নিউজিল্যান্ডের সামনে ভারতের ‘চুপসে’ যাওয়া সেই তিন ম্যাচ
ইংরেজিতে বহুল প্রচলিত একটা প্রবাদ আছে, ‘হিস্টোরি রিপিটেড ইটসেলফ' (ইতিহাস নিজেই নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটায়)।' টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘ভারত-নিউজিল্যান্ড' ম্যাচের ব্যাপারটা ঠিক এমনই। ভেন্যু বদলালেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এখনও পর্যন্ত তিনবারের মুখোমুখিতে তিনবারই যে পরাজিত দলটির নাম ভারত!
চলুন দেখে নেওয়া যাক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের সেই তিন ম্যাচের চালচিত্র
১। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
ভেন্যু: ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম, জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা
নিউজিল্যান্ড: ১৯০/১০ (২০), ভারত: ১৮০/৯ (২০); ফল: নিউজিল্যান্ড ১০ রানে জয়ী।
বিশ্বকাপের প্রথম মৌসুমেই মুখোমুখি হয় ভারত-নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গে দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ছিল সুপার এইটের প্রথম ম্যাচ। সেদিন টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত।

অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে দ্বিতীয় ওভারেই আরপি সিং কিউই ওপেনার লুই ভিনসেন্টকে তুলে নিয়েছিলেন ঠিকই৷ তবে পরবর্তীতে কিউইদের রাশ টেনে ধরা আর সম্ভব হয়নি৷ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৩১ বলে ৪৫) ও ক্রেইগ ম্যাকমিলানের (২৩ বলে ৪৪) ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে জ্যাকব ওরাম (১৫ বলে ৩৫) ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরির (৫ বলে ১৫)- দুই ক্যামিও ইনিংসে ২০ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ১৯০ রান।
১৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তোলে ভারত। তবে বিরেন্দর শেবাগকে (১৭ বলে ৪০) ফিরিয়ে ঝড়ের গতি কমিয়ে দেন জ্যাকব ওরাম। এরপর ড্যানিয়েল ভেট্টোরির দুর্দান্ত বোলিংয়ে (৪-০-২৭-৪) নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ভারত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮০ রানেই থেমে যায় ভারতীয় ইনিংসের চাকা। ওই ম্যাচে বোলিংয়ে কট এন্ড বোল্ডের পাশাপাশি একটি করে ক্যাচ ও রানআউট করেছিলেন ভেট্টোরি। এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন কিউই বাঁ-হাতি স্পিনার।
২। ১৫ মার্চ, ২০১৬
ভেন্যু: বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, নাগপুর, ভারত
নিউজিল্যান্ড: ১২৬/৭ (২০), ভারত: ৭৯/১০ (১৮.১); ফল: নিউজিল্যান্ড ৪৭ রানে জয়ী।
৯ বছর পর আবার বিশ্বকাপে মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড-ভারত। টস জিতে এবার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কেন উইলিয়ামসন। ‘কিউই ব্যাটাররা বাউন্ডারি মারবেন, ঠিক পরের বলে ভারতীয় বোলাররা উইকেট তুলে নিবেন'- এই ম্যাচের ব্যাপারটা ছিল যেন এমনই। ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০ ওভারে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস থেমে দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১২৬ রানে।
১২০ বলে ১২৭ রানের লক্ষ্য, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তুলনামূলক সহজই বলা যায়; কিন্তু কিউই স্পিনারদের ঘূর্ণিজাদুতে শুরু থেকেই ‘দমবন্ধ' হওয়া শুরু করে স্বাগতিক ভারতের।
স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান তুলতেই নাথান ম্যাককালাম (৩-০-১৫-২), মিচেল স্যান্টনার (৪-০-১১-৪), ইশ সোধিদের (৪-০-১৮-৩) কাছে একে একে আত্মাহুতি দেন শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, বিরাট কোহলি- ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম পাঁচ ব্যাটার।

সতীর্থদের আশা যাওয়ার মিছিলে ৩০ বলে ৩০ করে অধিনায়ক ধোনি কিছুটা প্রতিরোধ করলেও ভারত ১০০’র কোটা পার করতে পারেনি। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে আশিস নেহরাকে বোল্ড করে স্বাগতিকদের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকেন কিউই পেসার অ্যাডাম মিলনে।
৩। ৩১ অক্টোবর, ২০২১
ভেন্যু: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত;
ভারত: ১১০/৭ (২০ ওভার), নিউজিল্যান্ড: ১১১/২(১৪.৩ ওভার); ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
জোহানেসবার্গ, নাগপুর ঘুরে এবারের ভেন্যু দুবাই। মহেন্দ্র সিং ধোনির বদলে এবারের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারত এবার ভিন্ন গল্প লেখার কথাই চিন্তা করেছিল; কিন্তু কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন যেন আগের দুই বিশ্বকাপের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরু থেকেই তাদের টুঁটি চেপে ধরেন কিউই বোলাররা। কিউইদের বোলিং তোপে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১১০ রানে থেমে যায় ভারতের রানের চাকা। নাগপুরের মতো দুবাইয়েও নিজের বোলিং ভেলকি দেখিয়েছেন সোধি (৪-০-১৭-২) আর এবারও তুলে নিয়েছিলেন কোহলির উইকেট।
১১১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ ওভারে মার্টিন গাপটিলকে হারালেও কিউইদের তেমন বেগ পেতে হয়নি৷ আরেক ওপেনার ড্যারিল মিচেলের ঝড়ো ব্যাটিং (৩৫ বলে ৪৯) ও অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে (৩১ বলে ৩৩) ৩৩ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কিউইরা।
লিখেছেন : অয়ন রায় অংকন
আইএইচএস/