছেন?
রুবেল: আমার কনফিডেন্স আছে, বোলিং-এ কোনো ‘চাক’ নাই। যদি আর এটা তো উনারা প্রাথমিকভাবে বলছে বা মেকানিক্যালি তো কোন কিছু আমাকে টেস্ট করায় নাই। টেস্ট করালে আপনি বলতে পারবেন আমার বোলিং কি ঠিক আছে নাকি ঠিক নেই। ঠিক না? আপনি টেস্ট না করে তো বলতে পারবেন না যে আমার হাত ঠিক আছে কি ঠিক নেই।
প্রশ্ন: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তো খেলা হয়নি। তবুও বিপিএলে সুযোগ পাওয়া। একটু চ্যালেঞ্জিং হবে কি না?
রুবেল: আমি মনে করি না। কারণ আমি যেহেতু এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেলেছি, এখানে অলমোস্ট বাংলাদেশের সবাই খেলেছে। যারা টপ প্লেয়ার আছে, সবাই খেলেছে। আমার কনফিডেন্সও আছে। আমি অনেক আগে থেকে ন্যাশনাল টিমের প্লেয়ারদেরকে বোলিং করি। বাংলাদেশ টিম যখন চিটাগং-এ ক্যাম্পে আসে। তখন থেকে আমি ওদেরকে বোলিং করি। আর এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছি আমি আমার একটা নিজের একটা কনফিডেন্স এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ আশা করি কোন প্রবলেম হবে না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে না খেললেও বাংলাদেশের অলমোস্ট যত প্লেয়ার আছে, সবাই তো চিটাগং প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, বড় বড় প্লেয়ার হয়েছেন। তো তখন থেকেই মনে করেন কনফিডেন্স আছে ইনশাল্লাহ, ওইটা নিয়ে কোন প্রবলেম হবে না। ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ভালো করার।
প্রশ্ন: মিস্ট্রি স্পিনার হিসেবে কারো বোলিং আপনি খুব অনুসরণ করেন কি-না?
রুবেল: না, না। আসলে কাউকে আমি ফলো করি না। আমি নিজে নিজেই সব কিছু শিখছি। কাউকে আমি আসলে ফলো করি না। আফগানিস্তানের মুজিব-উর রহমানকে ভালো লাগে; কিন্তু ফলো করি ব্যাপারটা এমন না।
এসকেডি/আইএইচএস/