ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

১০ বছর নিষিদ্ধ ২ ক্রিকেটারের শাস্তির কোনো দলিল নেই বিসিবিতে!

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ক্রিকেট অনুরাগীদের কি মনে আছে, প্রথম বিভাগের দল লালমাটিয়া আর ফিয়ার ফাইটার্সের দুই নিষিদ্ধ ক্রিকেটার সুজন আর তাসনিমের কথা? আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক ম্যাচে ৪ বলে ৯২ আর ৭ বলে ৬৭ রান দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তারা। যার ফলশ্রুতিতে হন ১০ বছর নিষিদ্ধ। সেই থেকে তারা ক্রিকেটের বাইরে আজ নিয়ে ৮ বছর।

তবে অবাক করা এক তথ্য আছে। এই দুই ক্রিকেটারকে যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে; তার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। না বিসিবিতে, না নিষিদ্ধ হওয়া ক্রিকেটারদের কাছে।

বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের এক দায়িত্বশীল সূত্রে মিলেছে এমন চাঞ্চল্যকর খবর। অর্থাৎ সুজন আর তাসনিমের বিপক্ষে যে শাস্তির ঘোষণা হয়েছিল, সেটা মুখে মুখে। কিন্তু বিসিবিতে সে শাস্তির কোনো দলিল নেই। বিসিবির বর্তমান পরিচালক ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান ফাইয়াজুর রহমান মিতু জাগো নিউজকে আজ সোমবার দুপুরে জানিয়েছেন এই তথ্য।

মিতু বলেন, ‘আমি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে বলব না। কাউকে অসম্মান করার কোনই ইচ্ছে আমার নেই। তবে যতদূর জেনেছি, যে কমিটির সুপারিশে ওই দুই ক্রিকেটারকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই কমিটিতে ছিলেন দেশের ক্রিকেট অঙ্গনের দুই পরিচিত ও নামী ব্যক্তিত্ব জালাল ইউনুস আর আকরাম খান। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাদের অনেক অবদান আছে। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমি ডিসিপ্লিনারি কমিটি প্রধান হিসেবে ওই শাস্তি পাওয়া ক্রিকেটারদের ব্যাপারে বোর্ডে কোনো দলিল পাইনি।’

‘সে শাস্তির সিদ্ধান্তটা আসলে গৃহীত হয় বোর্ড মিটিংয়ে। এবং মিটিং শেষে সংবাদ সম্মেলনে তা প্রকাশিত হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সে শাস্তির কোনো দালিলিক প্রমাণ বোর্ডে নেই। আমি ওই দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেও তাই জেনেছি।’

নাজমুল হাসান পাপনের আমলে (তিনি সর্বশেষ যখন বিসিবি সভাপতি হয়েছিলেন তার আগের মেয়াদে) ২০১৭ সালের যে পরিচালক পর্ষদ ছিল, তারা ওই দুই ক্রিকেটারকে মুখে মুখেই নিষিদ্ধ করেছিল।

ফাইয়াজুর রহমান মিতু অবাক বিস্ময় নিয়ে বলেন, ‘ভাবুন একবার। অভিযুক্ত ২ ক্রিকেটারকে যে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তা কোথাও লিখা নেই। শুধু বোর্ড পরিচালক পর্ষদ সভার আলোচ্য ও সিদ্ধান্তর মধ্যে একটুখানি লিখা আছে। তার বাইরে বোর্ডে কিংবা ওই ক্রিকেটার বা সিসিডিএমের কোথাও কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। সেই সময়ের বোর্ড তা রাখেনি বা রাখার দরকার মনে করেনি। তার মানে সুজন ও তাসনিম ৮ বছর ধরে শুধু মৌখিক ঘোষণাতেই নিষিদ্ধ হয়ে আছেন।’

একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেট বোর্ড ২ জন ক্রিকেটারকে শাস্তি দিয়ে ১০ বছর নিষিদ্ধ করেছে, তার কোনো দলিল থাকবে না? বিসিবি যে পেশাদারিত্বে ঘাটতি ছিল, স্বচ্ছতার কমতি ছিল, এই ২ নিষিদ্ধ ক্রিকেটারের শুধু মুখে মুখে নিষিদ্ধ করাটা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ।

বিসিবির সে সময়কার পরিচালক পর্ষদের ভাগ্য ভালো যে, নিষিদ্ধ ২ ক্রিকেটার আইনের আশ্রয় নেননি। নিলে তারা নিশ্চিত জিতে যেতেন। কারণ বোর্ডে কোনো কাগজপত্রেই তাদের শাস্তির কথা লিখা নেই। শুধু বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের পর প্রেস মিটে সে শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া সুজন ও তাসনিম এরই মধ্যে ৮ বছর ধরে ক্রিকেটের বাইরে। তারা ক্রিকেট বোর্ডের কাছে তাদের শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছেন।

বিসিবি পরিচালক মিতু জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, তিনি নিজে নিষিদ্ধ ওই ২ ক্রিকেটারের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তারা কেন অমন অনৈতিক কাজ করেছিল?

তারা বলেছে যে, ‘আমরা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতীকী প্রতিবাদেই অমন আলগা বোলিং মানে ক্রমাগত ওয়াইড বল ছুড়ে অত রান দিয়েছি।’

ওই ইস্যুতে সর্বশেষ খবর, বিসিবি ডিসিপ্লিনারি কমিটি প্রধান ও বিসিবি সভাপতির সাথেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। নিষিদ্ধ ২ ক্রিকেটারের বাকি দুই বছরের শাস্তি মওকুফ করার চিন্তাভাবনা চূড়ান্ত। যেহেতু তাদের আর সে অর্থে ক্রিকেটার হিসেবে পারফর্ম করার মত সময় ও অবস্থা নেই। তাদের শাস্তি মওকুফ করে ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।

এআরবি/এমএমআর