দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মাঠে মেয়েদের স্বপ্নযাত্রা
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। একসময় যেখানে মেয়েদের মাঠে নামা ছিল সামাজিক নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে বন্দী। সেই গাবুরার মেয়েরাই এখন মাঠে নেমে বলে কিক নিচ্ছে, ড্রিবলিং করার চেষ্টা করছে, দল পরিচালনা করছে, আর নিজ জীবনের গল্প লিখছে নতুনভাবে।
এই পরিবর্তনের পেছনে আছে স্পিরিট (SPiRiT) প্রকল্পের উদ্যোগ- সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা ও রূপান্তর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, সহযোগিতায় রয়েছে তের দে হোমস ফাউন্ডেশন এবং অর্থায়নে এসডিসি ও অলিম্পিক রিফিউজি ফাউন্ডেশন। এই প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত খেলাধুলা, নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ ও কমিউনিটি সচেতনতার মাধ্যমে মেয়েরা পেয়েছে আত্মবিশ্বাস, সাহস ও নেতৃত্বের শিক্ষা।
রবিবার (২ নভেম্বর) দিনব্যাপি গাবুরা জিএলএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন পর্যায়ের খেলাধুলা। সকাল থেকেই মাঠে ছিল উৎসবের আমেজ। ছেলে-মেয়ে, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সবাই মিলে উৎসবমুখর এই আয়োজনে অংশ নেন।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক, সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান সামসুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, ‘যে মাঠে খেলতে শেখে, সে জীবনে কখনও হেরে যায় না। স্পিরিট প্রকল্প মেয়েদের ভয়ের দেয়াল ভেঙে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে এটাই আসল বিজয়।’
আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা ক্রিকেট কোচ মুফাদিনুল ইসলাম, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স-এর ম্যানেজার মোঃ শরিফুল ইসলাম, উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মোঃ মিনহাজ শাহরিয়ার এবং গাবুরার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ছেলেদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচের পাশাপাশি মেয়েদের খেলায় ছিল বিশেষ আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস। যারা একসময় মাঠে নামতে ভয় পেত, আজ তারা বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে, গোল দিচ্ছে, দল সাজাচ্ছে, আর গ্যালারিতে বসে বাবা-মায়ের করতালি পাচ্ছে। মাঠের পাশেই অনুষ্ঠিত হয় হাড়িভাঙা, চামচ দৌড়, বালিশ ছোড়াসহ ঐতিহ্যবাহী খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, ‘গাবুরার মেয়েরা প্রমাণ করেছে, ইচ্ছা থাকলে সমাজের কোনো বাধাই দেয়াল হতে পারে না। স্পিরিট শুধু খেলাধুলার সুযোগ দেয়নি, তাদের জীবনের মাঠে দাঁড়াবার শক্তিও দিয়েছে।’
‘এই মেয়েরা এখন কেবল খেলোয়াড় নয় তারা নেতা, সচেতন নাগরিক এবং পরিবর্তনের দূত। স্পিরিট প্রকল্প তাদের শিখিয়েছে দলগত কাজ, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক নেতৃত্বের মূল্য। গাবুরার মাঠের এই গল্প শুধু খেলার নয়, এটি এক নীরব বিপ্লবের গল্প যেখানে মেয়েরা নিজেদের সীমা ভেঙে ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়ছে দৃঢ় হাতে।’
আইএইচএস/