ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

নতুন প্রজন্মের মাঝে ‘বড়’ ক্রিকেটার হবার স্বপ্নই নেই!

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

পরিসংখ্যান ঘেটে বের করার দরকার নেই। চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে, বর্তমান টিম বাংলাদেশের চালিকাশক্তিই সিনিয়র ক্রিকেটাররা। সেই ঘুরে ফিরে সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক আর রিয়াদ।

অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হয়েছে। বোদ্ধা-পন্ডিত আর বিশেষজ্ঞরা নানা যুক্তি ও কারণ খুঁজে বের করেছেন। তারপরও বিশ্বকাপে সাকিবের অমন উদ্ভাসিত নৈপুণ্য এবং ক্যারিয়ার সেরা পারফরমেন্সের পরও বাংলাদেশ কাঙ্খিত সাফল্য পায়নি মূলত ওপেনার তামিম আর অধিনায়ক মাশরাফি বল হাতে জ্বলে না ওঠায়।

বিশ্বকাপের পর এ প্রতিবেদককে এক ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মাশরাফি নিজেই বলেছেন, ‘আসলে সাকিব তো ব্রিলিয়ান্ট খেলেছে। কিন্তু তামিম আর আমি কিছু করতে পারিনি। আমরা অবদান রাখতে পারলে পারফরমেন্স আরও উজ্জ্বল হতো ফলও হতো খুব ভাল।’

মাশরাফি এতটুকু বাড়িয়ে বলেননি। বাংলাদেশের গত ৫-৭ বছরের যত সাফল্য, ঘুরেফিরে হাতে গোনা কয়েকজন প্লেয়ারের ওপর ভড় করেই তারা যখন ভাল খেলেছেন, তখনই সাফল্য ধরা দিয়েছে। এই বছরকেই যদি মানদণ্ড ধরা হয়, তাহলে দেখা যায় চলতি বছর ৫ টেস্টে বাংলাদেশের তিনজন মাত্র ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন। তার দুজন ‘পঞ্চ পান্ডবের’ সদস্য তামিম ও মাহমুদউল্লাহ। দুজনই এবছর মার্চে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে শতরান করেছেন। তাদের সঙ্গে এ প্রজন্মের আর একজন মাত্র ব্যাটসম্যান টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন, তিনি সৌম্য সরকার।

কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন মনে করেন, তরুণদের সেভাবে উঠে না আসা এবং জায়গামত পারফরম না করাও টিম বাংলাদেশের ভাল না খেলার পথে একটা বড় বাঁধা। বাংলাদেশের উন্নতির পথে সম্ভাব্য অন্তরায় খুঁজতে গিয়ে সময়ের অন্যতম সেরা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বর্তমান প্রজন্মের ওপর রীতিমত ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তার ধারণা, এ প্রজন্ম সেভাবে উঠে আসেনি। সিনিয়র ও তারকা পারফরমারদের পাশাপাশি তাদের করণীয় কাজগুলো করতে পারেনি। আর সেই না পারার কারণ খুঁজতে গিয়ে সালাউদ্দীনের মনে হয়, আসলে তরুণ ও বর্তমান প্রজন্মের মাঝে বড় হবার তাগিদ ও ইচ্ছেটাই খুব কম।

আজ (সোমবার) জাগো নিউজের সাথে আলাপে এ প্রসঙ্গ উঠতেই সালাউদ্দীনের ক্ষোভমাখা সংলাপ, ‘আচ্ছা বাংলাদেশের ক্রিকেটে উন্নতির পথ খুঁজছেন, বলুন তো একজন পারফরমারের নাম, যে বা যারা উঠে এসে দায়িত্ব নিয়ে পারফরম করে দলকে টেনে নিয়েছে? হ্যাঁ! দু-একজন যে নেই, তা নয়। হয়তো একটা সিরিজ ভাল খেলেছে। তারপর আবার হারিয়ে গেছে এবং সেটাও ওয়ানডেতে। টেস্টে অমন একটি নতুন পারফরমারের দেখা মেলেনি। এখনও দেখবেন ঐ তামিম, মুশফিক, সাকিব আর রিয়াদরাই যা রান করার করছে। সেঞ্চুরিও আসছে তাদের ব্যাট থেকেই। তারাই স্কোরবোর্ডকে একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ প্রজন্মের একজন তরুণকে দেখান তো যে টেস্ট সেঞ্চুরি করে দলকে টেনে নিয়ে গেছে?’

সালাউদ্দীনের মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরও একটি বড় সমস্যা হলো পরের প্রজন্মের ভাল খেলতে না পারা এবং ভাল খেলার বাড়তি তাগিদ অনুভব কম করা। সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের পরের প্রজন্মের ক্রিকেট স্বপ্নটাই খুব সীমিত। সাকিব, তামিম, মুশফিক আর রিয়াদদের মত অতবড় ও বিস্তৃত না। মনে হয় না তরুণরা বড় ক্রিকেটার আর খুব ভাল পারফরমার হবার স্বপ্ন দেখে। তামিম, সাকিব, মুশফিককে ছাড়িয়ে যাবার ইচ্ছেটাই নেই। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এ প্রজন্মের কেউ আদৌ সাকিব, তামিমদের মত বড় পারফরমার হতে চায় কি না? ঐ ইচ্ছেটাই মনে হয় নেই। থাকলেও খুব কম। সাকিব, তামিম, মুশফিক আর রিয়াদরা যখন উঠে এসেছে, তখনো আমরা খুব ভাল দল ছিলাম না। ওরা নিজেদের চেষ্টায় কষ্ট করে সাধনা করে বড় হয়েছে। তাদের মনের ভেতরে ছিল বড় প্লেয়ার হবো। আমি ওদের পাশে ছিলাম। খুব কাছ থেকে দেখেছি। ওরা সব সময় চেয়েছে ভাল কিছু করতে, বড় প্লেয়ার হতে। পরের জেনারেশন যারা আছে, তাদের কি অত বড় প্লেয়ার হবার ইচ্ছে আছে কি না? যদি না থাকে, তাহলে যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, ওপরে ওঠা কঠিন। আসলে আর কোন বিকল্প পথ নেই। নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। ভাল খেলায় উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। এদের স্বপ্নটাকে বড় ও বিস্তৃত করতে হবে।’

তামিম ইকবালের ওপরে ওঠার পেছনের কাহিনী তুলে ধরে সালাউদ্দীন জানান, ‘তামিমের কথাই ধরুন। নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছে। শুরুতে একদমই অফসাইডে খেলার প্লেয়ার ছিল। তার আক্রমণাত্মক শটস ছিল সব অফসাইডে। আর মাঝে মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ ডাউন দ্যা উইকেটে গিয়ে বিগ হিট নিত। স্পিনে দূর্বল ছিল। লেগসাইডে স্কোরিং শট কম খেলতে পারতো। নিজের চেষ্টায় দিনের পর দিন পরিশ্রম করে সে ঘাটতিগুলো কাটিয়ে নিজেকে বড় করেছে তামিম। স্বপ্নটাও ছিল। এখন কাউকে কেউ জোর করে বড় প্লেয়ার বানিয়ে দিতে পারবে না। নিজের ইচ্ছেটা লাগে। স্বপ্ন থাকতে হবে বড় হবার। তবেই না ওপরে ওঠা যাবে।’

এআরবি/এসএএস/জেআইএম