ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

তবে কি কালো রঙের টার্নিং উইকেট ফর্মুলাও ভেস্তে যাবে?

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

সবার জানা শেরে বাংলার স্লো, লো আর টার্নিং উইকেট হলো টিম বাংলাদেশের ভাল খেলার এবং জেতার সর্বোত্তম ক্ষেত্র। ইতিহাস সাক্ষী, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মত দল শেরে বাংলায় এসে টিম বাংলাদেশের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। সেটা আসলে কেন ওই বড় দলগুলো শেরে বাংলার ঠেলাগাড়ির গতি, গড়পড়তা সর্বোচ্চ কোমর সমান উচ্চতার স্পিন সহায়ক পিচে এসে বাংলাদেশের সাথে পারে না, খাবি খায়, তার কারণটা জেনে নেয়া যাক।

সবাই জানেন- ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ভেন্যুর পিচ হচ্ছে ব্যাটিং সহায়ক। না হয় স্পোর্টিং। সে সব পিচে বল ব্যাটে আসে ভাল গতিতে। উচ্চতা বা বাউন্সও থাকে ভাল। সাধারণতঃ ডাবল পেসড (কখনো জোরে, কখনো থেমে) হয় না। বল পরে নিচু হয় না। টার্নিং হয় না বললেই চলে। ওই দলগুলোর ক্রিকেটাররা সাদা বলে ওই ভাল উইকেটে খেলেই অভ্যস্ত।

তারা যখন এসে শেরে বাংলার স্লো, লো আর টার্নিং পিচে খেলতে নামেন, তখন অ্যাডজাস্টমেন্টে খুব সমস্যা হয়। শেরে বাংলার থেমে আসা আর তাদের দেশের উইকেটগুলোর তুলনায় অনেক নীচে থাকা টার্নিং ডেলিভারি খেলতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। তারা অস্বস্তিতে পরে যান। হাত খুলে ফ্রি স্ট্রোক খেলা বহুদুরে, তারা রিতিমত বিভ্রান্তিতে পরে যান কি করবেন? খেলবেন না, মারবেন? না ঠোকাবেন?

এক পর্যায়ে অকাতরে উইকেট দিয়ে আসেন। আর তাই শেরে বাংলায় টাইগারদের সাথে কুলিয়ে উঠতে ক্রিকেট বিশ্বের সব দলেরই সমস্যা হয়।

তবে কি কালো রঙয়ের টার্নিং উইকেট ফর্মুলাও ভেস্তে যাবে?

২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নির্বিঘ্নে কোয়ালিফাই করতে টাইগারদের সামনে আছে অগ্নী পরীক্ষা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে চলতি ওয়ানডে সিরিজ ছাড়াও আগামীতে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ারমত দলসহ অন্যান্য দলের সাথে ৬ সিরিজে ২০টির মত ম্যাচ খেলতে হবে টাইগারদের। এর বড় অংশ জিততে পারলে র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ আট দলে থাকার সম্ভাবনা থাকবে। তখন আর ওয়ানডে ওয়ার্ল্ডকাপ খেলতে হবে না। না হয় বাছাই পর্ব পাড়ি দিতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই ৮ দলের মধ্যে থাকার ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীই হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ সিরিজের সবকটা ম্যাচ জিতলে রেটিংয়ে ক্যারিবীয়দের ধরে ফেলা সম্ভব ছিল। মূলতঃ সে চিন্তায়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে যেনতেনভাবে হলেও জিততে মরিয়া বাংলাদেশ। ধারণা করা হয় সে কারণেই এমন কালো রঙয়ের স্লথ গতির নিচু বাউন্স এবং স্পিন সহায় পিচে খেলার আয়োজন।

