ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

নীরব বিদায় আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতি নিয়ে শামসুর শুভর কষ্ট

সৌরভ কুমার দাস | প্রকাশিত: ০৭:২৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রায় দুই দশকের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন দিন কয়েক হলো। কোনো আয়োজন, কোনো আনুষ্ঠানিক বিদায় নয়; চুপচাপ সরে দাঁড়ানো দাঁড়িয়েছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের। বিদায়ের সিদ্ধান্ত, আক্ষেপ, নির্বাচনী সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই ব্যাটার শামসুর রহমান শুভ

প্রশ্ন: হঠাৎ করেই ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত কেন?
শামসুর রহমান শুভ: এই কথাগুলো আমি প্রায় ২০ বছর ধরে শুনে আসছি-এই প্লেয়ার ব্যাকআপ, ওই প্লেয়ার ব্যাকআপ, আন্ডার-১৯ আর এইচপি প্লেয়াররা রিপ্লেসমেন্ট হবে। এত বছর নিতে নিতে আর নিতে পারছিলাম না। তখন মনে হয়েছে, এইটাই বেস্ট টাইম নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার।

প্রশ্ন: ২০ বছরের ক্যারিয়ারের বিদায়টা খুব নীরব হয়ে গেল, এটা কতটা কষ্ট দিয়েছে?
শুভ: অবশ্যই কষ্ট লাগে। মিরপুরে আমার টেস্ট আর ওয়ানডে দুটোরই অভিষেক। আমার পুরো পরিবার মিরপুরে থাকে। আমি চেয়েছিলাম, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের শেষ ম্যাচটা মিরপুরে খেলতে, পরিবার যেন মাঠে এসে দেখতে পারে। বিসিবি থেকেও চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু দলগুলো রাজি হয়নি। বড় নাম হলে হয়তো হতো। এটাই বাস্তবতা।

প্রশ্ন: ১০ হাজার রানের খুব কাছাকাছি ছিলেন, এই আক্ষেপটা কি থাকবে?
শুভ: সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল ১০ হাজার রান করা। চাইলে হয়তো আরও এক-দুই বছর খেলতে পারতাম। স্কিল বা ফিটনেসের অভাব ছিল না। কিন্তু যখন আপনি দেখেন, আপনার প্রাপ্য সম্মানটা পাচ্ছেন না, তখন খেলাটা আর ইনজয় করা যায় না। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রো ও ঢাকা বিভাগে জায়গা না পাওয়া; এটা কি সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে?
শুভ: অবশ্যই। ঢাকা ডিভিশন আর ঢাকা মেট্রোর হয়ে আমার অনেক কন্ট্রিবিউশন আছে। আমাকে চাইলেই নিতে পারতো। কিন্তু আমি কখনোই আন্ডার-১৯ প্লেয়ারের ব্যাকআপ হতে পারি না। আমাদের দেশে সিনিয়রদের অবদান ভুলে গিয়ে হঠাৎ এক ম্যাচ খারাপ খেললেই জুনিয়রের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই কালচারটা খুবই বাজে।

প্রশ্ন: নির্বাচকদের সঙ্গে কি কখনো পরিষ্কারভাবে কথা হয়েছিল?
শুভ: একবার কথা হয়েছিল। তারা বলেছিল বয়স দেখবে না, পারফরম্যান্স দেখবে। আমি আরও ভালো পারফরম্যান্স করেছি। কিন্তু তারপর আর কিছু হয়নি। এটা অনেকটা সান্ত্বনা দেওয়ার মতোই ছিল।

প্রশ্ন: আপনার মতে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স কি যথাযথ মূল্যায়ন হয়?
শুভ: একদমই না। আমরা বয়স দেখি, পারফরম্যান্স দেখি না। যদি পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব দেওয়া হতো, বাংলাদেশ ক্রিকেট আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যেত। ১০ বছর খেলবে কিনা সেটা না দেখে; যে দুই বছর ভালো খেলতে পারে, তাকে কেন ব্যবহার করা হবে না?

প্রশ্ন: জাতীয় দলে অভিষেকের সময় আপনাকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল। ক্যারিয়ারটা সেভাবে এগোয়নি কেন?
শুভ: আমি টেস্ট আর ওয়ানডেতে খারাপ খেলিনি। অল্প ম্যাচেই প্রমাণ করেছি আমি এই লেভেলে খেলতে পারি। এরপর বাদ পড়ার কোনো পরিষ্কার কারণ কখনো পাইনি। ডোমেস্টিক ক্রিকেটে আমি নিয়মিত রান করেছি, হাইয়েস্ট রান গেটার হয়েছি। কিন্তু আর সুযোগ আসেনি। একটা সময় এসব মেনে নিতে হয়।

প্রশ্ন: অবসরের সিদ্ধান্তটা কীভাবে চূড়ান্ত হলো?
শুভ: এনসিএলে রিশাদের বলে একটা আউট হই। ব্যাকফুট ডিফেন্স, বল সামনে পড়ে স্টাম্পে ফিরে আসে। এমন আউট আমি কখনো হইনি। তখনই মনে হলো, সম্মানের সঙ্গে সরে যাওয়ার সময় হয়েছে। সেদিনই কোচ-ক্যাপ্টেনকে জানাই, পরদিন বিসিবিকেও।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? কোচিং বা বোর্ডে কাজ?
শুভ: এখনই কিছু ভাবছি না। তবে চাই ক্রিকেটের সাথেই থাকতে। যদি বোর্ড সুযোগ দেয়, অবশ্যই অনেস্টলি কাজ করব।

এসকেডি/এমএমআর/জেআইএম