ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

গোলের খেলা ফুটবল, ভাগ্যেরও খেলা!

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ০৭ জুলাই ২০১৮

খালি চোখে ‘ফুটবল’ শুধুই খেলা? একটি চামড়ার গোলক নিয়ে দু’পক্ষের ২২ জনের লাথালাথি। দম, গতি, স্কিল, কায়দা-কৌশল, দক্ষতা আর মুন্সিয়ানার সমাহার। যা কখনো খেলা ছাপিয়ে শিল্প। নান্দনিকতা। সৃষ্টি আর সৃজনশীলতাও। যা দেখে দর্শক, সমর্থক ও ভক্তরা হন মুগ্ধ। মোহিত। এর বাইরে ফুটবল ভক্ত-সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস, ভালবাসা, নির্মল বিনোদন। উৎসব ও আনন্দর উপলক্ষ্যও। যার শেষ পরিণতি ‘গোল’। এই গোলই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেয়। ভাগ্যের নিষ্পত্তি হয়। তাইতো ফুটবলে গোলই শেষ কথা।

ওপরে যা বলা হলো, তার কিছুই নতুন নয়। এগুলো অনেক পুরনো কথা-বার্তা। প্রায় প্রবচণের পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া কথোপকোথন। তবে ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথা-বার্তা, আালোচনা-পর্যালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর যখন ঘুরে ফিরে, ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা’ বলা হয়, ঠিক তেমনি ফুটবলেও সব কথার শেষ কথা ‘গোল’। শেষ অবধি গোলই সব।

কিন্তু মজার একটা কথা আছে। এই ‘গোল’ কিন্তু বেশ গোলমেলে। এটা খেলায় জয়-পরাজয়ের মানদণ্ড ঠিক, তাই বলে কিন্তু ভাল বা খারাপ খেলার মাপকাঠি নয়। কেউ বলতে পারবে না, অমুক দল ভাল খেলেছে, তাই বেশি গোল দিয়ে জিতে গেছে। মানে ভাল খেললেই সেই দল বেশি গোল করবে, বা জিতবে- এমন কথা নেই।

আসলে ফুটবলে ভাল খেলা একটি অনুসঙ্গ মাত্র। জয়ের একটা সহায়ক উপাদান; কিন্তু একমাত্র মানদন্ড নয়। এখনে ভালো খেলার চেয়ে যে কোনভাবে বেশি গোল করাই শেষ কথা। মানে একটি দল ৯০ মিনিট কিংবা নক আউট স্টেজে আরও ৩০ মিনিটসহ ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে বেশ ভাল খেললেই জিতে যাবে- এমন নয়।

বেশিরভাগ সময় ভাল খেলেও শেষ পর্যন্ত কোনো দল হেরে যেতে পারে। দেখা যায়, একটি দলের ফুটবলাররা প্রতিপক্ষর চেয়ে খুব ভালো ফুটবল খেললেন। তাদের নৈপুণ্যের দ্যুতিতে মাঠ আলোকিত হলো। দক্ষতা-মুন্সিয়ানা আর কৌশল দর্শক প্রশংসা পেল। মাঠে তাদের নৈপুণ্যই চোখে পড়ল বেশি। বেশি সময় বলের নিয়ন্ত্রণও ছিল তাদের অনুকুলে। সহজ কথায় বেশি আক্রমণ শানিয়ে গোলের সুযোগও সেই দল বেশি পেয়েছে। গোলে শট বা হেডও নিয়েছে বেশি।

কিন্তু কঠিন ও নির্মম সত্য হলো, কেবলমাত্র সেগুলোই জয়ের জন্য যথেষ্ঠ নয়। ওেই কাজগুলো করেছে বলেই যে, ওই দলই শেষ অবধি বিজয়ী হবে, এমন কোন কথা নেই। বরং ফুটবলে এমন অনেক ম্যাচ থাকে, যেখানে ভাল খেলে বেশিরভাগ সময় বল নিজেদের পায়ে রেখে এবং গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করা দল হেরে যায়।

Brazil-1

এই যেমন শুক্রবার রাদে রাশিয়ার কাজান এরেনায় এ কঠিন সত্যের দেখা মিললো। ব্রাজিল-বেলজিয়াম ম্যাচে। এবারের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে যেখানে বল নিয়ন্ত্রণ, গোলের সুযোগ সৃষ্টি, গোলে শট নেয়া- সব কিছুতেই ব্রাজিল এগিয়ে ছিল। হলুদ জার্সিধারিদেরই প্রাধান্য ছিল বেশি। বেশিরভাগ সময় তারাই কর্তৃত্ব করেছে। গোল লক্ষ্য করে শটও নিয়েছে; কিন্তু তারপরও জিততে পারেনি।

জয়ের মালা পরেছে বেলজিকরা। ৯০ মিনিটের প্রবল লড়াইয়ে শেষ অবধি ২-১ গোলে জিতে হাসতে হাসতে বিশ্বককাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলো বেলজিয়াম। আর শুধু গোল নামক ‘সোনার হরিণ’টা কম শিকার করতে পারার চরম মাশুল গুণে ব্রাজিলকে বিদায় নিতে হলো। অতি বড় ব্রাজিল বিরোধীও মানছেন, মাঠে ব্রাজিলের নৈপুণ্যই চোখে পড়েছে বেশি; কিন্তু গোল বেশি করতে না পারাই তাদের ব্যর্থতা। ওই গোল করা ছাড়া, পুরো খেলায় যা যা করে দেখানোর সবই করেছে ব্রাজিলিয়ানরা।