‘কালো রঙয়ের’ স্লো, লো আর স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলা নিয়ে নানা সমালোচনা আর তীর্যক কথাবার্তা হয়েছে। কঠিন সত্য হলো, এমন বিদগুটে পিচে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে যারা একটু হাত খুলে খেলতে পছন্দ করেন, ফ্রি স্ট্রোক খেলার ক্ষমতাও তুলনামূলক বেশি, সেই সৌম্য, সাইফ আর সোহানরাও নিজেদের স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারেননি। তারপরও প্রথম খেলায় ২০৭ রানের মামুলি পুঁজি নিয়েও লেগস্পিনার রিশাদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের ওপর ভর করে ৭৪ রানের বড় জয় ধরা দিয়েছিল।

কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাবহুল ও অনেক ওঠা নামার দ্বিতীয় ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় পরাজয়ে এখন সিরিজে সমতা। ওদিকে টাইগারদের দেখাদেখি এখন ক্যারিবীয়রাও স্লো, লো আর টার্নিং পিচে একাদশে চার স্পেশালিস্ট আর দু’জন অকেশনাল স্পিনারের সমন্বয় ঘটিয়ে দল সাজিয়ে সমানতালে পাল্লা দিয়েছে। তারাও বুঝে গেছে এই পিচে ফাস্টবোলারদের চেয়ে একগাদা স্পিনার খেলানোই ভাল। তারাই কার্যকর হবে। তাইতো ২১ অক্টোবর প্রথম প্রহরে ঢাকায় পা রাখা আর মঙ্গলবার ভোরে টিম হোটেলে চিকইন করা আকিল হোসেনকে খেলানো এবং তার নৈপুণ্যে ম্যাচ জেতা।

সেই ওয়েসলি হল, গ্রিফিথ, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, কলিন ক্রাফট, ম্যালকম মার্শাল, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস, প্যাটট্রিক পিটারসনের মত সব ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারের দল ২১ অক্টোবর শেরে বাংলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে পুরো ৫০ ওভার স্পিন বোলারদের দিয়ে বোলিং করে নতুন অভিনব রেকর্ড গড়লো।

শুধু তাই নয়। অনভ্যস্ত এমন উইকেটেও অধিনায়ক শাই হোপ, গুদাকেশ মোতি, জাস্টিন গ্রিভস আর বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল হোসেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, কন্ডিশন যতই অনুকুলে থাকুক না কেন, সেই কন্ডিশন কাজে লাগানোটাই হলো সাফল্যর পূর্বশর্ত। সঙ্গে জয়ের অদম্য বাসনা, প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি এবং সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে খেলা।

West Indies

নিজেদের পয়োমন্তঃ ভেবে যে পিচ তৈরি করা, সেই উইকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সে অর্থে দল হিসেবে এমন টিম পারফরমেন্স দেখাতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে তাওহিদ হৃদয়- মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন জুটি আর শেষ দিকে রিশাদ ঝড় এবং পরে রিশাদের জাদুকরি স্পিন ঘূর্ণি। আর কালকের ম্যাচে রিশাদের দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য ছাড়া সবাই প্রায় ফ্লপ। তাই এগিয়ে থাকা সিরিজ এখন ১-১। আগামীকাল ২৩ অক্টোবর শেরে বাংলায় সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ। জিতলে ৪ সিরিজ টানা হারের পর আবার সিরিজ বিজয়ের স্বাদ মিলবে। আর হারলে সিরিজও হবে হাতছাড়া।

এখন এমন উইকেটেও যদি শেষ রক্ষা না হয়, তাহলে কি আর মুখ থাকবে টাইগারদের। সবাই বলবে, তাহলে আর কালো রঙয়ের এমন বিদগুটে স্পিন সহায়ক তৈরি করে লাভ কি হলো? তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে চুপ থাকা ছাড়া আর কিইবা করার থাকবে স্বাগতিকদের। তাই কাজ একটাই। উইকেট যেমনই থাক, তার আচরণ ও গতি প্রকৃতি যেমনই হোক না কেন, ভাল খেলার বিকল্প নেই। ভাল খেলতেই হবে। অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন আর পারফরমেন্সটা পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতেই হবে। তবেই না সাফল্য মিলবে। না হয় নিজেদের মত উইকেট তৈরি করে খেলাও কিন্তু বিফলে যাবে।

এআরবি/আইএইচএস