ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

হাই-প্রোফাইল প্রধান নির্বাচকের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন লিপু

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশের ক্রিকেটে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এক মহিরুহ, বর্ণাঢ্য চরিত্র। ক্রিকেটে দেশের সফলতম ক্লাব আবাহনী এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ লিপু।

লিপুর প্রথম পরিচয় হলো- তিনি আবাহনীর সোনালী সময়ের সফলতম অধিনায়ক ছিলেন। তার অধীনেই ৮০’র দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশকের প্রথম ভাগে আবাহনী ছিল দারুণ এক দল। ঢাকাই ক্রিকেটে লিপুর দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে আবাহনী সিনিয়র ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (এখন যেটা প্রিমিয়ার লিগ) ও দামাল স্মৃতি সামার ক্রিকেটে বেশ কয়েকবারের চ্যাম্পিয়ন।

লিপুর পর যারা বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছেন, তার বিরাট এক অংশ মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ফারুক আহমেদ, আকরাম খান, নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট আর খালেদ মাহমুদ সুজন; এদের সবাই লিপুর অধীনে আবাহনীতে ও জাতীয় দলে খেলেছেন।

বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়কও লিপু। পাশাপাশি বাংলাদেশ যখন আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে আইসিসি ট্রফি খেলতো, তখন ১৯৮৬ আর ১৯৯০ সালের আইসিসি ট্রফিতেও লিপুই ছিলেন টিম বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন। এরপর তিনি ৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে জাতীয় দলের ব্যবস্থপনায় জড়িয়ে পড়েন। যে আসরের প্রাচীর টপকে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার ছাড়পত্র পায় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখে, সেই আইসিসি ট্রফি বিজয়েও লিপুর ছিল অসাধারণ ভুমিকা।

অনেকেই মনে করেন, গর্ডন গ্রিনিজই বুঝি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের আইসিসি ট্রফি বিজয়ের প্রধান কারিগর। হ্যাঁ, গ্রিনিজের তারকা খ্যাতি ও বিশাল ইমেজ দলকে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করেছে, তবে আসল রূপকার ছিলেন লিপু। কারণ, তখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেট ম্যানেজার।

আইসিসি ট্রফি মাঠে গড়ানোর কয়েক মাস আগে ১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়ার মাটিতে হওয়া এসিসি ট্রফির অঘোষিত কোচও ছিলেন লিপু। তখন থেকেই তিনি টিম বাংলাদেশ দলের গঠনশৈলী এবং একাদশ নির্বাচন ও কৌশল অবলম্বনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।

তারপর লিপু জড়িয়ে পড়েন বিসিবির সঙ্গে। বেশ কয়েক দফা বোর্ড পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিসিবির দু’দুইটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটি- ক্রিকেট অপারেশন্স ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন লিপু।

এমন এক সফল ও সু-প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হঠাৎ বিসিবির প্রধান নির্বাচক পদে কাজ করতে রাজি হয়েছেন বা হতে পারেন, এমনটি জানতে পেরে অনেকেই অবাক হয়েছেন। অনেকেরই বিস্ময়মাখা প্রশ্ন, তিনি চিফ সিলেক্টর পদে কাজ করতে রাজি হলেন কেন? তার তো বোর্ড ব্যবস্থাপনায় থাকার কথা। তিনি বিসিবিপ্রধান না হয় বিসিবির সহ-সভাপতি, নিদেনপক্ষে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। তিনি প্রধান নির্বাচক পদে কাজ করতে রাজি হলেন, তাও এই বেতন নিয়ে?

এমন প্রশ্নটা অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুরের শেরে বাংলায় বিসিবি অফিসে গিয়েও এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনিও স্বীকার করেন, এর আগে তিনি বোর্ডের অনেক উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সেখান থেকে প্রধান নির্বাচক পদে আসাটা তার জন্য সহজ ছিল না।

বিসিবিতে নিজের অতীত কর্মকাণ্ড তুলে ধরে লিপু এক পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের একটি ঐতিহাসিক তথ্য জানিয়ে বলেন, শুধু বিসিবিতেই নয়, বিসিবির মনোনীত কর্তা হয়ে আইসিসির বোর্ড মিটিংয়েও বেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছেন লিপু।

লিপু বলেন, ইনফ্যাক্ট(এমনকি) আপনারা জানেন, অনেক দিন ধরে, মানে ২০১৩ সালের পর থেকে বার্ডের সঙ্গেই নেই আমি। করোনাকালীন সময়ের আগে একাধিকবার বিভিন্ন রোলে (ভূমিকায়) বোর্ডের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমার মা অসুস্থ ছিলেন। তখন এটা চিন্তা করার সুযোগই ছিল না। ইলেকশনের আগেও প্রস্তাব এসেছিল। এবার যখন কথা বললাম, পরিস্থিতি আসলে ব্যাসিক্যালি আমার দিক থেকে বলা হয়েছে। এই সুযোগ পাওয়ার আগে আসলে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে ডিরেক্টর পদে কাজ করে এসেছি।

লিপু আরও বলেন, আপনারা অধিকাংশই জানেন, অনেকেই হয়তো জানেন না যে, আমি ২০০৭-০৮ এ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে অ্যাডহক কমিটিটা ছিল, সেই সময়ে সম্ভবত ৫ টা আইসিসি বোর্ড মিটিংয়ে আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। সুতরাং আমার জন্য এটা কঠিন হবে যে, ওই রকম এতগুলো পদে কাজ করে এসে- এই রোলে আসা। যেখানে আমাকে একটা নিয়মের মধ্যে এবং একটা পে-রোলে কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, লিপু প্রধান নির্বাচক হলেও তিনি একজন বোর্ড পরিচালকের সমমর্যাদা পাবেন। সেই সাথে আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধাও ভোগ করবেন বেশি। লিপুর সোনালী অতীত ও হাই-প্রোফাইল ক্যারিয়ারের কথা মাথায় রেখে বিসিবি তার বেতন-ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সকল সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা টাকার অংকে সাবেক প্রধান নির্বাচকের চেয়ে অনেক বেশি। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বেতন-ভাতা ও অন্য সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা মিলে লিপু মাসে বিসিবির কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো পাবেন।

এআরবি/এমএইচ/জেআইএম