৫৯ ভাগ বলের দখল ছিল তাদের পায়েই। বেলজিয়ামের পোস্ট লক্ষ্য করে ব্রাজিলিয়ানরা নিয়েছে ১৬টি শট। আর বেলজিকরা নিতে পেরেছে মাত্র ৭টি শট। এর মধ্যে আবার ব্রাজিলের ৯টি শটের লক্ষ্য ও নিশানা ঠিক ছিল। মানে ২৪ ফুটের পোস্টে ছিল। আর সেখানে বেলজিকদের শটের নিশানা ঠিক ছিল ৩টি।

ব্রাজিল গোলরক্ষক এলিসন সেভ করেছে মোটে একটি। আর বেলজিক গোলরক্ষক করতোয়া একাই ওই সবগুলো প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন ব্রাজিলের; কিন্তু ম্যাচ শেষে স্কোর লাইন; বেলজিয়াম ২ : ১ ব্রাজিল। এটাই সত্য। এটাই নিয়তি।

তাই আসলে বলা হয়, ফুটবল গোলের খেলা। কখনো কখনো ভাগ্যেরও খেলা। ভাগ্যের খেলা বলা হয় এই কারণে, অনেক সময় অনেক দলের কোন আক্রমণ, শট বা হেড প্রতিপক্ষের সাইড পোস্ট বা ক্রস পিচে লেগে প্রতিহত হয়। আবার কোন সময় একটি দল আত্মঘাতী গোলেও হেরে যায়। পিছিয়ে পড়ে। কালকের ম্যাচেও ঠিক তাই হয়েছে।

Brazil-1

নেইমারের কর্ণার থেকে ব্রাজিল ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভার ফ্লিক সাইড পোস্টে লেগে ফেরত আসে। আর উল্টো দিকে বেলজিয়ারের কর্নার কিক, দুই ব্রাজিলিয়ান হেসুস আর ফার্নান্দিনহো হেড করতে লাফিয়ে ওঠেন। ফার্নান্দিনহোর হেডে বল ক্লিয়ার না হয়ে উল্টো নিজের জালেই জড়িয়ে যায়। ফার্নান্দিনহোর হেড প্রচেষ্টা মাথায় না লেগে কাঁধে লেগে সোজা চলে যায় জালে। আর তাতেই এগিয়ে যায় বেলজিয়াম।

ব্রাজিল শুরুতে নিজেদের গুছিয়ে নিতে সময় নেয়। এটা তাদের খেলার বৈশিষ্ট্য। বেলজিয়াম ঠিক ওই সময়টা তেড়ে-ফুঁড়ে আক্রমণ শানিয়েছে। সে সব আক্রমণ যে খুব সাজানো গোছানো ছিল, তা নয়। সেটা যে একদম নিজেদের হাফ সীমানা থেকে দেয়া নেয়া করে, মাত্র আট-দশটি পাস খেলে তৈরি করা, তাও ছিল না।

বেশিরভাগ কাউন্টার অ্যাটাক এবং সেটা বেশ ভেবে-চিন্তে ও বুদ্ধি খাটিয়ে। ব্রাজিল যখন আক্রমণে গেছে, বা যেতে উদ্যত হয়েছে, তখন সুবিধা জায়গায় বল পেয়ে বেলজিকরা গতি সঞ্চারের চেষ্টা করেছেন। তাদের তিন ফরোয়ার্ড রোমেলু লুকাকু, হ্যাজার্ড আর ডি ব্রুয়েন প্রচন্ড গতির তোড় সামলাতে বেশ কষ্ট হয়েছে ব্রাজিল ডিফেন্ডারদের।

যার ফলে দেখা গেলো ব্রাজিলের ডিফেন্স ভেঙে-চুরে প্রচণ্ড গতি দিয়ে দ্বিতীয় গোলের পটভুমি রচনা করলেন রোমেলু লুকাকু এবং গোল ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে গোল করলেন কেভিন ডি ব্রুয়েন। দ্বিতীয়ার্ধে, পুরোপুরি খেলেছে ব্রাজিল। একের পর এক সুযোগ তৈরি করেছে। বেলজিয়ামকে উঠতেই দেয়নি। চাপ তৈরি করে গেছে একটার পর একটা।

কিন্তু একটির বেশি গোল আদায় করতে পারেনি। নিশ্চিত সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিলের স্ট্রাইকাররা। রোনালদো, রোমারিওদের মত একজন ফিনিশারের অভাব খুব বোধ হয়েছে এই ম্যাচে। না হয়, রেনাতো আগুস্তো কিংবা কৌতিনহোরা এত ভালো সুযোগ পেয়েও মিস করতো না। তবে, অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য বেলজিয়াম গোলরক্ষক কুর্তোয়া। নেইমারদের একের পর এক শট ঠেকিযে তিনিই বেলজিকদের জয়ের ভিত্তিটা রচনা করে দিয়েছেন। সুতরাং, ফুটবল শুধু গোলের খেলাই নয়, ভাগ্যেরও। দিন শেষে ভাগ্য ব্রাজিলের সঙ্গে ছিল না, জিততেও পারলো না হলুদ জার্সিধারীরা।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

আরও পড়ুন